রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:০২ পূর্বাহ্ন

ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিনের লক্ষ্য শীতকাল

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৫০ বার
আপডেট : বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০২২

নেপোলিয়ন ও হিটলারের বিরুদ্ধে মস্কোর জয়ের সহযোগিতা করেছিল শীতল আবহাওয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখন বাজি ধরছেন এই শীতে জ্বালানির আকাশছোঁয়া মূল্য এবং সম্ভাব্য ঘাটতির ফলে রাশিয়ার শর্তে রাজি হয়ে চুক্তি করতে ইউক্রেনকে বাধ্য করবে ইউরোপ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এসব কথা তুলে ধরেছে।

ক্রেমলিনের চিন্তাভাবনার সঙ্গে পরিচিত দুটি রুশ সূত্র জানিয়েছে, মস্কো এটিকে শান্তির একমাত্র পথ মনে করছে। কিয়েভ জানিয়েছে, রুশরা ইউক্রেনের দখলকৃত সব ভূখণ্ড ছেড়ে যাওয়ার আগে তারা মস্কোর সঙ্গে কোনও সমঝোতা করবে না। তাই এমন পথের কথা ভাবছে ক্রেমলিন।

রুশ কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রমতে, আমাদের সময় আছে, আমরা অপেক্ষা করতে পারি। এবারের শীতকাল ইউরোপীয়দের জন্য দীর্ঘ ও কষ্টকর হতে যাচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ, বিক্ষোভ দেখতে পাবো। ইউক্রেনকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে কয়েকজন ইউরোপীয় নেতা হয়তো দুইবার ভাববেন এবং মনে করবেন চুক্তি করার সময় হয়েছে।

ক্রেমলিন ঘনিষ্ঠ দ্বিতীয় আরেকটি সূত্র বলছে, মস্কো ভাবছে ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ঐক্যে তারা ফাটল ধরিয়েছে এবং শীতের প্রতিকূলতায় এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুততর হবে। দ্বিতীয় সূত্রমতে, শরৎ ও শীতে যুদ্ধ গড়ালে পরিস্থিতি প্রকৃত অর্থে কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে আশা করা হচ্ছে ইউক্রেনীয়রা শান্তি চাইবে। এই বিষয়ে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রাশিয়া জ্বালানিকে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

ইউক্রেন ও তাদের পশ্চিমা সমর্থকরা বলে আসছেন, রাশিয়াকে ছাড় দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন আপসের পথে হাঁটছে বলে এখন পর্যন্ত কোনও ইঙ্গিত তারা দেখতে পাননি। ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবসে দেশটির জনগণের প্রতি এক টুইট বার্তায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েন বলেছেন, শুরু থেকে এই লড়াইয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আপনাদের পাশে রয়েছে। যতদিন প্রয়োজন ততদিন পাশে থাকবে।

ভূ-রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে জ্বালানির মূল্য বেড়েছে রেকর্ড মাত্রায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন রুশ কয়লার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে অপরিশোধিত রুশ তেলে আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রাশিয়াও ইউরোপের গ্যাসের রফতানি কমিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করছে।

বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি সংগ্রহ ও সাশ্রয় উদ্যোগের মাধ্যমে শীতে চাপ মোকাবিলার চেষ্টা করছে ইউরোপীয় সরকারগুলো। কিন্তু খুব কম জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মনে করেন, তারা তাদের সব প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারবে।

ক্রেমলিন দাবি করছে, কারিগরি জটিলতা, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং রুবলে দাম পরিশোধে অনীহার কারণে গ্যাসের সরবরাহ কমেছে। যদিও একই সময়ে তেল ও গ্যাস বিক্রি থেকে রেকর্ড মাত্রায় মুনাফা পাচ্ছে রাশিয়া।

ইউরোপে মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক কমান্ডার ও অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল বেন হজেস বলেন, অবশ্যই ক্রেমলিন ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন, যুক্তরাজ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রীর খোঁজ, জার্মানির গ্যাস নিয়ে উদ্বেগের কারণে আমরা ইউক্রেন নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবো। তিনি বলেন, যুদ্ধ হলো সরঞ্জামের পরীক্ষা, মনোবলের পরীক্ষা। পরীক্ষা হবে ক্রেমলিনের ইচ্ছার তুলনায় পশ্চিমারা ভালো অবস্থানে আছে কিনা? আমার মনে হয় এটি একটি চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে।

রুশ কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, ভবিষ্যতে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে রাশিয়া পুরো ডনবাস অঞ্চল এবং সামরিক নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা চায়।স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, মস্কোতে নিবৃত করতে কোনও ভূখণ্ডগত ছাড় দেবে না কিয়েভ।জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পডোলিয়াক বলেছেন, পশ্চিমারা আমাদের যথেষ্ট অস্ত্র সরবরাহ করছে, যাতে আমরা ব্যর্থ না হই, কিন্তু যুদ্ধে জয়ের মতো অস্ত্র তারা এখনও দিচ্ছে না। আমাদের আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, তারা মনে করেন কিয়েভ দখলের মূল লক্ষ্য থেকে এখনও সরেননি পুতিন। কিন্তু তিনি এখনও তা অর্জন করতে পারেননি।রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘনিষ্ঠ একটি পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক থিংকট্যাংক আরআইএসি-এর প্রধান আন্দ্রেই কুর্তনভ বলছেন, কোনও পক্ষই প্রথমে নত হতে চাইছে না। উভয়পক্ষ মনে করছে সময় গড়ানোর সঙ্গে তাদের অবস্থান দৃঢ় হবে। প্রকৃতপক্ষে শিগগিরই কোনও রাজনৈতিক সমাধানে আমরা পৌঁছাতে পারবো বলে কল্পনা করা কঠিন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর