শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:২০ অপরাহ্ন

আদালত থেকে নথি গায়েব, ৫ বছরেও হদিস মেলেনি

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ৫৩ বার
আপডেট : শনিবার, ২১ মে, ২০২২

রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে মামলার নথি গায়েব হয়ে যায়। এরই মধ্যে কেটে গেছে পাঁচ বছর। এখন পর্যন্ত নথি পাওয়া যায়নি। সেই সঙ্গে মামলার রায়ও কার্যকর হয়নি। ২০১৭ সালে নাটোর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি সুরাহার জন্য আদালত এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদন করেছেন মামলার বাদী। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ বছরেও নথির হদিস মেলেনি।

ভুক্তভোগী ও মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৭ মে জমির গাছ কেটে নেওয়া এবং স্বামীকে মারধরের অভিযোগে নাটোর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন ফাতেমা বেগম। তিনি নলডাঙ্গা উপজেলার পূর্ব মাধনগর গ্রামের জিয়াদ আলী মোল্লার স্ত্রী। দুই বছর শুনানি শেষে মামলায় দুই জনকে কারাদণ্ড দেন আদালত। এর মধ্যে একজনকে ছয় মাসের অপরজনকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এরপর আপিল শুনানি শেষে দুজনকে তিন মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই আদালতে পরপর দুবার রিভিউ করেন আসামিরা। প্রথম রিভিউয়ে আগের রায় বহাল রাখা হয়। তবে দ্বিতীয় রিভিউয়ে শুনানি না করে অন্য আদালতে বিচার সম্পন্ন করার জন্য নথি পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। ওই সময়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন করেন তারা। এরই মধ্যে মামলার নথি গায়েব হয়ে যায়।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, স্বামীর ১১ শতক জায়গা থেকে মেহগনি, ফলন্ত আমগাছ, বরই গাছ, তালগাছ ও কলাগাছ কেটে নিয়ে যায় প্রতিবেশীরা। বাধা দিলে স্বামীকে মারধর করা হয়। গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ায় তার ৩৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় পূর্ব মাধনগর গ্রামের রহমান প্রামাণিকের ছেলে ওহিদুল, জহির ও রফিকসহ সাত জনকে আসামি করে মামলা করেন ফাতেমা।

আদালত সূত্র জানায়, শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নাটোর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান মুন্নী মামলার রায় দেন। রায়ে ওহিদুল প্রামাণিককে ছয় মাসের ও এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি জহির প্রামাণিককে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপর আসামিরা খালাস পান।

এরপর আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে একই বছর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আপিল করেন। একই সময়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন করেন। ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর শুনানি শেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রেজাউল করিম রায় দেন। ওই রায়ে রিভিশন ও আপিল একই সময়ে দুই আদালতে করায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায় বহাল রাখেন।

এদিকে, শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী আপিলের রায় দেন। রায়ে ওহিদুল এবং জহিরকে তিন মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে তাদের ১৫ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

আপিলের রায়ের পর ২০১৭ সালে আসামিরা পুনরায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন করেন। তখন আদালত শুনানি না করে মামলাটি ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠান।

ভুক্তভোগী ফাতেমা বেগম বলেন, আদালতে মামলার সর্বশেষ অবস্থার খোঁজ নিতে গেলে বেঞ্চ সহকারী মাহবুবুর রহমান এবং পিয়ন মোশাররফ হোসেন আমাকে জানান নথি পাওয়া যাচ্ছে না। নথি পেলে আমাকে জানানো হবে। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত মামলার শুনানি বা রায় কার্যকর হয়নি।তিনি বলেন, বিষয়টি নজরে আনার জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেছি। একই আবেদন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠিয়েছি। কিন্তু পাঁচ বছরেও সুরাহা হয়নি।

এ বিষয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমানে আমি জেলা জজ আদালতে অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত আছি। ওই মামলার নথি হারিয়ে গেছে, এটি সত্য। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও নথিটি পাওয়া যায়নি। আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাফিল আক্তার বলেন, এ বিষয়ে আবেদন পেলে নথি উদ্ধার করে বিচারকাজ শুরুর ব্যবস্থা করাতে পারবো। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকে আমাদের কাছে আবেদন করতে হবে। তবে আমার হাতে এই ধরনের কোনও আবেদন এখনও আসেনি।

নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মালেক শেখ বলেন, এটি ব্যতিক্রম ঘটনা। আমার ১৯ বছরের আইন পেশায় এমন ঘটনা দেখিনি। তিনি বলেন, আদালত থেকে কোনও নথি গায়েব হলে আদালতের রেকর্ড থেকে পুনরায় নথি তৈরি করে বিচারকাজ চালানো যায়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে গায়েব হওয়া নথি উদ্ধার করাও জরুরি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর