শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ১৮ বছর, বিরামহীন এগিয়ে যাওয়ার ১৩ বছর
করোনার মতো মারাত্মক দুর্যোগ মোকাবিলা করে সরকার আরও একটি বছর পার করলো আজ। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের বিরামহীন ১৩ বছর পার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পার হলো ১৮ বছর।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল এবং এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ এ সময়ে অর্জন অনেক। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গঠন করা হয় ৪৭ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভা। গত ১৩ বছরে অসাধারণ সব সাফল্যের মধ্যে অন্যতম ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। বিচারের পর রায় কার্যকর করার মাধ্যমে ২০০৮ সালের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিও পূরণ করলো সরকার।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৩ বছরে সরকারের আরেকটি বড় অর্জন দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত করা। করোনার ছোবল মোকাবিলা করে এখনও এগিয়ে চলছে দেশের অর্থনীতি। যার কারণে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশকে বলছে ‘এশিয়ার উদীয়মান বাঘ’। নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তিও বর্তমান সরকারের আরেক অসামান্য সাফল্য। মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি হবে ২০২৪ সালে। কোভিড-১৯ মহামারির বিরূপ প্রভাবেও ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দুই হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছিল। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও রেকর্ডকে ছাড়িয়ে ৪৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৬০ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছিল ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার।
অন্যদিকে, বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী দেশে মোবাইল ফোনের সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ১৮ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার। ইনটারনেট ব্যবহার করছে ১২ কোটি ৬৬ লাখ মানুষ। চলমান সরকারের তিন বছরপূর্তির আগ মুহূর্তে দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮০৬ জন শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে যাচ্ছে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০টি বিনা মূল্যের বই।
জানা গেছে, মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নও সরকারের অদম্য সাহসের ইঙ্গিত দেয়। চলতি বছরের জুনে খুলে দেওয়া হতে পারে নিজস্ব অর্থায়নে বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ২০১৯ সালে এই সেতুর কাজের অগ্রগতি হেলিকপ্টারে দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২১ সালের শেষ দিন ভোরে বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ওই সেতুর ওপর প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটেছেন তিনি। আরেক মেগা প্রকল্প ঢাকা মেট্রোরেলও রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচলের জন্য প্রস্তুত। চলতি বছরের ডিসেম্বরের কোনও একদিন তা চালু হবে। ডিসেম্বরেই চালু হচ্ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল।
গত এক দশকে বাংলাদেশ স্থিতিশীল জিডিপি প্রবৃদ্ধিও অর্জন করেছে। ২০১৯ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। করোনা মহামারিতেও এ প্রবৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় ভালো ছিল। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এ বছর প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুর্দান্ত সফলতা বাংলাদেশের। বিশ্বনেতারা জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। নারীর ক্ষমতায়নে অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ এবং ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। আইসিটি খাতে সরকারের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হলো—‘উইটস এ গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৯’, ‘ডিসিডি এপ্যাক অ্যাওয়ার্ড-২০১৯’ এবং ‘গভর্নসাইডার ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড-২০১৯’। দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানের জন্য ‘সাউথ-সাউথ পুরস্কার’ পেয়েছেন শেখ হাসিনা। ২০১২ সালে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল অব দ্য সিতে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালে জাতিসংঘের ট্রাইব্যুনালে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত আইনি লড়াইয়ে জয় পাওয়াটাও আওয়ামী লীগ সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্য। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়ায় বিশ্ব সম্প্রদায় প্রশংসা করেছে বেশ। এ সিদ্ধান্তের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘চ্যানেল-৪ নিউজ’ ২০১৭ সালে শেখ হাসিনাকে ‘মানবতার জননী’ আখ্যা দিয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন অনেক উন্নত দেশ যখন হিমশিম খাচ্ছিল, সেখানে বাংলাদেশ সরকার অর্থনীতির গতিপথ ঠিক রাখতে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করেছে। লাখ লাখ দরিদ্রকে সহায়তা দিয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতা বাড়িয়েছে এবং উন্মুক্ত বাজারে কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করেছে।
২ জানুয়ারি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ উত্তরণের স্বীকৃতি প্রদান আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করেছে বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। স্বাধীনচেতা হলে অনেক বাধা আসে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই অনুষ্ঠানে বলেন, ‘চলার পথ যত অন্ধকারাচ্ছন্নই হোক, যত বন্ধুরই হোক, আমরা থেমে থাকবো না। অন্তত আমি এই প্রতিজ্ঞা করছি, থেমে থাকবো না।