রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন

চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা; তাদের দিকটা সবাইকে দেখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৫৪ বার
আপডেট : শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২

চা শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করেন, তাদের দিকটা সবাইকে দেখতে হবে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শ্রমিকদের পরিশ্রমের কারণে মালিকরা উপার্জন করেন। তাই তাদের ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব সকলের। শনিবার (২৭ আগস্ট) গণভবনে চা বাগান মালিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে সিলেট বিভাগের ১৩টি চা বাগান মালিক উপস্থিত ছিলেন।27-08-22-PM-2

বৈঠকে সিলেট বিভাগের ১৩টি চা বাগান মালিক উপস্থিত ছিলেন

চা বাগান শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখান থেকে আপনারা মালিকরাও উপার্জন করেন। তাই তাদের ভালো-মন্দ দেখা সকলের দায়িত্ব। করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য— সবাই ক্ষতিগ্রস্ত, এতে কোনও সন্দেহ নাই। কিন্তু এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোর দিকে তো আমাদের একটু দেখতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, চা শিল্প আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা সময় আমাদের দেশের বড় অর্থকরী ফসল ছিল, যেটা রফতানি করে আমরা অর্থ উপার্জন করতাম। দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো হওয়ায় চায়ের চাহিদা দেশেও অনেক বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমরা উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছি। নতুন নতুন চা বাগানও করেছি। পঞ্চগড়ে চা বাগান ছিল না। আমি উদ্যোগ নিয়েছিলাম, সেই চা বাগানটা আস্তে আস্তে পঞ্চগড় থেকে এখন ঠাকুরগাঁও পর্যন্ত এসে গেছে। লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের দিকেও কেউ কেউ ছোট ছোট করে বাগান করছে। আগে শুধু চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগেই চা বাগান ‍ছিল।

চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে দায়িত্ব নিয়েছিলেন জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এই শ্রমিকদের কিন্তু নাগরিকত্ব ছিল না। ব্রিটিশরা বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের আনে। মোটামুটি দাসত্বগিরিই করতে হতো তাদের। তিনি (বঙ্গবন্ধু) যখন চেয়ারম্যান হলেন, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হলো। কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছিলো। সেই সূত্রে তাদের সঙ্গে আমার একটা যোগাযোগ ছিল— তারা এই কথাটা সব সময় মনে রাখে। ১৯৯৬ সালে আমার কাছে যে প্রস্তাব এসেছিল— তার অনেকগুলো কাজ আমি করে দিয়েছিলাম।

 

চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। শনিবার (২৭ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা শিল্প মালিকদের বৈঠকে এই মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৩ জন চা শিল্প মালিকের দীর্ঘ বৈঠক হয়।

বৈঠক শেষে গণভবনের গেটে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস গণমাধ্যমকে বলেন, চা শ্রমিকদের আশা প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের পক্ষ হয়ে মালিকদের সঙ্গে কথা বলে মজুরি বাড়াবেন। সেটাই তিনি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল (রবিবার) থেকে সবাইকে কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি শিগগিরই চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা করবেন।

কায়কাউস বলেন, শ্রমিকদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী ১৭০ টাকা দৈনিক মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এখানে ব্যাখ্যা করা দরকার, চা শিল্পে বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হয়, যেটা মালিকরা বহন করে। সেক্ষেত্রে যেটা আনুপাতিক হারে বেড়ে যাবে, যেমন নগদ মজুরি ১৭০ টাকার প্লাকিং বোনাস আনুপাতিক হারে বাড়বে। বার্ষিক ছুটি, বেতনসহ উৎসব ছুটি আনুপাতিক হারে বাড়বে। এগুলো সবগুলোতে টাকা দেওয়া হয়।

তিনি জানান, অসুস্থতাজনিত ছুটি সেটাও বাড়বে আনুপাতিক হারে। ভবিষ্যৎ তহবিলে নিয়োগকর্তার চাঁদা, কাজে অনুপস্থিতি অনুযায়ী বার্ষিক উৎসব ভাতা সেটাও আনুপাতিক হারে বাড়বে।  ভর্তুকি মূল্যে রেশন দেয়, যেটা ২৮ টাকা দিয়ে কিনে দুই টাকায় দেওয়া হয় শ্রমিকদের। এছাড়া চিকিৎসা সুবিধা, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের পেনশন, চা শ্রমিক পোষ্যদের শিক্ষা বাবদ ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণ, গরু চরানো চকিদার ব্যয় এবং বিনামূল্যে বসতবাড়ি ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ শ্রমিক কল্যাণ কর্মসূচি, বাসাবাড়িতে উৎপাদন প্রবৃত্তি বাবদ আয়। সবকিছু মিলিয়ে যেটা পড়ে, সেটার হিসাব তাৎক্ষণিক করতে পারেনি। তবে দেখা যাচ্ছে সেটা হয়তো সাড়ে চারশ থেকে ৫০০ টাকা দৈনিক পড়বে।

উল্লেখ্য, দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন চা শ্রমিকরা। পরে ১৩ আগস্ট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেন তারা। পরে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে ২৩ আগস্ট চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও তা মানছেন না সাধারণ শ্রমিকরা।

 মেনে নিয়েছেন সাধারণ চা শ্রমিকরা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা শিল্প মালিকদের বৈঠকে চা শ্রমিকদের জন্য দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন সাধারণ চা শ্রমিকরা। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, যেভাবে চেয়েছিলাম তা পেয়েছি। শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন। শনিবার (২৭ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা শিল্প মালিকদের বৈঠকে এই মজুরি নির্ধারণ করা হয়। চা বাগান মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদের (বিটিএ) চেয়ারম্যান শাহ আলমের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন

ফাইল ছবি

বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর নৃপেন পাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, পুরো শ্রমিক জাতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। তিনি মজুরি ঘোষণা করেছেন, শ্রমিকরা মেনে নিয়েছে। আমরা কাজে ফিরে যাবো। তিনি মানসম্মত মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তার প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু লোক সাধারণ শ্রমিকদের উসকে দিয়ে আন্দোলন করতে চায়। তারা কখনও চা শ্রমিকের মঙ্গল চায় না।

কালিঘাট চা পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি অভান তাঁতি বলেন, আমরা মানসম্মত মজুরি পেয়েছি। আমরা কালিঘাট নাট মন্দিরে সাধারণ শ্রমিকরা জড়ো হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিকে তাকিয়ে ছিল শ্রমিকরা। ঘোষণা দেওয়ার পর এখন সবাই খুশি। আমাদের মধ্যে বিভক্তি নেই।’

প্রসঙ্গত ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরির দাবিতে চলতি মাসের ৯ আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি ও ১৩ আগস্ট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করে আসছিলেন চা শ্রমিকরা। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও সেটা মানছেন না অনেকে। আন্দোলন সফল করতে সড়ক, মহাসড়ক, রেলপথ অবরোধ করতে দেখা গেছে তাদের। দাবি আদায়ে গত কয়েক দিন ধরে বেশ উত্তাল ছিল চা বাগানগুলো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর