রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন

উত্তরাঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৮৬ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০২২

উত্তরাঞ্চলে সমতলের চা বাগান ও ক্ষুদ্র চা চাষ থেকে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১৪ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন কেজি চা। ২০২১ সালে চায়ের উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এরআগের বছর ১০ দশমিক ৩০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উত্তরাঞ্চলে চা চাষিদের ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলের মাধ্যমে চা আবাদ বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছর ৪ দশমিক ২৪ মিলিয়ন কেজি (৪১ শতাংশ)  বেশি চা উৎপাদন হয়েছে। এদিকে দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে চায়ের তৃতীয় নিলাম বাজার স্থাপনের খবরে জেলার চা বাগান মালিক, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ২০২১ সালে দেশের ১৬৭টি চা বাগান এবং ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান থেকে রেকর্ড পরিমাণ মোট ৯৬.৫০৬ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। যা ২০২০ সালের চেয়ে ১০ দশমিক ১১১ মিলিয়ন কেজি বেশি। ২০২১ সালে চায়ের উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে।  তিনি বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের সব চা বাগানের সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। সরকারের আর্থিক প্রণোদনা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিয়মিত মনিটরিং ও পরামর্শ প্রদান, বাগান মালিক ও শ্রমিকদের নিরলস প্রচেষ্টা, সঠিক সময়ে ভর্তুকি মূল্যে সার বিতরণ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চা নিলাম কেন্দ্র চালু রাখা, চা শ্রমিকদের মজুরি, রেশন এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের ফলে ২০২১ সালে দেশের চা উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড ছড়িয়ে গিয়েছে। উত্তরাঞ্চলে চা চাষিদের ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলে’র মাধ্যমে চা আবাদ বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহের ফলে শুধুমাত্র সমতলের চা বাগান ও ক্ষুদ্র চা চাষ থেকে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ৪১ শতাংশ বেশি চা উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।

এদিকে পঞ্চগড় জেলায় ২০০০ সাল থেকে চা উৎপাদন শুরু হলেও দীর্ঘ ২২ বছরেও নিলাম বাজার স্থাপন না হওয়ায় ন্যায্যমূল্য পাওয়া, চায়ের দাম ওঠানামা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন চা সংশ্লিষ্টরা। চা চাষের বিপ্লব সৃষ্টিকারী এ জেলায় দীর্ঘদিনেও চায়ের নিলাম বাজার না থাকায় বিপাকে পড়তে হয় চা বাগান মালিকসহ কারখানা মালিকদের।

 সমস্যা থেকে চা চাষিদের মুক্তি দিতে গত বছরের ১৭ অক্টোবর পঞ্চগড়ে নিলাম বাজার স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানান বাংলাদেশ চা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম। অবশেষে সরকারের উচ্চ মহলের সিদ্ধান্তের পরে চা বাগান মালিকসহ কারখানা মালিকদের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। চা বিক্রি করতে নিলাম বাজারে কারখানা মালিকদের অপেক্ষা করতে হবে না। সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স দিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। বন্ধ হবে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া, খোলা বাজারে কালোবাজারে চা বিক্রি, চায়ের দাম ওঠানামাসহ অনেক সমস্যার সমাধান হবে। এতে করে যেমন জেলায় হাজারো মানুষের নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, তেমনি নতুন করে ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচিত হবে।
পঞ্চগড়ে চায়ের নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পঞ্চগড়ে গড়ে উঠছে পঞ্চগড় টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। বাংলাদেশ স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম খোকনকে আহবায়ক ও পঞ্চগড়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান শেখকে যুগ্ম আহবায়ক করে ১৫ সদস্যের পঞ্চগড় টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ২৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অভিজ্ঞতা অর্জনে সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও মৌলভীবাজারে স্থাপিত নিলাম কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।

কারখানা মালিকরা জানান, পঞ্চগড়ে দীর্ঘদিন ধরে নিলাম বাজারের দাবি ছিল। প্রধানমন্ত্রী নিলাম বাজারের অনুমোদন দিয়েছেন। এতে করে ওয়্যার হাউজ ভাড়া, চট্টগ্রামে চা পৌঁছানোসহ বিভিন্ন ব্যয় কমে যাবে। এতে সবাই উপকৃত হবে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা আসবেন। এখানে হোটেল- মোটেল ব্যবসাসহ অনেকেরই কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

পঞ্চগড় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, চায়ের তৃতীয় নিলাম বাজার হলে পঞ্চগড়ে চা পাতার মূল্য বাড়বে। অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। ব্যবসার নতুন দ্বার উন্মোচন হবে। পরিবহন খরচও কমবে। আমিসহ চা সংশ্লিষ্টদের দুটি গ্রুপ চায়ের নিলাম বাজার চট্টগ্রাম ও মৌলভীবাজার পরিদর্শন করেছেন। এতে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। ইতোমধ্যে পঞ্চগড়ে নিলাম বাজারের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। টি টেস্টিংসহ বিভিন্ন ধরনের ল্যাব হবে। অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কার্যক্রম চলছে।

পঞ্চগড় টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহবায়ক আমিরুল ইসলাম খোকন বলেন, চট্টগ্রামে ৯ জন এবং শ্রীমঙ্গলে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে নিলাম কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। সেখানে গিয়ে নিলাম কীভাবে হয় তা দেখেছি। টি টেস্টিং, চায়ের গ্রেডিং, ব্রোকার হাউজসহ চা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো দেখেছি। টি বোর্ডের পরিচালনায় টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এসব কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। বর্তমানে লাইসেন্স করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চলতি বছরের মে মাস থেকে এখানে নিলাম বাজার অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছেন তিনি।

 বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, সমতল ভূমিতে চা চাষের জন্য পঞ্চগড় ও এর পাশের জেলাগুলো সম্ভাবনাময় এলাকা। দিন দিন উত্তরাঞ্চলে চা চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবছর চায়ের আবাদ বাড়ছে। ফলে প্রতিবছর চায়ের উৎপাদনও বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে চাষিদেরকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ভ্রাম্যমাণ ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল চালু হয়েছে। এছাড়া দুটি পাতা একটি কুড়ি অ্যাপস থেকে পাওয়া যাচ্ছে চায়ের যাবতীয় তথ্য। এছাড়া চা বোর্ডের পক্ষ থেকে সব রকমের সহযোগিতাও দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী এবং লালমনিরহাট এই ৫ জেলায় ১০টি নিবন্ধিত ও ১৭টি অনিবন্ধিত বড় চা বাগান (২৫ একরের উপরে) এবং সাত হাজার ৩১০টি ক্ষুদ্র চা বাগান (০ থেকে ২৫ একরের নিচে) রয়েছে। গত দুই দশক থেকে এ অঞ্চলে মোট ১০ হাজার ১৭০ দশমিক ৫৭ একর জমিতে চা চাষ হয়েছে। জেলায় আরও প্রায় ৪০ হাজার একর জমিতে চা চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এসব চা বাগান থেকে গত ২০২০ সালে পাঁচ কোটি ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮৬ কেজি সবুজ চা পাতা উত্তোলন করা হয়েছে। আর এক কোটি তিন লাখ অর্থাৎ ১০.৩০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। যা জাতীয় চা উৎপাদনের মোট ১২ শতাংশ। ২০২০ সালের পর থেকে দেশের অন্যান্য এলাকায় চায়ের উৎপাদন কিছুটা কমলেও উৎপাদন বেড়েছে  উত্তরাঞ্চলে। পঞ্চগড়ের ১৭ টি ও ঠাকুরগাঁওয়ের একটি চা কারখানা থেকে এই চা উৎপন্ন হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর