রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:০১ পূর্বাহ্ন

চাকরি নয়, ঘাতকদের সাজা কার্যকর চান রেজিয়ার স্বজনরা

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ১৬৬ বার
আপডেট : রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২

শারীরিক অসুস্থতার কারণে চলাফেরা করতে পারতেন না আফাজ উদ্দিন। বেশ কয়েক বছর ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন। তার দেখভাল করতেন মেয়ে রেজিয়া বেগম। বাবার চিকিৎসা খরচ জোগাতে ও জীবিকার তাগিদে ঢাকায় চলে আসেন। বলতেন, যত কষ্টই হোক বাবাকে যদি আরও কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখা যায়। কিন্তু রেজিয়া নিজেই বাঁচতে পারেননি।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহতদের একজন রেজিয়া বেগম। এ ঘটনার পর আরও পাঁচ বছর বেঁচে ছিলেন আফাজ উদ্দিন। মৃত্যুর আগে ঘাতকদের শাস্তি দেখে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই চাওয়া পূরণ হয়নি। রেজিয়া বেগমের ক্ষুব্ধ স্বজনদের প্রশ্ন, ‘২১ আগস্টের ঘাতকদের সাজা কার্যকরের খবর শুনতে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?’

তারা জানান, ১৯৯০ সালে কাজের সন্ধানে ঢাকায় পাড়ি জমান রেজিয়া। বাড্ডা এলাকায় ভারতীয় ভিসা অফিসে কাজ করতেন। থাকতেন একই এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। সেখানে মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী আয়শা মোকারমের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর রেজিনাও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন সমাবেশে মিছিলে সক্রিয় ছিলেন। ২১ আগস্ট সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশ্যে আয়শা মোকাররমের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিলে ছিলেন রেজিয়া বেগম।

অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য শেষ করার পর পরই শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণে মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ১৬ জন। পরে সবমিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ২৪ জনে দাঁড়ায়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার গঙ্গানারায়ণ গ্রামের আফাজ উদ্দিনের মেয়ে রেজিয়া। পরদিন তার ছোট ছেলে নুরনবী লাশ শনাক্ত করেন। পরে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

একই বছরে নিহতের পরিবারের জন্য এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দেয় আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তাদের আট লাখ টাকা দেওয়া হয়। স্বজনদের দাবি, তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, রেজিয়ার সন্তান বা তার স্বজনদের সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা দীর্ঘ আট বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। তারপরও তাদের চাওয়া, শুধু মায়ের হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করা।

রেজিয়ার বড় বোন আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘প্রতি বছর ২১ আগস্টের ঘটনাগুলো টেলিভিশনে দেখি আর কাদি। চোখের পানি ফেলা ছাড়া আমাদের কী করার আছে?’ বড় ছেলে হারুন-অর- রশিদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের কয়েকজনের বিচার হয়েছে। আমার বিশ্বাস, মায়ের হত্যার বিচারও আমরা পাবো। ছোট ছেলে নুরনবী বলেন, সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আমরা কেউ পাইনি। তারপরও আমার পুরো পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের এই সরকারের আমলেই রায় কার্যকর চাই।

বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী বলেন, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে রেজিয়ার পরিবার যাতে সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা পায়, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। সাধ্যমতো তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছি।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের অক্টোবরে এ ঘটনায় করা মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এই মামলা এখন দ্বিতীয় ধাপে হাইকোর্টে শুনানি শুরুর পর্যায়ে রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর