শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৯:৪১ অপরাহ্ন

ইউক্রেন যুদ্ধে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে ‘নতুন যুগের’ সূচনা

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৭৩ বার
আপডেট : রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০২২

ইউক্রেন যুদ্ধের বাস্তবতায় নিজ দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার কথা বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। শেষ পর্যন্ত এটি বাস্তবায়িত হলে সেটি হবে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর দেশটির বিদেশ নীতিতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। মিত্রদের সঙ্গে সমীকরণের পাশাপাশি বৈরী দেশের সঙ্গেও সম্পর্কের নতুন দিক খুঁজতে যাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে মোকাবিলায় তাই মিত্রদের পাশাপাশি চীন, ইরান ও ভেনেজুয়েলার মতো বৈরী দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক নিয়ে ভাবছে হোয়াইট হাউজ।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শীতল যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ইউরোপের সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ করেছে। এমনকি এশীয় অনেক মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হয়েছে। আর এটি গণতান্ত্রিক বিশ্বে নিজেদের আরও নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে ওয়াশিংটনকে প্রভাবকে পুনরুজ্জীবিত করছে। এমন সময়ে এই ঘটনা ঘটলো যখন ২০ বছর যুদ্ধের পর চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে আফগানিস্তান ছেড়েছে মার্কিন সেনারা।

রাশিয়ার ওপর নতুন আঙ্গিকে মনোযোগী হওয়ার ক্ষেত্রে কঠিন সিদ্ধান্ত ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মতো বিষয়গুলো হাজির হয়েছে। যেভাবে শীতল যুদ্ধের সময় মার্কিন কূটনীতি নির্ধারিত হতো। তখন যুক্তরাষ্ট্র সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নামে মানবাধিকার লঙ্ঘন এড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি স্বৈরাচারদের সমর্থন দিতো।

স্বৈরাচারিতার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের পক্ষে বাইডেনের বৈশ্বিক লড়াই উজ্জীবিত হবেস্বৈরাচারিতার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের পক্ষে বাইডেনের বৈশ্বিক লড়াই উজ্জীবিত হবে

ওবামার আমলের একজন ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি উপদেষ্টা বেঞ্জামিন জে. রোডস। তিনি বলেন, আমার মনে হয় আমরা নিশ্চিতভাবে এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছি। ৯/১১ পরবর্তী সময়ের সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধ এখন অতীত। ভবিষ্যতে কী আছে তা নিয়ে আমরা নিশ্চিত নই।

মার্কিন বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবেশী ইউক্রেনে ভ্লাদিমির পুতিনের আক্রমণের ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি প্রিজম হয়ে উঠেছে। অদূর ভবিষ্যতে প্রায় সব নীতিগত সিদ্ধান্ত এর আলোকে দেখা হবে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পশ্চিমা কর্মকর্তারা প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন। যেমনটি দেখা গিয়েছিল ২০০১ সালের সন্ত্রাসী হামলার পর। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ‘পুতিনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে মুক্তবিশ্ব’। এই উক্তি মনে করিয়ে দিচ্ছে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সন্ত্রাসীবিরোধী যুদ্ধে কীভাবে ‘পুরো মুক্তবিশ্ব’ জড়িয়েছিল।

স্বল্প মেয়াদে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে মস্কোর মতো স্বৈরাচারিতার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের পক্ষে বাইডেনের বৈশ্বিক লড়াই উজ্জীবিত হবে। ইউক্রেনের মতো নতুন গণতান্ত্রিক দেশগুলোর হুমকি দৃশ্যমান হবে। যদিও ন্যাটো জোটের মধ্যে ক্রমশ স্বৈরাচারিতার দিকে ধাবিত হওয়া তিনটি দেশ – পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও তুরস্ক কিয়েভকে সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আর যুক্তরাষ্ট্র নিজেও তার গণতন্ত্রের ওপর অভ্যন্তরীণ আঘাত মোকাবিলা করছে।

এই যুদ্ধের ফলে বাইডেনের জলবায়ু পরিবর্তনের এজেন্ডায় তাগিদ ফিরিয়ে এনেছে। এতে রাশিয়ার সরবরাহ ঘাটতি মেটাতে জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নির্ভরশীলতার গুরুত্ব উঠে আসছে। কিন্তু ইতোমধ্যে স্বল্পমেয়াদে তেলের সরবরাহ বাড়াতে চাপের মুখে পড়েছে। এজন্য তারা ভেনেজুয়েলার মতো বিচ্ছিন্ন স্বৈরাচার ও সৌদি আরবের স্বৈরাচারী রাজতান্ত্রিক শাসকদের কাছ থেকে তেল আনতে চাইছে।

পুতিনের কাছ থেকে শি জিনপিংকে দূরে রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্রপুতিনের কাছ থেকে শি জিনপিংকে দূরে রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

এটি পুতিনের কাছ থেকে চীনকে দূরে সরিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। পশ্চিমা কঠোর নিষেধাজ্ঞায় নিজ অর্থনীতি রক্ষায় চীনের ওপর নির্ভর করার প্রচেষ্টায় রয়েছেন পুতিন।

একাধিক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলছেন যে, ইউরোপে নতুন করে মনোনিবেশ করার ফলে এশিয়া থেকে নজর সরে যেতে পারে। তবে হোয়াইট হাউজের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, এশীয় সরকারগুলোর এই যুদ্ধের প্রতি মনোভাবকে কাজে লাগাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। বলা যেতে পারে, গণতন্ত্র রক্ষায় বৈশ্বিক আদর্শ গড়ে তুলতে পশ্চিমাদের সঙ্গে তাদের আরও নিবিড়ভাবে কাজ করা প্রয়োজন।

জার্মান মার্শাল ফান্ড অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস আয়োজিত এক আলোচনায় হোয়াইট হাউজের এশীয় নীতি বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা কার্ট এম. ক্যাম্পবেল বলেন, আমরা যা দেখছি তা হলো নজিরবিহীন এশীয় স্বার্থ ও মনোযোগ।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি এই ট্র্যাজেডির একটি ফলাফল হতে পারে ইউরোপীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক সংহতি জোরদারের নতুন চিন্তাভাবনা। যা আগে কখনও দেখা যায়নি।

বিশ্বের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি গুরুতর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধের অবসান এবং ইসলামি জঙ্গিবাদের হুমকি তীব্র না থাকার কারণে এই পরিবর্তন হচ্ছে। যুদ্ধে সন্ত্রস্ত অনেক মার্কিন নাগরিক বিদেশে সামরিক উপস্থিতি কমাতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। ট্রাম্প ন্যাটোর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এমনকি জোট থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের কথাও বলেছিলেন তিনি।

ক্ষমতায় আসার বাইডেন মার্কিন মিত্রদের নতুন করে একত্রিত করতে চেয়েছেন। এর মূল লক্ষ্য ছিল, চীনকে মোকাবিলা। কিন্তু রাশিয়ার ইউক্রেনে আগ্রাসন তার লক্ষ্যকে নাটকীয় ও জরুরিভাবে পাল্টে দিয়েছে। এখন তার সামনে সুযোগ রয়েছে চীন ও রাশিয়া যদি পশ্চিমাবিরোধী ব্লক গড়ে তুলে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা একইসঙ্গে তাদের বিরোধিতা করার।

এতে করে ওয়াশিংটন একটি নতুন ও মহৎ লক্ষ্য পেয়ে গেছে। সাবেক ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি উপদেষ্টা বেঞ্জামিন জে. রোডস বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা একটি নতুন যুগ পেতে চাইছিলাম। আমি মনে করি পুতিনের আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সেই উচ্চ নৈতিক পটভূমি হাজির করেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর