শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:৫৭ অপরাহ্ন

আটা-ময়দার বাজার অস্থির: খুচরা বিক্রেতারা সুযোগ নিচ্ছেন

ভয়েসবাংলা প্রতিবেদক / ১৩৩ বার
আপডেট : শনিবার, ২১ মে, ২০২২

ভারতের গম রফতানির সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই আটা বা ময়দার বাজার অস্থির হওয়ার সুযোগ নেই দেশে। সোমবার (১৬ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের ঢাকা দূতাবাস জানিয়েছে, ভারত থেকে গম রফতানিতে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রতিবেশীদের জন্য নয়। এরই মধ্যে গম ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত যে চুক্তিগুলো হয়েছে, সেটিও এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে।

এ বিষয়ে ভারতের বাণিজ্য দফতরের সচিব বি ভি আর সুব্রহ্মণ্যম রবিবার (১৫ মে) সেদেশের সাংবাদিকদের বলেছেন, খাদ্যসংকটে থাকা দেশগুলোতে সরকারি পর্যায়ে গম রফতানির সুযোগ থাকবে। আগের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৪৩ লাখ টন গম রফতানির অনুমতিও দেবে ভারত সরকার।

উল্লেখ্য, তীব্র দাবদাহের প্রভাবে উৎপাদন হ্রাস ও স্থানীয় বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে গম রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত সরকার। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) গত শুক্রবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে ওই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় জানিয়ে সোমবার রাতে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাস।

এদিকে ভারতের গম রফতানি সংক্রান্ত খবর ছড়াতেই দেশের বাজারে গম সংশ্লিষ্ট পণ্য আটা, ময়দা ও সুজির দাম বেড়েছে কেজিতে ৬ থেকে ৮ টাকা। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার পৃথকভাবে জানিয়েছেন, ভারতের এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের গমের বাজারে প্রভাব ফেলবে না।

খাদ্যমন্ত্রী গত রবিবার সিলেটের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ভারত বাংলাদেশে গম রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। এমনিতে গম আমদানি করা হতো ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে। সেখানে যুদ্ধের কারণে সম্প্রতি ভারত থেকে তিন লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়েছে। পরেও ভারত থেকে আমদানি করা হবে। গম রফতানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জন্য নয়।

বাণিজ্যমন্ত্রী সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখন গমের দাম বেড়েছে। তবে চাহিদা মেটাতে ব্রাজিলসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও গম আনা হবে। টিপু মনুশি বলেছেন, ভারত প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের গম দেবে। তবে সরকার আরও পাঁচটি দেশ থেকে আমদানির পথ খুঁজছে। ইতোমধ্যে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে গম আমদানির বিষয়ে কথা হয়েছে। বুলগেরিয়ার সঙ্গেও চুক্তি পর্যায়ে পৌঁছানো গেছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।

১৬ মে ভারতীয় দূতাবাস যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে দুটি ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ রাখা হয়েছে। একটি হলো ১২ মে’র আগে গম আমদানির জন্য খোলা ঋণপত্র (এলসি) বাতিলযোগ্য নয়। তার বিপরীতে গম রফতানি করা যাবে।সরকারি-বেসরকারি দুভাবেই ১২ মের আগে চুক্তির বিপরীতে সম্পন্ন হওয়া এলসির বিপরীতে চাহিদাকৃত গম রফতানি করা যাবে। এ ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হলে আমদানিকারকরা ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা নিতে পারবেন।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, দেশে বছরে গমের চাহিদা প্রায় ৮৫ লাখ টন। নিজস্ব উৎপাদন ১০ লাখ টনের বেশি নয় এবং আমদানির ৯০ ভাগই হয় বেসরকারিভাবে। গত তিন মাসে বেসরকারি পর্যায়ে গম আমদানির ৬৩ শতাংশই এসেছে ভারত থেকে। যার পরিমাণ ২৭ লাখ ১৫ হাজার টন। বিশ্বে শীর্ষ গম রফতানিকারক হলো রাশিয়া, ইউক্রেন, চীন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, বুলগেরিয়া ও ভারত। চীনে এ বছর গমের উৎপাদন ভালো হয়নি। রাশিয়া ও ইউক্রেন রফতানি বন্ধ রেখেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে আমদানি হওয়া মোট গমের ৪৫ শতাংশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে, ২৩ শতাংশ কানাডা থেকে, ১৭ শতাংশ ভারত থেকে এবং বাকিটা অন্য কয়েকটি দেশ থেকে এসেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৬ মে পর্যন্ত সরকারের গুদামে ১ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন গম মজুত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আটা, ময়দা, সুজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা জানিয়েছেন, ভারতের গম রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর দেশের খুচরা বাজার অস্থির হয়েছে শুনেছি। তবে কোম্পানি থেকে এখনও দাম বাড়ানো হয়নি। খুচরা বিক্রেতারা হয়তো সুযোগ নিচ্ছেন। ভারত যে স্টেটমেন্ট দিয়েছে সেটি একটি আশার দিক। যদি তাই হয়, তবে বড় সমস্যা হওয়ার কথা নয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর