মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৬:০২ পূর্বাহ্ন

জলবায়ুর ঝুঁকিতে চরাঞ্চলের দেড়কোটি মানুষ

মো. আশরাফ আলী, গাইবান্ধা থেকে ফিরে / ৩৪ বার
আপডেট : শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩

জলবায়ু অভিঘাত বা ক্ষয়ক্ষতিতে দেশের চরাঞ্চলের দেড় কোটিরও বেশি মানুষ মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছেন জলবায়ু, পরিবেশ ও পানি বিজ্ঞানী ড. আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের সুরক্ষা নীতি বা মহাপরিকল্পনা এখনই চূড়ান্ত করা জরুরি। না হলে এর দায় উন্নত বিশ্বের দেশগুলোকেও নিতে হবে।

চরাণচলের জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে গাইবান্ধার গণ উন্নয়ন কেন্দ্র ও সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্চ জার্নালিস্ট ফোরাম যৌথ আয়েজিত এক গণশুনানি শেষে গত বুধবার গাইবান্ধায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সাউথ এশীয়ান ক্লাইমেট চেঞ্চ জার্নালিস্ট ফোরামের নির্বাহী সভাপতি কেরামত উল্লাহ বিপ্লবের সঞ্চলনায় গণউন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম আবদুস সালাম, ফোরামের সভাপতি ভারতের আশীষ গুপ্ত ও মহাসচিব আসাদুজ্জামান সম্রাট অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এ গণশুনানিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলাসহ গাইবান্ধার ১৬৫ চর-দ্বীপচরে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।

সংবাদ সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং বাংলাদেশসহ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বিভিন্ন উদ্যোগে অর্থায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়ে পরিবেশবিদরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নদীভাঙনসহ চলমান বিপর্যয়ের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করেন। পরিবেশবিদরা বলছেন, শিল্পায়নের নামে উন্নত দেশগুলো যেহারে কার্বন নিঃসরণ করছে তার বিরূপ প্রভাব পরিবেশের ওপর পড়ছে এবং ভুক্তভোগী হচ্ছে বাংলাদেশসহ অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলো। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য যে আর্থিক অনুদানের প্রতিশ্রুতি উন্নত দেশগুলো দিয়েছে তা পূরণে তারা কার্যকরী ভূমিকা রাখছে না। দায়ী দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ দেয়ার আহ্বান জানান তারা।

পানি ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বিভিন্ন উদ্যোগে অর্থায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য সকল দেশের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, `আমরা আমাদের সময়ের সবথেকে গুরুতর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে রয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমাবর্ধমানভাবে আমাদের সভ্যতার ক্ষতিসাধন করছে। এটি বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অস্তিত্বের হুমকি।

এরআগে গত মঙ্গলবার গাইবান্ধা সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের চরগ্রাম কুন্দেরপাড়ায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিয়ে `জলবায়ু গণশুনানি` অনুষ্ঠিত হয়। এ গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি এমপি, গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান, পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ১২জন নারী-পুরুষকে ‘জলবায়ু যোদ্ধা’ পদক প্রদান করা হয়।

ওইদিন বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলগুলোসহ নদ-নদী অববাহিকায় চর-দ্বীপচরের মানুষ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত তিন দশকে সামুদ্রিক ঘুর্নিঝড়, জলোচ্ছাস ও নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত এসব জনপদের মানুষ। সেখানে বলা হয়, গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে একদিকে যেমন- সমুদ্র পৃষ্টের তলদেশ উঁচু হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে নদ-নদীর নাব্যতা হারিয়ে গতিপথে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারনে সমুদ্রের পানি উপকূলীয় এলাকায় উপচে পড়ছে। বছর বছর বন্যা, নদী ভাঙ্গনসহ ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে লাখ লাখ মানুষ সহায় সম্বল হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর