তালেবানের সঙ্গে এখনই কূটনৈতিক সম্পর্কে যাবে না বাংলাদেশ’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে আফগানিস্তানের সশস্ত্র সংগঠন তালেবানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করলেও বাংলাদেশ এই মুহূর্তে দেশটির বৈধ সরকারের সঙ্গেই কাজ করবে। বর্তমানে আফগানিস্তানে বাংলাদেশের কোনও মিশন নেই তাই এই মুহূর্তে তালেবানের সঙ্গে কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য নেই।
শনিবার (৩১ জুলাই) বিকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানান। তালেবানের উত্থানের পর বিভিন্ন দেশ তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে, বাংলাদেশ এরকম কোনও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আফগানিস্তানে আমাদের কোনও মিশন নেই। সেখানে কী হচ্ছে, আমাদের কাছে সে বিষয়ে ফাস্টহ্যান্ড কোনও তথ্যও নেই। আমরা গণমাধ্যম ও বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের কাছ থেকেই তথ্য পাচ্ছি। আমরা সকল শান্তিপ্রিয় মানুষ ও পক্ষকে সবসময় স্বাগত জানাই।’
ভৌগলিক কারণে আফগানিস্তানের অস্থিরতা যেকোনও দেশকে ভাবিয়ে তোলে। তাই তালেবানের উত্থানে তাদের হাতে রাখার চেষ্টা করছে বিভিন্ন দেশ। বিশেষ করে ভারত, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ আফগানিস্তানের সশস্ত্র সংগঠন তালেবানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য প্রক্রিয়া শুরু করেছ। তালেবান নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর এই তৎপরতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটিকে ঘিরে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নানা ধরনের তৎপরতা শুরু হয়েছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবমুক্ত আফগানিস্তানে নিজেদের অবস্থান তৈরি ও স্বার্থ হাসিলের পথ খোঁজার চেষ্টা শুরু করেছে।
অন্যদিকে, আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারও ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দেন-দরবার শুরু করেছে। আবার তালেবানদের সঙ্গেও বিভিন্ন দেশ এরইমধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। এই যোগাযোগ অতীতেও ছিল তবে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার পর বিভিন্ন দেশ তালেবানের উপর তাদের প্রভাব, নিয়ন্ত্রণ, সম্পর্ক ও যোগাযোগ সামনে আনছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে দোহায় আন্ত–আফগান শান্তি বৈঠক হয়। সেখানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করও ছিলেন। তবে সেটি এতদিন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি ভারত। এবছরের জুলাইয়ে তারা তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা স্বীকার করে। আফগানিস্তানে তাদের বিনিয়োগ রয়েছে বলে এই সম্পর্ক উন্নয়নের যুক্তি দেখিয়েছে দিল্লি। এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন উগ্র সংগঠন ও কাশ্মীর কেন্দ্রিক জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণের জন্যও দেশটি আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য জোর দিচ্ছে বলে দাবি করেছে।
ভারত তালেবানের সঙ্গে প্রকাশ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ঘোষণা দেওয়ার পর চীন বসে থাকেনি। তারাও প্রকাশ্যে তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ঘোষণা দিয়েছে। গত ২৮ জুলাই চীনের উপকূলীয় তিয়ানজিন শহরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে বৈঠক করেন তালেবান প্রতিনিধিরা। বৈঠকের ছবিও প্রকাশ করে দেশটি। তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বারাদারকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক শেষে তালেবানকে আফগানিস্তানের অন্যতম রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে ঘোষণা দেয় চীন।
ভারত ও চীনের এই কূটনৈতিক সম্পর্ককে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তালেবান চাচ্ছে, তারা যদি কখনও ক্ষমতা দখল করে নেয়, তখন তাদের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের স্বীকৃতি লাগবে, তাই তারা এখনই প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করছে।
অপরদিকে, রাশিয়া আফগানিস্তানের শান্তিচুক্তি এগিয়ে নিতে কাজ করছে। চীন ও ভারত তালেবানকে শান্তি চুক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ারও অনুরোধ করেছে। তালেবান ভারত ও চীনকে আশ্বস্ত করেছে, তাদের ভূমি ব্যবহার করে ওই দেশ দুটির কোনও ক্ষতি হতে দেবে না।
বাংলাদেশ এরকম কোনও কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় যাবে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রক্রিয়া এখনও বহুদূর। আমাদের নীতি হলো- আমরা বর্তমান বৈধ আফগান সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাবো।’