মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছিলেন। তবে রোববার আসামির উপস্থিতিতে শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসী দুই দিন মঞ্জুর করেন। অন্য মামলায় কারাহেফাহতে থাকা পিয়াসাকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোসহ সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া আবেদন করেন। আদালত আসামির উপস্থিতিতে শুনানির দিন ৩ অক্টোবর ধার্য করেন।
৬ সেপ্টেম্বর মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর, তার বাবা, মা ও স্ত্রীসহ ৮ জনকে আসামি করে ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত পিবিআইকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন- আনভীরের বাবা আহাম্মদ আকবর সোবহান, মা আফরোজা, স্ত্রী সাবরিনা, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, মুনিয়ার বাড়ীওয়ালা ইব্রাহিম আহমেদ রিপন, তার স্ত্রী শারমিন এবং আনভীরের গার্লফ্রেন্ড সাইফা রহমান মিম।
মামলার আরজিতে বলা হয়, সায়েম সোবহান আনভীর ২০১৯ সালের জুনে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মুনিয়াকে কলেজ হোস্টেল থেকে ৬৫ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে; তাকে ৭-৮ মাস ধরে ধর্ষণ করে। বিষয়টি জেনে আনভীরের বাবা-মা পিয়াসার মাধ্যমে মুনিয়াকে তাদের বাসায় ডেকে এনে ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। অন্যথায় তাকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে আনভীর বিয়ের আশ্বাস দিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাকে কুমিল্লায় বোনের বাসায় পাঠিয়ে দেন। মুনিয়ার সঙ্গে আনভীর ফোনে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে বিয়ের আশ্বাস দিতেন।
১ মার্চ আবার বিয়ের প্রলোভন দিয়ে মুনিয়াকে কুমিল্লা থেকে গুলশানে মাসিক এক লাখ ৩০ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে আনভীর। বাসায় একা রেখে তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে। এতে মুনিয়া ২-৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে মুনিয়া আনভীরকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এতে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি অপর আসামিরা জেনে পারিবারিক সুনাম, সুখ্যাতি রক্ষায় মুনিয়াকে ‘দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে আনভীর মুনিয়াকে কুমিল্লা চলে যেতে বলে। না হলে তার মা তাকে মেরে ফেলবে বলে জানায়। তখন মুনিয়া লাইভে এসে সবকিছু ফাঁস করে দেবে বলে আনভীরকে জানায়। তখন আনভীর মুনিয়াকে বলেন, ‘এত সময় তুই পাবি না। আমি তোকে দেখে নেব।
নুসরাত জাহান অভিযোগে বলেন, মুনিয়া ঘটনা আঁচ করতে পেরে আসামিদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢাকা ছেড়ে যশোর পালিয়ে যেতে চায়। এ জন্য সে ২৬ এপ্রিল সকালে দুই দফা বাড়িওয়ালা এবং তার স্ত্রীর কাছে গাড়ি চায়। তারা গাড়ি না দিয়ে উল্টো বিষয়টি অপর আসামিদের কাছে ফাঁস করে দেয়। তখনই সকল আসামি পরস্পর যোগসাজশে মুনিয়াকে বাসায় আটকে রেখে হত্যার ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করে এবং ‘কিলিং মিশন দিয়ে মুনিয়াকে ধর্ষণোত্তর হত্যা’ করে তাদের উদ্দেশ্যে হাসিল করে। এই মামলায় রিমান্ডে যাওয়া পিয়াসাকে গত ১ আগস্ট রাতে বারিধারার বাসা থেকে মদ ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরদিন গুলশান থানার মামলায় তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর গুলশান, ভাটারা ও খিলক্ষেত থানার পৃথক তিন মামলায় তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। কয়েক দফা রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।