রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:০৩ পূর্বাহ্ন

চেক ডিজঅনারের মামলায় কোনও ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো যাবে না: হাইকোর্ট

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ১৪৯ বার
আপডেট : রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২২

চেক ডিজঅনারের মামলায় কোনও ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি বলে রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে ও ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না। এ সংক্রান্ত বেশ কিছু মামলা নিষ্পত্তি করে রবিবার (২৮ আগস্ট) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালত তার রায়ে নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮ ধারা সংশোধন করে চেক ডিজঅনারের মামলায় জেলে পাঠানোর বিধান বাতিল করার জন্য জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দিয়েছেন। একইসঙ্গে নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮ ধারা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত চেক ডিজঅনারের মামলা নিষ্পত্তির জন্য একটি গাইড লাইন করে দিয়েছেন আদালত।

রায়ে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তিকে তার ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা সংবিধান পরিপন্থি। নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের অধীনে চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত মামলায় কোনও ব্যক্তিকে কারাগারে বন্দি রাখা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণের নামান্তর। চেক ডিজঅনার মামলায় কোনও ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানো বা কারাগারে রাখা সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি এবং ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস (ওএইচসিএইচআর)-এর ১১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। বাংলাদেশ ওএইচসিএইচআর-এর স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে চেক ডিজঅনার মামলায় কোনও ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠাতে পারে না।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে আদালত বলেন, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে চেক ডিজঅনার মামলায় জেলে পাঠানোর বিধান নেই। এসব দেশে চেক ডিজঅনারের মামলাগুলো দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৯৯৪ সালে পেনাল কোড সংযোজনের মাধ্যমে আধা-ফৌজদারি হিসেবে পরিণত করা হয়েছে। কন্ট্রাকচ্যুয়াল অব নেগোসিয়েশন বা চুক্তিগত দায়-দায়িত্ব পূরণের ব্যর্থতার জন্য কোনও ব্যক্তিকে কারাগারে বন্দি রাখা যাবে না। চুক্তিগত দায়-দায়িত্ব পূরণে ব্যর্থতার জন্য যদি কারাগারে পাঠানো হয়, তাহলে অচিরেই বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ কারাগারে চলে যাবে। এটা কারও কাম্য নয়।

নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮ ধারা দ্রুত সংশোধন করে কারাগারে পাঠানোর বিধান বাতিল করা আবশ্যক। আদালত প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, জাতীয় সংসদ অতি দ্রুত নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮ ধারা সংশোধন করবে বলে আমাদের (হাইকোর্ট) প্রত্যাশা। মহান জাতীয় সংসদ যতদিন না ১৩৮ ধারার সংশোধন করেন বা সংশোধনী আনা হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮ ধারার আওতায় চেক ডিজঅনারের মামলা আপসযোগ্য হবে। চেক ডিজঅনারের মামলা বিচারের এখতিয়ারসম্পন্ন দেশের সব আদালতে সাজার পরিবর্তে তিনগুণ পর্যন্ত জরিমানা দিতে পারবে। আদালত তার এই রায়ের অনুলিপি দেশের সব আদালতে এবং আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোরও নির্দেশনা দিয়েছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর