রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:২৪ পূর্বাহ্ন

খুনির আশ্রয়দাতা আমেরিকা গণতন্ত্রের সবক দেয়: প্রধানমন্ত্রী

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ২৪৬ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১

বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ‘আশ্রয়-প্রশ্রয়’ দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের গণতন্ত্র-মানবাধিকার নিয়ে সমালোচনা করার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আক্ষেপ করে বলেছেন, তাদের কাছ থেকে আমাদের গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, আইনের শাসনের সবক শুনতে হয়। তিনি বলেন, অন্য সরকারগুলোর মতো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বিচার বিভাগে কখনও হস্তক্ষেপ করেনি। বিচার বিভাগের অধিকার-উন্নয়নের জন্য বা দেশের মানুষের জন্য কী করেছি সেটা আর আমি এত বেশি বলতে চাই না। তবে আমি এটুকু বলবো, যেহেতু আমার বাবা চাইতেন স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, আমরা সরকারে এসে সেই স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি।

বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও কানাডা-আমেরিকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত না দেওয়া এবং সাম্প্রতিক বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রেক্ষাপটে আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের কাছ থেকে আমাদের আইনের শাসনের সবকও শুনতে হয়, গণতন্ত্রের কথাও শুনতে হয়, ন্যায়বিচারের কথাও শুনতে হয়, সেটিই আমার কাছে খুব অবাক লাগে। পালিয়ে থাকা দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিচারের রায় আমরা পেয়েছি, বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। এখনো কয়েকজন পলাতক আছে, তারা পালিয়ে আছে। তাদেরও খোঁজা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় কথা আমেরিকার মতো জায়গায়, যারা সবসময় ন্যায়বিচারের কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে, ভোটাধিকারের কথা বলে, তারা মানবাধিকারের কথা বলে। কিন্তু আমাদের যে মানবধিকার লঙ্ঘন হয়েছিল, আমরা যে ন্যায়বিচার পাইনি, তারপর যখন এই বিচার হলো—সেই খুনিদের আশ্রয় দিয়ে বসে আছে। আমি সরকারে আসার পর থেকে বার বার যতজন রাষ্ট্রপতি এসেছেন প্রত্যেকের কাছে বার বার অনুরোধ করেছি যে, একটা সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আপনারা কীভাবে আশ্রয় দেন, আপনাদের জুডিশিয়ারি কীভাবে আশ্রয় দেয়, কীভাবে আপনারা একটা খুনিকে আশ্রয় দেন?

শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকা গণতন্ত্রের জন্য কথা বলে আর খুনিদের আশ্রয় দেয়, প্রশয় দেয়। কেন? আমি জানি না। তারা নাকি সবথেকে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশ। আমি এতবার প্রত্যেকটা রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দিয়েছি, বার বার তাদের অনুরোধ করেছি, আমরা বার বার চেষ্টা করেছি। যে খুনিটা ১৫ আগস্ট আমার সেজো ফুফুর বাড়ি আক্রমণ করে, সেইখানে যে গ্রুপটা যায় তার কমান্ডিং অফিসার ছিল ওই রাশেদ, সেই খুনি এখনো আমেরিকায়। তাকে (রাশেদ) আজকে পর্যন্ত ফেরত দিল না। তিনি বলেন, কানাডায় নূর, মেজর নূর। সে ছিল ৩২ নম্বরে হত্যাকাণ্ডের জন্য যে কমান্ডিং অফিসার হিসেবে কাজ করেছে এবং ফারুক ছিল ট্যাংকের দায়িত্বে। আর নূর ঢুকেছিল ওখানে, সে ছিল সেখানে কমান্ডিং অফিসার। আর সেই নূরকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে কানাডা। আর খুনি রাশেদ এখনো আমেরিকায়।

১৫ আগস্টের ঘটনাকে কারবালার মর্মান্তিকতার সঙ্গে তুলনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পরিবারের সব সদস্য যখন শাহাদাত বরণ করেন আমি আর রেহানা বিদেশে ছিলাম। বাংলাদেশে কী ঘটেছিল পঁচাত্তরে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র; যার মাধ্যমে শুধু রাষ্ট্রপতিকে হত্যা নয়, একটা পরিবারকে হত্যা। কারবালায়ও বোধহয় শিশু নারীকে এভাবে হত্যা করা হয়নি। কারবালার ঘটনাকেও হার মানিয়েছিল ১৫ আগস্টের ঘটনা। তিনি বলেন, আমরা বাবা-মা, ভাই আমরা দুই বোন সব হারিয়েছি। ১৫ আগস্ট আমরা আমাদের সব হারিয়েছি, এটা যেমন সত্য, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কী হারালো? বাংলাদেশের মানুষ তাদের সব অধিকারই হারিয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনের চক্রান্ত বের হবে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আরেকটা দায়িত্ব রয়ে গেছে যে, এর পেছনের চক্রান্তটা খুঁজে বের করা। এটা একদিন বের হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বিচারকদের আরও বেশি অবদান রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ন্যায়বিচার মানুষের প্রাপ্য। সেটা যেন সবসময় পায় সেটা আমরা চাই। আমরা যারা ১৫ আগস্টে সব হারিয়েছিলাম, আমার মতো বাবা-মা হারিয়ে যেন কাউকে বিচারের জন্য চোখের পানি ফেলতে না হয়। ন্যায়বিচারটা মানুষ পাবে, এটাই আমরা সবসময় চাই। কারণ আমরা ভুক্তভোগী, আমরা জানি বিচার না পাওয়ার কষ্টটা কী। সেটা আপনারা নিশ্চিত করে দেবেন। সেটাই আমরা চাই। আর আমি যতক্ষণ সরকারে আছি, এর জন্য যা যা দরকার আমরা করবো। ’

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিচার বিভাগের অধিকারের জন্য, বিচার বিভাগের উন্নয়নের জন্য বা দেশের মানুষের জন্য কী করেছি, সেটা আর আমি এত বেশি বলতে চাই না। তবে আমি এইটুকু বলবো, যেহেতু আমার বাবা চাইতেন স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, আমরা সরকারে এসে সেই স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি।

অন্য সরকারগুলোর মতো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বিচার বিভাগে কখনো হস্তক্ষেপ করেনি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কখনো বিচার কাজে হস্তক্ষেপ করিনি, এর আগে অনেক ঘটনা আছে আপনারা জানেন। দেখা গেছে ফলস সার্টিফিকেটের ব্যবহার বা ছাত্রদলের কাঁধে হাত রেখে কাকে কী রায় দেওয়া হবে সেটা নিয়ে আলোচনা, এ রকম বহু ন্যক্কারজনক ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটেছে। অন্তত আমি এটুকু বলতে পারি, আমরা সরকারে আসার পর অন্তত এই পর পর তিনবার এখন আমরা ক্ষমতায় বা এর আগে একবার ছিলাম আমরা কিন্তু সেটা করার সুযোগ নেইনি। সবসময় একটা ন্যায়ের পথে যেন সবাই চলতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থা করেছি।

ঝড়-ঝাপটা মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন জানিয়ে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে উন্নতির জন্য কাজ করতে গিয়ে অনেক ঝড় ঝাপ্টা মোকাবিলা করতে হয়েছে। কখনও সেই হেফাজতকে নিয়ে এসে তাদের নিয়ে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা, জ্বালাও-পোড়াও করা, কখনও অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টি করা, নানাভাবে ব্যতিব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর