রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন

ইউক্রেন যুদ্ধে পর্দার অন্তরালে চীনের ভূমিকা

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৬৭ বার
আপডেট : সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০২২

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। ফলে স্বভাবতই এই সংঘাতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চেয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ভূমিকা অনেক কম দৃশ্যমান। অবশ্য এই সংঘাতে চীনও খেলোয়াড়ের ভূমিকায় রয়েছে। তবে চীনকেও শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার মতো পরিণতি অনুভব করতে হবে কিনা সেটি এখনও পরিষ্কার নয়।

ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই একের পর এক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে রাশিয়া। অর্থনৈতিকভাবে চাপ আরও বাড়ানোর কৌশলের অংশ হিসেবে দেশটির সঙ্গে স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিতের জন্য ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার রাশিয়া থেকে ভদকা, সামুদ্রিক খাবার ও হীরা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দেশটিতে বিলাসবহুল সামগ্রী রফতানিতেও নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রুশ ধনকুবেরের তালিকায় আরও নাম যোগ করার কথাও জানিয়েছেন বাইডেন।

এমএফএন স্ট্যাটাস

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের একতরফা নিষেধাজ্ঞা স্বাভাবিক বাণিজ্যের রীতিবিরুদ্ধ। রাশিয়ার মোস্ট ফেভারড নেশন—এমএফএন স্ট্যাটাস রয়েছে। এই স্ট্যাটাসটিই প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন বাইডেন। বিষয়টি মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন পেলে দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিত হয়ে পড়বে। তাছাড়া বাইডেন প্রশাসন ক্রেমলিনের ওপর আরও নতুন শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুযোগ পাবে। যুক্তরাষ্ট্রে অবশ্য এমএফএন-কে স্থায়ী স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্ক (পিএনটিআর)  হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। এতে যুক্ত দেশগুলো পরস্পরের মধ্যে বাণিজ্য সুবিধা পাবে।

শুক্রবার বাইডেন বলেছেন, ‘পুতিন একজন আগ্রাসী মানুষ। তাকে মূল্য দিতে হবে।’ সংবাদমাধ্যম নিউজউইকের বিশ্লেষণে দাবি করা হয়েছে, ইউক্রেনে বিশেষভাবে ক্ষতিকর ভূমিকা পালনকারী চীনকেও মূল্য দিতে হবে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইসও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ঘটনায় মস্কোর ওপর আরোপিত কোনও নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করলে চীনা কোম্পানিগুলোকে তার পরিণতি ভোগ করতে হবে।

চীন-রাশিয়ার কৌশলগত অংশীদারিত্ব

গত ৪ ফেব্রুয়ারি বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির হন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ওই সফরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে বসে পুতিন ঘোষণা দেন, দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বের গভীরতায় ‘কোনও সীমা থাকবে না’। চীনের কাছে বিপুল পরিমাণ তেল, গ্যাস ও কয়লা রফতানিরও ঘোষণা দেন তিনি। বেইজিং-এর তরফেও রাশিয়ান গম আমদানির ওপর আগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। অর্থাৎ পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে অনানুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়াকে নগদ অর্থ দিচ্ছে চীন।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও কঠিন পরিস্থিতির মুখে রয়েছে।  তবে বেইজিং উল্টো তার আর্থিক ব্যবস্থা রুশ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সহজ করে দিয়েছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়ান ব্যাংকগুলো শিগগিরই চীনের ক্রস বর্ডার ইন্টারব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেমে যোগ দেবে। অর্থাৎ, সুইফটের চীনা সংস্করণে যোগ দেবে তারা।

রাশিয়ায় এরইমধ্যে ভিসা ও মাস্টারকার্ড পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, দেশটিতে এখন যত মাস্টার বা ভিসা কার্ড রয়েছে, আর তা কাজ করবে না। এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে দেশটির সাধারণ মানুষও। তবে বিকল্প হিসেবে রুশ নাগরিকরা এখন চীনের ইউনিয়নপে কার্ড ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে।

রাশিয়ার ভাষায় কথা বলছে চীন

চীনা কূটনীতিকদেরও অনেক ক্ষেত্রেই রাশিয়ার ভাষায় কথা বলতে দেখা গেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় মিডিয়াতেও ইউক্রেনে রুশ অভিযান নিয়ে রাশিয়ার হাস্যকর প্রপাগান্ডা প্রচার করা হচ্ছে।

চীন স্পষ্টতই ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিক শেষ না হওয়া পর্যন্ত হামলা স্থগিত রাখতে মস্কোকে রাজি করিয়েছে দেশটি। ২০ ফেব্রুয়ারি অলিম্পিকের বিদায়ের ঘণ্টা বাজার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায় রুশ বাহিনী।

যুক্তরাষ্ট্রে কোন দেশগুলোকে পিএনটিআর সুবিধা দেওয়া হবে সেটি নির্ধারণ করে আইন ও প্রবিধান, প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশ নয়। গত মার্চে তিন জন রিপাবলিকান সিনেটর—আরকানসাসের টম কটন, ওকলাহোমার জেমস ইনহোফ এবং ফ্লোরিডার রিক স্কট—চীন ট্রেড রিলেশনস অ্যাক্ট প্রবর্তনের কথা বলেন, যেখানে বেইজিং-এর জন্য পিএনটিআর প্রত্যাহারের কথা বলা হয়। বিলটিতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ২০০১ সালের আগের নিয়মে ফিরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, যাতে চীনকে পিএনটিআর স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়টি প্রতি বছর নতুন করে পর্যালোচনার সুযোগ পাবে মার্কিন কংগ্রেস।

চীনের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অন্যান্য অপরাধ, বিশেষ করে উইঘুর, কাজাখ এবং অন্যান্য তুর্কি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক আচরণের অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনে সমর্থন দেওয়ারও অভিযোগ উঠছে দেশটির বিরুদ্ধে। এ নিয়ে সরব মার্কিন রাজনীতিকরা বলছেন, নিজ দেশে নৃশংসতা চালানো এবং বিদেশে আগ্রাসনকারী দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য করা উচিত নয়। তবে এ নিয়ে আইনি জটিলতাও কম নয়। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি চীন ও রাশিয়াও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য। আর এমএফএন-পিএনটিআর মর্যাদা প্রত্যাহার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অবৈষম্য নীতির লঙ্ঘন। নিউজউইক অবলম্বনে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর