শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৮:৩৮ অপরাহ্ন

একের অধিক সন্তান নিলে শিশুর বিকাশ ত্বরান্বিত হয়: গবেষণা

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৯১ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২

গবেষণাপত্রে বলা হয়, শিশুদের প্রাথমিক বিকাশের ওপর তাদের মা কত সংখ্যক সন্তান গ্রহণ করছেন তার একটি সম্পর্ক রয়েছে। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নির্ভর করে মায়েদের সন্তান গ্রহণের ওপর। একজন মা একের অধিক সন্তান গ্রহণ করলে শিশুদের বিকাশ ত্বরান্বিত হয়।

পরিবারে এক শিশুর তুলনায় একাধিক শিশু থাকলে মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হচ্ছে- প্রত্যেক নতুন শিশুর জন্মে এই উন্নয়ন ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এতে পরিবারের শিশুদের মানসিক ও শারীরিকভাবে বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

সম্প্রতি আমেরিকান বহুজাতিক প্রকাশনা সংস্থা উইলিতে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র থেকে এ তথ্য জানা যায়। গত ৫ এপ্রিল শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ এবং মাতৃত্বের সমতার সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে এ গবেষণা প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। গবেষণা কাজটি করেন অস্ট্রেলিয়ার লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের শিক্ষক এম মফিজুল ইসলাম এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক ড. নুরুজ্জামান খান।

বাংলাদেশ মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯-এর তথ্যমতে ইউনিসেফ নির্দেশিত চারটি ডোমেইনে বিশ্লেষণ করে শিশুর প্রাথমিক বিকাশের ক্ষেত্রে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়। ইউনিসেফ নির্দেশিত ডোমেইনগুলো হলো- শারীরিক বিকাশ, স্বাক্ষরতা ও সাংখ্যিক বিকাশ, শিখন ক্ষমতা ও সামাজিক আবেগ-অনুভূতির বিকাশ। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার ৩৬ থেকে ৫৯ মাসের ৯ হাজার ৩৮০ শিশুকে নিয়ে গবেষণাটি করা হয়।

গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য বলছে- দেশের ২৫ শতাংশ শিশুর প্রাথমিক শৈশব বিকাশ ঠিকমতো হচ্ছে না। ৭১ শতাংশ শিশুর স্বাক্ষরতা ও সাংখ্যিক বিকাশ বিঘ্নিত হচ্ছে, ২৭ ভাগ শিশু সামাজিক আবেগের দিক থেকে অবিকশিত থেকে যাচ্ছে, ৯ শতাংশ শিশু শেখার দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে এবং ১ শতাংশ শিশু শারীরিকভাবে বিকশিত হচ্ছে না। এই সমস্যাগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ ঘটছে পরিবারে শিশুর সংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, শিশুদের প্রাথমিক বিকাশের ওপর তাদের মা কত সংখ্যক সন্তান গ্রহণ করছেন তার একটি সম্পর্ক রয়েছে। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নির্ভর করে মায়েদের সন্তান গ্রহণের ওপর। একজন মা একের অধিক সন্তান গ্রহণ করলে শিশুদের বিকাশ ত্বরান্বিত হয়।

গবেষক ড. নুরুজ্জামান খান বলেন, মূলত তিনটি কারণে শিশুর বিকাশে সমস্যা হচ্ছে। প্রথমত, বাংলাদেশে শিক্ষিত পরিবারগুলো সন্তান কম নিতে আগ্রহী। বাবা-মা শিক্ষিত হওয়ায় তারা চাকরিক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এতে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এ কারণে ওই পরিবারের শিশুটি মা-বাবার কাছ থেকে পর্যাপ্ত সময় পায় না। ফলে শিশুটি বেড়ে ওঠে বাড়ির কাজের মানুষের কাছে অথবা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ওপর নির্ভর হয়ে যায়। এতে ওই শিশুর বিকাশ বিঘ্নিত হয়।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে শিশুদের প্রাথমিক বিকাশ নিয়ে তেমন কোনও একাডেমিক পড়াশোনার ব্যবস্থা নেই। এ সম্পর্কে বাবা-মায়েদের জ্ঞান নেই বললেই চলে। জাতীয় পর্যায়েও এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কোনও প্রচারণা নেই।

তৃতীয়ত, দেশে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে। ফলে শিশুদের একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের পথ রুদ্ধ হচ্ছে। এটি একটি বড় সমস্যা। মূলত, পরিবারে সন্তান বেশি থাকলে শিশুরা নিজেদের সঙ্গে মিশতে পারে। একে অন্যের সঙ্গে সময় কাটালে উৎফুল্লতা বাড়ে। ফলে বিকাশ ত্বরান্বিত হয়।

এসব সমস্যার উত্তরণে শিশুদের প্রাথমিক বিকাশ সম্পর্কে পড়াশোনার ক্ষেত্র তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন এই গবেষক। তিনি বলেন, শিশুদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রি-প্রাইমারি (প্রাক-প্রাথমিক) লেভেলে জোর দিতে হবে। বাবা-মায়েদের মধ্যে সন্তানদের সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বাবা-মা যেন পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের সঙ্গে বেশি সময় দেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জরুরিভাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। সন্তানদেরকে সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে পর্যাপ্ত সময় কাটানোরও ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলেন তিনি। তবে গবেষণার উদ্দেশ্য দম্পতিদের বহু সন্তান নিতে আগ্রহী করা নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সন্তানদের বিকাশের কথা চিন্তা করে যৌথ পরিবার টিকিয়ে রেখে বেশিসংখ্যক শিশুকে একত্রে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর