রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন

কুমিল্লার ঘটনায় এমন শাস্তি দেওয়া হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস না পায় : প্রধানমন্ত্রী

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ১০৬ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। যে ধর্মের হোক না কেন বিচার করা হবে। এমন শাস্তি দেওয়া হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস না পায়।

বৃহস্পতিবার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে ভক্তদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ, মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে , ঘটনায় ব্যাপক তদন্ত চলছে। অনেক তথ্যই আমরা পাচ্ছি এবং অবশ্যই এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটাবে, তাদের আমরা খুঁজে বের করবো। যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রযুক্তির যুগে এটা বের করা যাবে। ঘটনায় জড়িত যেই হোক না কেন, যে ধর্মের হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু মানুষের মধ্যে এই দুষ্ট বুদ্ধিটা আছে। যখন একটা জিনিস সুন্দরভাবে চলছে সেটাকে নষ্ট করা। বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, এই যাত্রাটাকে ব্যাহত করা আর দেশের ভেতরে একটা সমস্যা সৃষ্টি করা, এ ধরনের কিছু লোক আছে। যারা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে না, বিশ্বাস অর্জন করতে পারে না। যাদের রাজনীতি নেই, কোনও আদর্শ নেই, তারাই এ ধরনের কাজ করে। এটা অনেকটাই তাদের এক ধরনের দুর্বলতা। কিন্তু এর বিরুদ্ধে যদি সবাই সচেতন থাকেন, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, হিন্দু ধর্ম কল্যাণ ট্রাস্ট আইন আমরা করে দিয়েছি। এর তহবিলে ১০০ কোটি টাকা আমরা দিয়েছি। আপনাদের অনেকে অর্থ ও সম্পদশালী আছেন। তারা পূজামণ্ডপ করতে গিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করেন। এত টাকা খরচ না করে আপনারা কল্যাণ ট্রাস্টে অনুদান দিতে পারেন। তাহলে ট্রাস্টের ফান্ড বেড়ে যাবে। এতে যার যা প্রয়োজন সেই সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে ঢাকেশ্বরী মন্দির ধ্বংস করা হয়েছিল। আমরা ওই মন্দিরটি পরে তৈরি করে দেই। এই মন্দিরের উন্নয়ন কাজ এখনও চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে এ বছর পূজায় তিন কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেখা যায় দুর্গাপূজার সময় সর্বজনীন পূজামণ্ডপ হয়, আবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক পূজামণ্ডপ হয়। বছর বছর এই পূজামণ্ডপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনারাই বলেছেন, ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপে এবার দুর্গাপূজা হচ্ছে। এটা খুবই ভালো কথা। কিন্তু একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতিটি জায়গায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হয়। এক্ষেত্রে সর্বজনীন পূজামণ্ডপগুলোতে কোনও অসুবিধা হয় না। কিন্তু অস্থায়ী মন্দিরগুলোতে পূজা হলে কিছু লোক সুযোগ পায় সেখানে সমস্যা সৃষ্টি করার। কাজেই এ ক্ষেত্রে আপনাদের পক্ষ থেকে কিছুটা বোধহয় নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। আর এই ব্যবস্থা কিন্তু ভারতে আছে। কলকাতায় আছে। সেখানে সরকারের অনুমোদন ছাড়া নতুন করে পূজামণ্ডপ করতে পারে না। কিন্তু আমাদের এখানে স্বাধীনতা আছে। আপনারা করতে পারেন। কাজেই বলবো—এ ব্যাপারে আপনারাই পদক্ষেপ নেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে একটি নীতিমালা বা নির্দেশনা থাকা দরকার, কতটা পূজামণ্ডপ হবে। এটা সীমিত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে সুবিধা হয়।

পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা দিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বলবো—যার যার এলাকায়, যেখানে পূজা হচ্ছে, প্রত্যেকে যেন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। সকলের সঙ্গে মিলে যেন শান্তিপূর্ণভাবে পূজা হয়, সেই ব্যবস্থা করবে। সেটা নিশ্চয়ই তারা করবেন এবং করে থাকেন। গতবার করোনার কারণে পূজা সীমিত হয়েছিল। এবার একটু উৎসাহ পেয়ে বেশি বেড়ে গেছে। এবার এক হাজার ৯০৫টি অতিরিক্ত পূজামণ্ডপ তৈরি হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের পরে বিএনপি ধর্মের নামে বিভেদ ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছিল । সারা বিশ্বে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস বৃদ্ধি পাওয়ায় তার একটি প্রভাব এসে পড়েছে। এ জন্য কেবল আমাদের নিজেদের দেশই নয়, প্রতিবেশী দেশকেও এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। সচেতন থাকতে হবে। প্রতিবেশী ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতা করেছে। তাদের কথা আমরা সব সময় কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। কাজেই সেখানে এমন কিছু যেন না করা হয়, তার প্রভাব আমার দেশে এসে পড়ে। আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত আসে। এজন্য তাদেরও একটু সচেতন থাকতে হবে। আমি চাই, আমাদের দেশে মানুষ সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবে। সব ধর্মের মানুষ তার ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা কখনোই নিজেদের সংখ্যালঘু ভাববেন না। আমরা আপনাদের সংখ্যালঘু নয়, নিজেদের আপনজন হিসেবে মানি। এই দেশের নাগরিক হিসেবে মানি। সমঅধিকারে এই দেশে বসবাস করেন। আপনারা সমঅধিকার ভোগ করবেন। সমঅধিকার নিয়ে আপনাদের ধর্ম পালন করবেন। উৎসব করবেন। সেটাই আমরা চাই। এটাই হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশের আসল নীতি ও আদর্শ। তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম কিন্তু বিভেদের কথা বলে না। ইসলাম ধর্মে সব ধর্মের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। আমাদের নবী করিম (সা.) সেটাই বিশ্বাস করতেন। কিন্তু আমাদের কিছু লোক ধর্মান্ধতায় ভোগে এবং সব সময় তারা একটি সাম্প্রদায়িক তাণ্ডব সৃষ্টি করতে চায়। এটা শুধু মুসলমানদের মধ্যে তা নয়, সব ধর্মেই কিন্তু এই ধর্মান্ধ শ্রেণি আছে। তারা সময় সময় একটা গোলমাল, একটা কিছু করার চেষ্টা করে। যদি সকলে আমরা এক হয়ে চলি, তাহলে তারা নিশ্চয়ই কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লায় ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। সার্বক্ষণিক আমরা যোগাযোগ রেখেছিলাম। এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যেখানে যেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হবে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের খুঁজে বের করা হবে। অতীতেও আমরা করেছি। ভবিষ্যতেও আমরা করবো। যথাযথ শাস্তি তাদের আমরা দিতে চাই। এমন শাস্তি, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ সাহস না পায়। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার। বাংলাদেশে সব সময় এই বিষয়টি আছে। প্রত্যেকে সব সময় শামিল হয়ে উৎসবে আনন্দ উপভোগ করে। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু কিছু দুষ্টচক্র কিছু ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের ভেতরের এই চেতনাটাকে নষ্ট করতে চায়। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর