শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৮:০৯ অপরাহ্ন

জামিন খারিজ পার্থ-অপিতার, ফের ১৪ দিন জেল হেফাজতে

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৫২ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২

শিক্ষা দফতরের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পশ্চিমবঙ্গের বরখাস্ত মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠালো কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালত। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জেলেই থাকতে হবে তাদের।

বৃহস্পতিবার আদালতে পার্থর আইনজীবী টেকনিক্যাল কারণ দেখিয়ে পার্থর জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। তাকে ফের জেলেই পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন বিচারক। জেল হেফাজতে থাকাকালীন ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা পার্থ ও অর্পিতা দু’জনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন।

গত ২২ জুলাই গ্রেফতার হওয়ার পর, সব মিলিয়ে ১৪ দিন ইডির হেফাজতে ছিলেন পার্থ। তারপর পার্থ-অর্পিতাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ফের তাদের আদালতে পেশ করা হয়।

পার্থর আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এই ১৪ দিনে মাত্র একদিন জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ইডির তদন্তকারীরা। পার্থ যদি এই মামলায় এত গুরুত্বপূর্ণ হন, তাহলে তাকে এতদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো না কেন?  রাজ্যের সাবেক এই মন্ত্রী অসুস্থ। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা রয়েছে ৮.৪। যা থাকার কথা ১৩। বেড়েছে ক্রিয়েটিনিন। একা চলাফেলার ক্ষেত্রেও তার অসুবিধা রয়েছে। যদিও এই অসুস্থতার তত্ত্ব খারিজ করে পাল্টা সওয়াল করে ইডি। তারা দাবি করেন, ভুবনেশ্বরের এইমসে পার্থর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। দু’দিন অন্তর জোকা ইএসআই-তে তার স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয়েছে। গুরুতর কিছু পাওয়া যায়নি। তাছাড়া এই বয়সে হিমোগ্লোবিন কমা বা ক্রিয়েটিনিন বাড়া স্বাভাবিক।

এরপরই ইডি জানায়, পার্থর বিরুদ্ধে আরও বহু নতুন নতুন অভিযোগ উঠে আসছে। সেসব নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। এদিন পার্থর আইনজীবী জামিনের আবেদন করলেও, অর্পিতার আইনজীবীরা জামিনের আবেদনই করেননি। তারা জেল হেফাজতেরই আবেদন করেন।

অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নামে যে বিমা ছিল, তার অর্থ পরিশোধের বার্তা আসত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মোবাইলে। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে এমন তথ্য তুলে ধরেছেন ইডির আইনজীবীরা। মোবাইলের তথ্য খতিয়ে দেখতেই বিষয়টি উঠে এসেছে বলে দাবি ইডির। আইনজীবীদের দাবি, প্রথম থেকে পার্থ-অর্পিতার সম্পর্কের প্রমাণ মিলেছিল। একাধিক তথ্য থেকে তাদের সম্পর্কের গভীরতাও স্পষ্ট হয়ে গেছে। মিলেছে প্রচুর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ভুয়া সংস্থা, ফার্ম হাউসের হদিশও। যেখানে কালো অর্থ সাদা হয়েছে বলে দাবি ইডির আইনজীবীদের।

গত কয়েকদিনের তদন্তে উঠে এসেছে একাধিক নতুন তথ্য। আগেই পার্থ-অর্পিতার নামে ৫০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিশ পাওয়া গেছে। এবার নতুন করে আরও ১০টি অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে। সব মিলিয়ে ৬০টি অ্যাকাউন্টের খোঁজ মিলেছে। ইডির তদন্তে উঠে এসেছে ৩০টি ভুয়া সংস্থার নাম। যার মাধ্যমে অর্থ লেনদেন হত বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। এখানে বহু কালো অর্থ সাদা করা হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনায় একটি ফার্ম হাউসেরও হদিশ পাওয়া গিয়েছে। পিকনিক স্পট হিসেবে ব্যবহার হত সেটি। সেখানেও বিপুল অর্থ লগ্নি করা হয়েছে বলে দাবি ইডির আইনজীবীদের। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াত স্ত্রী বাবলি চ্যাটার্জি’র নামে একটি ট্রাস্ট রয়েছে। রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক স্কুল। সেই স্কুলের ট্রাস্টে রয়েছেন পার্থ ঘনিষ্ঠরা। এই ট্রাস্টের মাধ্যমেও প্রচুর অর্থ বিভিন্ন খাতে লেনদেন হয়েছে বলে দাবি ইডির আইনজীবীদের। তারা এদিন আরও বলেন, এ বিষয় পার্থ চট্টোপাধ্যায় কিছু জানতেন না, একথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ডে আরও তথ্য জানতে পার্থকে আরও জেরা করতে চায় ইডি।

আদালতে পেশের আগের দিন কেন জেলে গিয়ে রাজ্যের সাবেক মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন পার্থর আইনজীবীরা। আর তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন ইডির আইনজীবীরা। তারা জানিয়েছেন, বয়ান রেকর্ড করার পর সেই কাগজ নিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় কাটাকুটি করে দেন। সবদিক বিবেচনা করে আদালত পার্থ ও অর্পিতাকে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠান বিচারক। যার অর্থ আগামী ১৪ দিন প্রেসিডেন্সিতে জেলেই থাকবেন তারা। আগামী ৩১ আগস্ট তাদের ফের আদালতে পেশ করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর