শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:৫৭ অপরাহ্ন

টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন: হারুন

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ১১ বার
আপডেট : রবিবার, ৫ মে, ২০২৪

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমে আসা গরিব-অসহায় মানুষগুলোর শরীরে বিভিন্ন স্থানে পচনের কারণে অপারেশনের প্রয়োজন হলে নিজে ব্লেড দিয়ে তা কেটে ফেলতেন আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার! এতে অসহায় মানুষগুলো অমানবিক কষ্ট পেতেন, আর্তনাদ করতেন। কিন্তু পৈশাচিক আনন্দ পেতেন মিল্টন। রীতিমতো টর্চার সেল চালাছিলেন তিনি। রবিবার (৫ মে) দুপুরে মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন উর রশীদ।
রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে কথা বলেন হারুন। তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের মতো সাইকোপ্যাথ কীভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হয় তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি নির্যাতন করে ও ব্লেড-ছুরির সাহায্যে নিজেই অপারেশন করতেন। টর্চার সেলে মানুষকে পেটাতেন, পিটিয়ে নিস্তেজ করতেন। তাদের তিনি ‘বানর’ বলে অভিহিত করতেন। মিল্টন স্বীকার করেছেন এসব করে তিনি পৈশাচিক আনন্দ পেতেন। আমরা তার টর্চার সেল থেকে আলামত জব্দ করেছি। কথিত অপারেশন থিয়েটার থেকে ব্লেড-ছুরি জব্দ করেছি।
হারুন বলেন, মিল্টন সমাদ্দার ভয়াবহ অপরাধ করেছেন এবং তা একটি-দুটি নয়। তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ ভয়াবহ। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তার অ্যাকাউন্টে এখনও ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আছে। এতগুলো টাকা থাকার পরও তিনি কাউকে চিকিৎসা করাননি। তিনি নিজেই হয়ে গেছেন অপারেশন থিয়েটারের হেড। তার অপারেশন থিয়েটারে থাকতো একটা ছুরি ও কিছু ব্লেড। তিনি এগুলো দিয়েই নিজেই অপারেশন করাতেন। এরকম ভয়াবহ, অমানবিক আচরণ, অসভ্য আচরণ, এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্যই তো লজ্জাজনক। যারা তার সঙ্গে জড়িত, যারা পেট্রোনাইজড করেছে, সহযোগিতা করেছে, ফেসবুকে ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য যারা পেট্রন করেছে, ফাউন্ডেশনের মেম্বার তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
হারুন বলেন, যে ছেলেটা সেই উজিরপুর থেকে বাবা পিটিয়ে ঢাকায় এসে ওষুধের দোকানে চুরি করেছে, এরপর একটা আশ্রম গড়ে তোলে। যেখানে সে অসহায়, গরিব শিশু, বৃদ্ধ, প্যারালাইজড, বাকপ্রতিবন্ধী, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে সংগ্রহ করে আশ্রমে নিত। তাদের দেখিয়ে সে ফেইসবুকে ফলোয়ারের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতো। সেই টাকা আবার সে খরচ করতো না অসহায়দের পেছনে। তার আশ্রমে ৯০০ লোক মারা গেছে বলে মিল্টন নিজেই প্রচার করতেন উল্লেখ করে হারুন বলেন, মানুষগুলো মারা গেছেন। জানাজা হলো না, রাতের অন্ধকারে কবর দেওয়া হলো। আত্মীয়-স্বজনকে জানানো হলো না। মিথ্যেভাবে সিল-স্বাক্ষর দিয়ে নিজেই ডেথ সার্টিফিকেট দিলো। রেকর্ডেও রাখলো না। এসবই আমাদের তদন্তে আসবে।
যেসব শিশু তার আশ্রমে ছিল তাদের খোঁজ পাওয়ার পর দেখা করতে দেওয়া হতো না স্বজনদের, ওই শিশুদের ক্ষেত্রে আসলে কী ঘটেছিল? তাদের বিক্রি করতো? কিছু পেয়েছেন আপনারা? এসব প্রশ্নের উত্তরে হারুন বলেন, একটু ধৈর্য ধরেন, সবই বেরিয়ে আসবে। এরকম আরও মিল্টন সমাদ্দার যদি বাংলাদেশে থেকে থাকে, তথাকথিত মানবতার ফেরিওয়ালা নামে এ ধরনের অপকর্ম করে থাকে, তাদের ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
ডিবি প্রধান বলেন, মিল্টন সমাদ্দার নিজেই বলেছেন, ৯০০ লোকের প্রাণ নিভে গেলো! কীভাবে নিভে গেলো? তিনি তো তাদের হাসপাতালে নেননি, ডেথ সার্টিফিকেটও নেননি, থানা পুলিশকে অবহিত করেননি। আবার ৯০০ লোকের প্রাণ যাওয়ার যে কথা তিনি বলেছেন, সেটা আদৌ সত্য কিনা, নাকি এটা টাকা ইনকামের জন্য একটা কথার কথা, সত্য হলে কী করেছেন, সব তদন্তে নিয়ে আসবো। এই আশ্রমের সঙ্গে আরও যারা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৯০০ লোকের মৃত্যু সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে মিল্টন সমাদ্দার ডিবি পুলিশকে জানিয়েছে, আসলে ৯০০ মানুষ মরেনি। তাহলে কতোজন মারা গেছে? এই প্রশ্নে জবাবে হারুন বলেন, ১৩৫ জন মারা গেছে, ৯০০ জনের দাফন করেছি। সেটারও তিনি রেজিস্টার্ড হিসাব সংগ্রহে রাখেননি। যারা মারা গেলেন তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়নি। এতোগুলো মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে অবশ্যই তাকে জবাব দিতে হবে। তিনি জানান, অটিস্টিক শিশুদের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা লজ্জাজনক। কারণ বঙ্গবন্ধুর নাতনি ও প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম নিয়ে কাজ করে সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অফিসের (ডব্লিউএইচওএসইএআরও) আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আর সেই দেশে অটিজমের নাম ধারণ করে অসহায়, বাকপ্রতিবন্ধী ভারসাম্যহীন মানুষ সংগ্রহ করে ফেসবুকে প্রচার করে ফলোয়ারদের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে আত্মসাৎ করেছেন মিল্টন। অন্যদিকে তিনি সেই টাকা খরচা করেননি। এটা তো লজ্জাজনক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর