বাজে ফিল্ডিংয়ে ম্যাচ হারলো বাংলাদেশ
ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে মোমেন্টামটা ঠিকই এনে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে ম্যাচ জেতালেন এমনই দুজন। যাদের ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন লিটন দাস! সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচ ৫ উইকেটে হেরে আসল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করেছে বাংলাদেশ।
সাকিব নবম ওভারে পাথুম নিসাঙ্কা ও আভিষ্কাকে ফিরিয়ে ম্যাচের রাশ টেনে ধরেছিলেন। সাইফউদ্দিন ওয়ানিন্দুকে ফিরিয়ে বিপদ বাড়িয়ে তুলেছিলেন লঙ্কানদের। কিন্তু বোলাররা ছন্দ ধরে রাখতে না পারায় এমন সময়ে চারিথ আসালাঙ্কার ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয় রাজাপাকশের কার্যকর ইনিংস। এই জুটি ভাঙার সুযোগও ছিল। তাতে হয়তো ম্যাচের গতি-প্রকৃতি ভিন্ন হতো।
১২.৪ ওভারে আফিফের বলে রাজাপাকশের ক্যাচ ফেলে দেন লিটন। ক্যাচ মিস হওয়ায় সেটি আবার চারও হয়ে যায়! ১৪.৩তম ওভারে আবারও একই ভুল করেন তিনি। লিটন এবার ক্যাচ ফেলে দেন আসালাঙ্কার! তাতেই যেন নির্ধারিত হয়ে যায় ম্যাচের গতিপথ। জীবন পাওয়া এই দুজনের ৫২ বলে ৮৬ রানের ঝড়ো জুটি ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় বাংলাদেশকে।
১৭২ রানের লক্ষ্য ছুড়ে বাংলাদেশের শুরুটাও হয়েছিল প্রত্যাশা মতো। তাসকিনের বদলে সুযোগ পাওয়া নাসুমের ঘূর্ণিতে চতুর্থ বলেই পরাস্ত হন পেরেরা। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন এক রানে। এরপর অবশ্য চারিথ আসালাঙ্কার আগ্রাসী ব্যাটিংই স্বস্তি ফেরায় লঙ্কান শিবিরে। সঙ্গী হন পাথুম নিসাঙ্কাও! দুজনের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতেই তারা তুলে ফেলে ৫৪ রান। আসালাঙ্কা ১৮ বলে তোলেন ৩২ রান। নিসাঙ্কা ১৫ বলে করেন ১৯। নবম ওভারে সাকিব বল করতে এসে সাজঘরে পাঠান নিসাঙ্কাকে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। ফেরেন ২৪ রানে। দুই বল বিরতি দিয়ে বোল্ড করেন নতুন নামা আভিষ্কা ফার্নান্ডোকেও!
চাপে পড়ে যাওয়া লঙ্কানদের ব্যাটিংয়ে প্রাণ ফেরাতে তারপর নেমেছিলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। আক্রমণাত্মক এই ব্যাটারকে হাতই খুলতে দেননি সাইফউদ্দিন। এই ব্যাটার ৬ রানে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। তার পরেও একপ্রান্ত আগলে ম্যাচ বের করে নেন আসালাঙ্কা। ৪৯ বলে ৫টি চার ও ৫টি ছয়ে অপরাজিত থাকেন ৮০ রানে। ম্যাচসেরাও হন তিনি। জীবন পাওয়া ভানুকা রাজাপাকশেও কম ছিলেন না। ফেরার আগে ৩ চার ও ৩ ছয়ে ৩১ বলে ৫৩ রান করেছেন। নাসুম তাকে বোল্ড করলেও ততক্ষণে জয়ের সুবাস পেতে থাকে লঙ্কানরা। শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করে ১৮.৫ ওভারে। নাসুম ২৯ রানে নিয়েছেন দুই উইকেট। ১৭ রানে দুটি নেন সাকিব আল হাসানও। একটি নিয়েছেন সাইফউদ্দিন। এর আগে টস হেরে ৪ উইকেটে ১৭১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে দারুণ এক ইনিংস খেলেন নাঈম শেখ। মিডল অর্ডারে আলো ছড়ান মুশফিকুর রহিম। এই দুই ব্যাটারের হাফসেঞ্চুরিতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। ৩২ বলে ফিফটি পেয়েছেন মুশফিক, আর নাঈম মাইলফলকটি স্পর্শ করেন ৪৪ বলে। তার পরেও শুরুটা মন্দ ছিল না। লিটন দাস ও নাঈম মিলে উদ্বোধনী জুটিতে যোগ করেন ৪০ রান। তবে লিটনের (১৬) পর সাকিব আল হাসান (১০) দ্রুত ফিরে গেলে চাপ তৈরি হয়েছিল। এরপরই প্রতিরোধ গড়ে খেলেন নাঈম-মুশফিক। দারুণ ব্যাটিংয়ে নিজের সঙ্গে দলের রান বাড়িয়ে নেন তারা।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি পূরণ করে নাঈম ৫২ বলে ৬ বাউন্ডারিতে করেন ৬২ রান। আর দীর্ঘদিন পর টি-টোয়েন্টিতে ফর্মে ফিরে মুশফিক ৩৭ বলে ৫ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৫৭ রানে। তার সঙ্গে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। করেন ১০ রান। শ্রীলঙ্কার তিন বোলার চামিকা করুণারত্নে, বিনুরা ফার্নান্ডো ও লাহিরু কুমারা প্রত্যেকে নিয়েছেন একটি করে উইকেট।