রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:২৪ পূর্বাহ্ন

আদালতের পর্যবেক্ষণ: গুলি করে লিয়াকত, বুকে লাথি মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে ওসি প্রদীপ

আদালত প্রতিবেদক / ৮৫ বার
আপডেট : সোমবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২২

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসি, ছয় জনের যাবজ্জীবন ও সাত জনকে বেকসুর খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। সোমবার বিকাল ৪টা ২২ মিনিটে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এই রায় ঘোষণা করেন। এ সময় ১৫ আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, সিনহার সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্যের বিবরণীতে জানা যায়, মেজর সিনহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন ওসি প্রদীপ। সিনহার হাতে পিস্তল আছে ভেবে গুলি করেন লিয়াকত। ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে এসে সিনহার বুকের বাঁ পাশে লাথি মারেন। এতে মৃত্যু হয় সিনহার। সিনহার হাতে পিস্তল আছে ভেবে লিয়াকত গুলি করার কথা স্বীকারও করেছেন।

সিনহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণার আগে বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলীর জবানবন্দির বরাতে এই পর্যবেক্ষণ দেন আদালত। একই সঙ্গে বরখাস্ত এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতের জবানবন্দির কথা উল্লেখ করে পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লিয়াকত আগে থেকেই নন্দদুলালকে বলেন সিনহাকে বহনকারী সিলভার কালারের গাড়ি থামাতে হবে। চেকপোস্টে সিনহার দুই হাত উঁচু ছিল। ওই সময় লিয়াকত গুলি করেন। ঘটনাস্থলে প্রদীপ আসার পর সিনহার উদ্দেশে বলেন, ‘অনেক কষ্টের পরে তোরে পাইছি’। এই বলেই বুকে লাথি মারেন। নন্দদুলাল বলেছেন, ওসি প্রদীপের ভয়ে জব্দ তালিকা তৈরি করেছেন। তিনি যেভাবে বলেছেন, সেভাবেই তৈরি করেছেন জব্দ তালিকা। রায়ের পর্যবেক্ষণে এসব কথা উঠে এসেছে।

বিচারক রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে বলেন, আমি মেজর সিনহা হত্যা মামলার বিভিন্ন ইস্যু ও খুঁটিনাটি বিষয় খোঁজার চেষ্টা করেছি। এতে এপিবিএনের তিন সদস্য দায়িত্বে ছিলেন। এই তিন জনই প্রথমে সিনহার গাড়িটি আটকানোর পর ছেড়ে দেন। পরে পুলিশ পুনরায় গাড়িটি আটকালো এবং ১০ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে গুলি করা হয়। এতে প্রমাণিত হয় সিনহা হত্যা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়ার শামলাপুরে এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করেছিল। সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া সিনহা ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য সেসময় প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। ওই কাজে তার সঙ্গে ছিলেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র‌্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্ত শেষে র‌্যাব ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। সেই মামলায় আজ দুজনকে ফাঁসি, ছয় জনকে যাবজ্জীবন ও সাত জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ ও বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলী। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাগর দেব, রুবেল শর্মা, পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দীন। মামলা থেকে খালাস পাওয়া সাত জন হলেন, এপিবিএনের এসআই শাহজাহান আলী, কনস্টেবল মো. রাজীব, মো. আব্দুল্লাহ, পুলিশের কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, লিটন মিয়া ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর