রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন

আমার পাশে কেউ দাঁড়ায়নি, পরীমনির পাশে দাঁড়াবে

রিপোর্টার / ১৩৬ বার
আপডেট : শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আলোচিত নায়িকা পরীমনিকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ভারতে অবস্থান করা বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিন।

তসলিমা নাসরিন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘পরীমনি জেল থেকে বের হলো, বাড়িতে ঢুকল আর দেখল তাকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে বাড়িওয়ালা।

এই ভয়ংকর দুঃসময়কে আমি খুব ভালো জানি, যেহেতু নিজের জীবনেই ঘটেছে এমন ঘটনা। মনে পড়ছে কলকাতার সেই দিনগুলোর কথা। ৭ নম্বর রওডন স্ট্রিটে ডা. দেবল সেনের বাড়িতে আমি তখন ভাড়া থাকি। ২০০৭ সাল। পুলিশ কমিশনার এসে জানিয়ে যাচ্ছেন আমাকে দেশ ছাড়তে বলছেন মুখ্যমন্ত্রী, দেশ যদি আপাতত নাও ছাড়ি, রাজ্য আমাকে আজ বা কালের মধ্যেই ছাড়তে হবে। দেশের দরজা বহুকাল বন্ধ। ইউরোপ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে প্রাণের টানে আর ভাষার টানে আশ্রয় নিলাম, আর আমাকে কি না এই আশ্রয়টিও ছাড়তে হবে, কোথাও তো আর ঘর বাড়ি নেই আমার, যাব কোথায়!’

তসলিমা নাসরিন আরও লেখেন, ‘আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরিয়ে নিতে চাইছে কারা! আমি সম্ভবত যতো না রাজনীতিকদের ষড়যন্ত্রের শিকার, তার চেয়ে বেশি শিকার সাহিত্যের মাফিয়া ডনদের রাজনীতির। যখন আশপাশে কেউ নেই, বিপদ দেখে বন্ধুদের উপস্থিতি একশ থেকে প্রায় শূন্যে চলে এলো, একা একা আমি চিৎকার করছি, আমি রাজ্য ছাড়ব না, শহর ছাড়ব না, বাড়ি ছাড়ব না, কারণ আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমি মানবতার কথা লিখি। মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম করা, মানবতার কথা লেখা অন্যায় তো নয়!’

নির্বাসিত লেখিকা বলেন, ‘ভালোবেসে এক বাঙালি লেখক বাংলায় বাস করছে, তাকে বাংলা থেকে বের করে দেওয়া, তাকে নিষিদ্ধ করা মানে তার লেখক সত্তাকে ধ্বংস করে দেওয়া। তাই আমি অস্বীকার করেছিলাম রাজ্য ছাড়তে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যখন ফোন করে বললেন আমাকে রাজ্য ছাড়তেই হবে, বুঝলাম যাদের উচিত ছিল পাশে দাঁড়াবার, তারাই পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। কলকাতা তো দেখিয়ে দিয়েছে লেখকেরা কী করে আরেক লেখকের বই নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়, লেখকেরা কী করে আরেক লেখকের সর্বনাশ করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ’

‘চারদিক থেকে যখন অন্ধকার নেমে আসছে, তখন আমার বাড়িওয়ালা আমাকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছিলেন! সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রীই বাড়িওয়ালাকে বলেছিলেন ওই নোটিশটি দিতে। ষড়যন্ত্র কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তা সেদিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম। ’ নিজের ঘটনার সঙ্গে পরীমনির ঘটনার মিল খুঁজে পান এই লেখিকা। তিনি বলেন, ‘বাড়ি ছাড়ার নোটিশটি হাতে নিয়ে পরীমনি বলছে, আমি এখন কোথায় যাবো, কে আমাকে এই সময় বাড়ি ভাড়া দেবে, আমাকে কি তাহলে ঢাকা ছাড়তে হবে, দেশ ছাড়তে হবে! এরকম আমিও বলেছিলাম সেদিন! পরীমনির অসহায়তা আমি অন্তর দিয়ে অনুভব করছি। ’

‘তবে পরীমনির শত্রু যেমন কম নয়, অনুরাগী শুভানুধ্যায়ীও তেমন কম নয়, তারা এই দুঃসময়ে তার পাশে দাঁড়াবে, আমার বিশ্বাস। অসহায় আমার পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। প্রথমে রাজ্য, তারপর দেশ ছাড়তে আমাকে বাধ্য করা হয়েছিল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর