শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ১২:২৫ পূর্বাহ্ন

ক্ষমা চেয়েও শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরাতে পারছেন না কুয়েট শিক্ষার্থীরা

রিপোর্টার / ১০ বার
আপডেট : বুধবার, ৭ মে, ২০২৫

কখনো খোলা চিঠি, কখনো কাছে গিয়ে মিনতি, আবারও উপাচার্যের মাধ্যমেও বারবার ক্ষমা চেয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে কুয়েট শিক্ষকদের কাছে। কিন্তু নাছোড়বান্দা শিক্ষক সমিতির নেতারা— ক্লাসে তারা ফিরবেন না। তাদের চাপে ক্লাসে ফিরতে পারছেন না অন্য শিক্ষকরাও।

শিক্ষক সমিতির নেতাদের দাবি, গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত ঘটনায় শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত না করা পর্যন্ত কেউ ক্লাসে ফিরবেন না। এ ছাড়া শিক্ষকদের সাইবার বুলিং, অবমাননা বা গুজবের সঙ্গে জড়িত দোষীদেরও সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন জানান, ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে আছেন অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক। তারা ঘটনাগুলোর তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করছেন এবং চিহ্নিত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিবেদন প্রস্তুত করছেন।

কুয়েট শিক্ষকদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় বিচার চেয়ে ৭ দিনের আলটিমেটাম

এ ছাড়া কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম বলেন, যতদিন পর্যন্ত দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হবে, ততদিন কোনো শিক্ষক ক্লাস বা পরীক্ষা নেবেন না।

তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে থাকা মাত্র ১৩ জন শিক্ষক গোটা শিক্ষকদের জিম্মি করে রেখেছেন। তাদের চাপে অন্যান্য শিক্ষকরা উপাচার্যের সঙ্গে মিটিং করতেও ভয় পাচ্ছেন। সদ্য সাবেক উপাচার্যের আমলে যেসব শিক্ষক বিভিন্ন সুবিধাজনক পদগুলো দখল করে রেখেছিলেন ও যাদের সুপারিশে অন্যান্যরা চাকরি পেয়েছিলেন তারাও এই উসকানিতে জড়িত।

কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. মো. হযরত আলী

নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, বর্তমান শিক্ষক সমিতি সাবেক উপাচার্যের পকেট কমিটি হিসেবে পরিচিত। তারা কোনো নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। বরং সাবেক উপাচার্য তাদের দলীয় শিক্ষকদের বিভিন্ন পদ ভাগ করে দিয়ে শিক্ষক সমিতি পুনর্গঠন করেছিলেন। পরে তাদের বিভিন্ন আর্থিক কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারা সেখানে আর্থিক অনিয়ম করেছেন, যা ঢাকতে এখন শিক্ষার্থীদের ওপর দায় চাপিয়ে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, তাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল উপাচার্যের বিরুদ্ধে, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নয়। দুই মাসের বেশি সময় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় তারা চান, দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসুক।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, আমরা এরই মধ্যে আমাদের আচরণের জন্য শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমরা কারও সঙ্গে শত্রুতা চাই না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আবারও শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত।

তবে কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার বলেন, গত ৪ এপ্রিল ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত ছিল আগের ভিসির সিন্ডিকেটের। সরকার তাকে অপসারণ করেছে। নতুন ভিসি ক্লাস চালু করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মাত্র একদিন হলো যোগদান করেছেন। এরই মধ্যে অনেক কাজ এগিয়ে নিয়েছেন, দফায় দফায় বৈঠক চলছে। আশা করি সবকিছু মিটমাটের মাধ্যমেই দ্রুত ক্লাস চালু হবে।

কুয়েট ভিসির দুর্নীতিতে জড়িত শিক্ষক সমিতি, বিএনপি নেতারাও

এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদল ও বহিরাগত বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ঘটে। তাতে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। সেই সময় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতা ও ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টার মদতদাতার অভিযোগ এনে সাবেক উপাচার্য মোহাম্মদ মাসুদের পদত্যাগের দাবি করে আন্দোলন করা হয়।

দীর্ঘ ৫৮ দিনের আন্দোলন আর ৬৫ ঘণ্টার অনশনের পরে ২৩ এপ্রিল উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। ২৫ এপ্রিল উপাচার্য মুহাম্মদ মাসুদ ও উপউপাচার্য শেখ শরীফুল আলমকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে অন্তর্বর্তী ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে কুয়েটের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সংকট নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর