সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে ডিজিটাল যন্ত্রপাতিসহ আরও বেশি প্রযুক্তিগত সুবিধা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ উদ্বোধনের সময় তিনি এই আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন কেউ বই পড়তে চায় না। তাই হাঁটতে-চলতেও যাতে শুনতে পারে এমন অডিও বই করা উচিত, ডিজিটাল ভার্সন করা উচিত। অনলাইনে লাইব্রেরির সুবিধা নেওয়া যেতে পারে।
অমর একুশে বইমেলা-২০২৩ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বেলা ৩টায় শুরু হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২’ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক দিন বইমেলায় আসতে পারিনি। স্কুলজীবন থেকে প্রতিবার বইমেলায় আসতাম। সারা দিন ঘুরঘুর করতাম। এখন তো (প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর) অনেক বিধিনিষেধ। দুই বছর তো সরাসরি আসতেও পারিনি। আজ দীর্ঘদিন পর এসে খুব ভালো লাগছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেয়েছে। এর ফলে আমাদের ওপর বাড়তি দায়িত্ব এসে গেছে। বিশ্বদরবারে বাংলা ভাষার বিস্তার বাড়াতে হবে। এর জন্য আরও বেশি করে অনুবাদ করতে হবে। এখন বছরে একটা দুইটা এই অনুবাদ হয়। এটা বাড়াতে হবে। মানসম্মত ইংরেজিতে, বিভিন্ন ভাষায় এই অনুবাদ হতে হবে। আজানের জন্য বক্তব্যের মাঝখানে বিরতি নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাহিত্য মেলার আয়োজন করেন। জেলায় উপজেলায় বইমেলার আয়োজন করতে পারেন। তরুণদের সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা এবং খেলাধুলায় আগ্রহী করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমি যতবার ভাষণ দিয়েছি জাতিসংঘে, বাংলায় ভাষণ দিয়েছি। তিনি সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ আরও বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে বলেন, অনেক দেশেই বইমেলা হয়। সেখানে আমাদের পক্ষ থেকেও যদি অংশগ্রহণ থাকে। আমাদের ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে যত বেশি মানুষ জানতে পারবে তত ভালো। আদালতে বাংলায় রায় দেওয়া শুরু হয়েছে। সব ক্ষেত্রে আমাদের এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত।…..অর্থনৈতিক চিন্তার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চিন্তাও করা উচিত। ১৯৪৮-এ যে সংগ্রামের শুরু….. ভাষার অধিকার থেকেই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার সুফল মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে, ভাষা সাহিত্যেরও উৎকর্ষ ঘটাতে হবে। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এই সময়ে অর্থনীতিতে, সাহিত্য চর্চায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুসাহিত্যটা আরও বেশি দরকার। আকর্ষণীয় বই দরকার।
উল্লেখ্য, এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য- ‘পড়ো বই, গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। তবে দর্শক, ক্রেতা ও পাঠকরা রাত সাড়ে ৮টার পরে মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারবেন না। সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দুপুরে খাবার ও নামাজের জন্য একঘণ্টা বিরতি থাকবে।
এবারের মেলায় ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি মাঠে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া এ বছর মোট ৩৮টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছর ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৪টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৫৩টি স্টল রয়েছে, যা ২০২২ সালে ছিল ১২৭টি, ২০২১ সালে ১৪০টি এবং ২০২০ সালে ১৫৫টি। অন্যদিকে যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বইমেলা ভেন্যু ও এর আশপাশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। মেলার ১১ লাখ বর্গফুট জায়গার প্রতিটি স্থান সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। এর আগে ২০২০ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারণে ঐতিহ্যবাহী বইমেলা শুরু হয় ২ ফেব্রুয়ারি। বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২১ সালে ১৮ মার্চ এবং ২০২২ সালে বইমেলা শুরু হতে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিলম্ব হয়।