রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে আগুন: ৩৬ লাশ শনাক্ত করতে পারছেন না স্বজনরা

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ২৫৮ বার
আপডেট : শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এরমধ্যে ঝালকাঠি জেলা হাসপাতাল মর্গে রয়েছে ৩৬ জনের লাশ। বেশিরভাগ লাশ পুড়ে গেছে। শরীর ও মুখ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় লাশ শনাক্ত করতে পারছেন না স্বজনরা। বাকি পাঁচ জনের লাশ স্বজনরা শনাক্ত করে নিয়ে গেছেন।

শুক্রবার বিকালে হাসপাতাল মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করতে না পেরে ঘটনাস্থল ও বরিশাল হাসপাতালে গেছেন অনেক স্বজন। আহতদের মাঝে কেউ কেউ স্বজনদের খুঁজে পেলেও অনেকে পাননি।

ঝালকাঠি জেলা হাসপাতালে সরেজমিন দেখা গেছে মর্গে স্বজনদের ভিড়, কিন্তু লাশের চেহারা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় শনাক্ত করতে পারছেন না। লাশ শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার কথা জানিয়েছেন ঝালকাঠির সিভিল সার্জন।

হাসপাতালে ভর্তি আহতদের ভাষ্য অনুযায়ী, এমভি অভিযান-১০ যাত্রীবাহী লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের পর ঝালকাঠির নলছিটির সুগন্ধা নদীর দেউরী এলাকায় নোঙর করেন লঞ্চের মাস্টার। এর আগে আগুন থেকে বাঁচতে অনেক যাত্রী লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপ দেন। অনেকে লঞ্চের আগুন দেখে ছুটে এলেও কাছে যেতে পারছিলেন না। এ জন্য হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দা ও নদীতে থাকা ছোট ছোট ট্রলার এবং নৌকায় করে কিছু যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর সঙ্গে থাকা স্বজনদের খুঁজতে থাকেন আহতরা।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বরিশাল ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড ও পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন। বাদ যায়নি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে শুরু করে স্থানীয়রাও। ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকে আহতদের উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। কেউ কেউ মোবাইল ফোন দিয়ে স্বজনদের খবর জানাতে সহায়তা করেছেন। যে যেভাবে পেরেছেন সহায়তা করেছেন।

সকালে উদ্ধার অভিযান শুরুর পর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত লঞ্চের ভেতর এবং নদী থেকে ৪০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান আরও একজন। এরমধ্যে পাঁচ জনের লাশ শনাক্ত করে নিয়ে গেছেন স্বজনরা। তবে ৩৬ জনের লাশ ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল মর্গে ও বাইরে রাখা হয়েছে। সেখানে স্বজনরা ভিড় করছেন। বেশিরভাগ লাশ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় চিনতে পারছেন না কেউ। বারবার লাশগুলো দেখে শনাক্তের চেষ্টা করছেন স্বজনরা। মৃতদের বিভিন্ন জিনিসপত্র থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয় ভালোভাবে দেখেও লাশ শনাক্তে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। সেখানে স্বজনের লাশ না শনাক্ত করতে না পেরে তারা ছুটছেন শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও অনেকে স্বজনদের খুঁজে পাননি।

এ ব্যাপারে ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী বলেন, ঝালকাঠি হাসপাতালে ৩৬ জনের লাশ রয়েছে। লাশ শনাক্তে স্বজনরা আসছেন। কিন্তু চেহারা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় শনাক্ত করতে পারছেন না। যাদের স্বজন নিখোঁজ আছে, ডিএনএ পরীক্ষা করে লাশ শনাক্ত করা হবে। সে বিষয়টি আমরা মাথায় রেখেছি। লাশ শনাক্তে স্বজনদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে নলছিটির সুগন্ধা নদীর পোনাবালীয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ইঞ্জিন রুম থেকে আগুন লাগে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭০ জন। ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ১৬ জনকে। আহত হয়েছেন শতাধিক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর