শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৮:০৯ অপরাহ্ন

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ফিলিপাইনে: ক্ষমতায় ফের মার্কোস পরিবার

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৬৪ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২

ফার্দিনান্দ ‘বংবং’ মার্কোস জুনিয়রের বয়স তখন ২৮ বছর। ওই সময়ে পরিবারের সঙ্গে তাড়াহুড়ো করে একটি হেলিকপ্টারে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের বাসভবন ছাড়তে হয়েছিল। কারণ, তখন লাখ লাখ মানুষ তার স্বৈরশাসক বাবা ফার্দিনান্দ মার্কোস সিনিয়রের পদত্যাগের দাবিতে ঐতিহাসিক ‘জনশক্তি’ বিপ্লব ঘটিয়েছে।

৩৬ বছর পর সেই মার্কোস জুনিয়র এখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিশাল জয় উদযাপন করছেন। ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং প্রায় এক হাজার কোটি ডলার লুটপাটে অভিযুক্ত একটি পরিবারের জন্য এটি নজিরবিহীন প্রত্যাবর্তন।

বেসরকারি ফলাফলে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেতে যাচ্ছেন মার্কোস। এই বেসরকারি ফলাফলকে বৈধ হিসেবেই মেনে নেওয়া হচ্ছে। তার পিতার সামরিক শাসনের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়া সবশেষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমনটি হয়নি। মার্কোস পরিবারের এই প্রত্যাবর্তনে অনেকেই হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। ওই সময়ে ম্যানিলায় বিক্ষোভে যোগ দিয়ে পরে মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছিলেন ফ্লোরেন্সিও আবাদ। তিনি বলেন, ১৯৮৬ সালে আমরা বলেছিলাম আর কখনও নয়। তারা (মার্কোস) কীভাবে ফিরে আসতে পারে?

খ্যাতি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য কয়েক দশক ধরে প্রচার চালিয়েছে মার্কোস পরিবার। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পরবর্তী সরকারের ত্রুটি এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুয়ার্তের মেয়ের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার রাজনৈতিক মাস্টারস্ট্রোক। এসবের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পদে অভাবনীয় প্রত্যাবর্তন হচ্ছে মার্কোস পরিবারের।

বেসরকারি গণনায় আলাদাভাবে নির্বাচনে লড়া সারা দুয়ার্তে কারপিও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নজিরবিহীনভাবে এগিয়ে আছেন। নিউ ইয়র্কভিত্তিক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিশ্লেষক জসুয়া কুর্লান্টজিক বলেন, ১৯৮৬, এমনকি ১৯৯৫ সালেও আমি এটা বিশ্বাস করতাম না। কুর্লান্টজিক বলেন, ১৯৯০ দশকের শেষ দিক থেকে ফিলিপাইন অকার্যকর এবং দুর্নীতিপরায়ণ সরকার প্রত্যক্ষ করতে থাকে। এর জেরেই ক্ষমতায় আসেন রদ্রিগো দুয়ার্তে। তবে কুর্লান্টজিক তাকে ‘আধা স্বৈরশাসক’ মনে করেন। তার মতে, ‘কঠোর হাতে শাসনের ধারণাটি আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, এমনকি তরুণদের মধ্যেও।

১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কোরাজন অ্যাকুইনো মার্কোস পরিবারকে ফিলিপাইনে ফেরার অনুমোদন দেন। ১৯৮৩ সালে তার স্বামী গুপ্তহত্যার শিকার হলে জনশক্তি আন্দোলন শুরু হয়। আর এই আন্দোলনের জেরেই ২০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর পতন হয় সিনিয়র মার্কোসের।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডেভিড চাইকিন বলেন, সিনিয়র মার্কোস মারা যাওয়ার পর তার পরিবারকে নির্বাসন থেকে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া ছিল ‘অসাধারণ উদারতার’ কাজ। তিনি আরও বলেন, ‘এটি ছিল মার্কোস পরিবারের ক্ষমতায় ফেরার সূচনা।’

নতুন প্রজন্মের ভোটার

দেশে ফেরার পর মার্কোস জুনিয়র এবং তার মা ইমালদা উভয়েই দ্রুত রাজনীতিতে যোগ দেন। পরিবারের সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য অনেক মামলায় লড়তে থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক নেটওয়ার্ক পুনর্গঠন করেন। পরিবারটি দাবি করে এসেছে, প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ে মার্কোস সিনিয়র এবং ইমালদা মার্কোস সামান্য বেতন পেলেও তাদের সম্পদ বৈধভাবে অর্জিত হয়েছে।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ফিলিপাইনে: ক্ষমতায় ফের মার্কোস পরিবার

ইমালদা মারকোস চার মেয়াদে কংগ্রেসে নির্বাচিত হয়েছেন। তার ছেলে ২১ বছর সরকারি পদে কাজ করেছেন। কংগ্রেসে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পরিবারের শক্ত অবস্থান থাকা ইলোকোস নোরটে প্রদেশের গভর্নর হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ২০১৬ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করে হেরে যান তিনি।

মার্কোস পরিবারের হাইপ্রোফাইল রাজনৈতিক ভূমিকার মাধ্যমে এবং মার্কোসের বোন ও সিনেটর ইমি মার্কোসের সোশাল মিডিয়ার প্রচারে তাদের পিতার শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতিকে খাটো করে দেখিয়ে তাকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং অবকাঠামো নির্মাণের ‘স্বর্ণযুগ’ বলে অভিহিত করা হয়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ১৯৭০-এর দশকের বেশিরভাগ সময় ফিলিপাইনে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির রেকর্ড হয়, কিন্তু ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে ঋণ ও বৈশ্বিক সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় সম্পদ কমে যায় । বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, মার্কোস প্রশাসনের শেষ দুই বছরে অর্থনীতি প্রায় ১৫ শতাংশ সংকুচিত হয়।

এবারের নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি ভোটারের বয়স ১৮ থেকে ৪০ হওয়ায় সোশাল মিডিয়ার প্রচার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে। ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াই-ম্যানোনার এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক প্যাট্রিসিও আবিনালেস বলেন, ‘এরাও নতুন প্রজন্মের ভোটার। মার্কোস ও মার্কোস পরবর্তী যুগ এরা কেউ দেখেনি।’

জনমত জরিপকারী প্রতিষ্ঠান পালস এশিয়া জানিয়েছে, গত নভেম্বরে দুয়ার্তে কারপিও যখন রানিংমেট হওয়ার ঘোষণা দেন তখন থেকে মার্কোসের প্রতি ভোটারদের সমর্থন দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

জনশক্তি আন্দোলনে অংশ নেওয়া আবাদ সাবেক প্রেসিডেন্ট কোরাজন আকুইনো এবং তার ছেলে প্রেসিডেন্ট বেনিগনো আকুইনোর অধীনে মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মতে, ১৯৮৬ সালের পর দায়িত্ব পালন করা সরকার মার্কোস আমলের অবিচার ঘুচাতে পারেনি। যেসব পরিবর্তন হয়েছে তা খুব একটা গভীর ছিল না। বিশেষ করে দেশের সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে অনেক ফিলিপিনো বৈষম্যের শিকার হয়েছেন ও বাদ পড়েছেন।

তিনি আরও বলেন, এখানে যৌক্তিক হতাশা বিরাজ করছে।

মার্কোস জুনিয়র ছাড়াও বেসরকারি ফলাফলে তাদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার ছেলে সান্দ্রো প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য হতে যাচ্ছেন, তার বোন ইমি’র ছেলে ম্যাথিউ পুনরায় ইলোকস নরতে প্রদেশের গভর্নর হতে পারেন। এছাড়া লায়োগ সিটির ভাইস গভর্নর হতে যাচ্ছেন আরেক আত্মীয়, অপর একজন আত্মীয় মেয়র হতে পারেন। রয়টার্স অবলম্বনে


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর