বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বাধীনভাবে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাচেলেত। তিনি বলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রক্ষার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘ যে কার্যক্রম রয়েছে সেটি আরও জোরদার হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, সংলাপের সুযোগ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
চারদিনের সফর শেষে বুধবার (১৭ আগস্ট) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। এই সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ট্রেড ইউনিয়ন ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
মিশেল বলেন, অর্থনৈতিক, জলবায়ু পরিবর্তন, রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক; এসব নিয়ে সামনের দিনগুলোতে মানবাধিকার বিষয়ক চ্যালেঞ্জ থাকলেও সবাই একযোগে কাজ করলে তা মোকাবিলা করা সম্ভব। বাংলাদেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে এবং ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে। একইসঙ্গে দেশটি মানবাধিকার বিষয়ক অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এ বিষয়ে আমার সঙ্গে সরকার ও সুশীল সমাজের কথা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা জোরদার করা এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করবে। সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্র বাড়ানো, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশ করার অধিকার এবং বিরোধী নেতাকর্মীদের রক্ষা করা নির্বাচনকালীন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন অতিরিক্ত বল প্রয়োগ না করে বিরোধী দলের সমাবেশে। এরকম সময়ে জাতীয় সংলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করেন তিনি। আমি এমন এক সময় সফর করছি যখন কোভিড সংকট শেষ হয়নি, রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে।
মিশেল বলেন, গুম, আইনবহির্ভুত হত্যা ও অত্যাচারের অভিযোগ গত কয়েক বছর ধরে শোনা যাচ্ছে এবং এগুলোর অনেকগুলোই র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব) করেছে বলে অভিযোগ আছে। আমি মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি এবং স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্তের কথা জানিয়েছে। গুমের বিষয়ে ঢিলেঢালা তদন্তের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে একটি স্বাধীন বিশেষায়িত মেকানিজম প্রতিষ্ঠা করার। যেখানে সবার সঙ্গে কথা বলে তদন্ত করা হবে। আমার অফিস এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়েও সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার অফিস এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কয়েকটি সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, ‘আমি কক্সবাজার সফর করেছি। সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, তারা ফেরত যেতে চায়, যদি সেখানকার পরিস্থিতি ভালো থাকো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানকার পরিস্থিতি এখনও সহায়ক হয়নি। যদি এখন ফেরত পাঠানো হয় তবে তারা আবার ফেরত আসবে বলেও তিনি জানান।