রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন

গোপালগঞ্জে ভ্যাকসিন কারখানা স্থাপনের কাজ চলছে পূর্ণোদ্যমে

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ১৫৫ বার
আপডেট : রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

গোপালগঞ্জে ভ্যাকসিন তৈরির কারখানা স্থাপনের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। পুর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিন ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট ও ইনস্টিটিটিউট স্থাপনে জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫ কর্মকর্তা দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ভ্যাকসিন তৈরির ওপর প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছেন। দক্ষ জনবল তৈরির জন্য পর্যায়ক্রমে অন্যরাও বিদেশে প্রশিক্ষণে যাবেন। দেশের ইতিহাসে সম্পূর্ণ নতুন এই ভ্যাকসিন তৈরি প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নে আগ্রহী ৬টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এরইমধ্যে আবেদন করেছে। শিগগিরই যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বছরের মধ্যে প্রকল্প পাস হলে ২০২৩ সালের শুরুতে ভ্যাকসিন তৈরির কারখানা স্থাপনের কাজ পুরোদমে শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটের কারণে সারা বিশ্বে নতুন এই রোগের ভ্যাকসিন দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠায় সংসদীয় কমিটি গত বছর বাংলাদেশে ভ্যাকসিন তৈরির সুপারিশ করে। প্রথমে বিদেশ থেকে করোনার ভ্যাকসিন এনে তা বাংলাদেশে বোতল ও মোড়কজাতকরণের চিন্তা করা হলেও পূর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিন ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট ও ইনস্টিটিটিউট স্থাপনে একটি পরিপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করে কমিটি। এক্ষেত্রে কেবল করোনা নয়, সব ধরনের রোগের প্রতিশোধক টিকা উৎপাদন উপযোগী কারখানা স্থাপনের সুপারিশ করে। কমিটি প্রাথমিকভাবে গোপালগঞ্জে অবস্থিত এসেনশিয়াল ড্রাগসের ইউনিটের সঙ্গে এটি স্থাপনের সুপারিশ করে। সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পর সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-এর কাছে প্রস্তাব দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এডিবির উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি বিষয়টি সমীক্ষার জন্য গোপালগঞ্জ পরিদর্শন করে আগ্রহ প্রকাশ করে। তারা ইতোমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ফান্ড প্রদানে সম্মতি দিয়েছে। এডিবির অর্থায়নে এনেসশিয়াল ড্রাগসের ৫ কর্মকর্তাকে ভ্যাকসিন তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণে দক্ষিণ কোরিয়া পাঠানো হয়েছে। এডিবি প্রতিনিধি ২৪ সেপ্টেম্বর আবারও প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে যাবেন।

এর আগে এসেনসিয়াল ড্রাগস (ইডিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে বৃহৎ আকারের একটি ডিপিপি প্রণয়নের পরামর্শ দেওয়া হয়। গোপালগঞ্জে ইডিসিএলের তৃতীয় প্রকল্পের পাশে প্রায় ৬ দশমিক ৮৫ একর জমিতে ভ্যাকসিন উৎপাদনে অর্থায়নের বিষয়ে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার মধ্যে একটি ডিডিপিপি পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে দুই হাজার ৫৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন এডিবি হতে পেতে প্রাক-উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপিপি) গত জানুয়ারিতে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ তার মতামত প্রদান করেছে।

নোভেল প্রোটেইন সাব-ইউনিট ভ্যাকসিন উৎপাদনের লক্ষ্যে মার্কিন কোম্পানি ডায়াডিক ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর, অর্থ বিভাগ, ইআরডি, আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত এসেছে। এসব মতামত সমন্বয় করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

এদিকে ভ্যাকসিন তৈরি ও গবেষণা প্ল্যান প্রতিষ্ঠার জন্য গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করেছে। আইন অনুযায়ী, স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ও ক্ষতিপূরণের জন্য জমির মূল্য নির্ধারণের কাজ চলমান রয়েছে।

রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে রবিবারের বৈঠকে কমিটির সদস্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, মুহিবুর রহমান মানিক ও মো. আমিরুল আলম মিলন অংশগ্রহণ করেন।

পরে সংসদীয় কমিটি ভ্যাকসিন তৈরি এবং গবেষণা প্ল্যান্ট দ্রুত বাস্তবায়ন করার সুপারিশ করে। এছাড়া কমিটি ভ্যাকসিন তৈরি সম্পর্কিত আইন প্রণয়ন কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের সুপারিশ করে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদীয় কমিটির সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ভ্যাকসিন প্ল্যান স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। আমরা আশা করছি, সব কাজ শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে একনেকে প্রকল্পটি পাস হবে। এরপর জানুয়ারিতে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, এখানে কেবল কোভিড নয়, এখানে যাতে সব ধরনের ভ্যাকসিন তৈরি করা যায়, সেই ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এডিবি এতে ফান্ডিং করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা এ মাসের ২৪ তারিখে ফাইনালি সেখানে ভিজিটে যাবে। এটা বাস্তবায়ন হলে ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের ৫ জন কর্মকর্তা বিদেশ থেকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। যেহেতু এটা আমাদের জন্য নতুন, কাজেই বিদেশে আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে। দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে পর্যায়ক্রমে আরও কর্মকর্তারা বিদেশে যাবেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর