মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৪ পূর্বাহ্ন

মার্চে নির্যাতনের শিকার ৪৪২ জন নারী ও কন্যা শিশু

রিপোর্টার / ১ বার
আপডেট : সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

বিদায়ী মার্চ মাসে মোট ৪৪২ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১২৫ জন কন্যাসহ ১৬৩ জন। তার মধ্যে ১৮ জন কন্যাসহ ৩৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে, দুইজন কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, দুইজন কন্যা ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছে। এছাড়াও ৫৫ জন কন্যাসহ ৭০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া বেগম শান্তি।

সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্যে রাবেয়া বেগম শান্তি বলেন, বর্তমানে নারীর প্রতি বিদ্বেষ, বিদ্বেষমূলক আচরণ ও ভাষা নারীর স্বাধীন চলাফেরাকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছে। যেখানে সেখানে নারীর পোশাক, নারীর সাজসজ্জা, নারীর চলাফেরা নিয়ে প্রকাশ্যে অপমান করা হচ্ছে। গণপরিসরে নারীকে নানাভাবে শারীরিক ও মৌখিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে নারীর প্রতি ঘৃণা ছাড়ানো হচ্ছে, নারীকে বহুভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং বাধাহীনভাবেই তারা সমাজে এসব অপকর্ম সাধন করতে পারছে, যা তাদের আরও বেপরোয়া করে তুলছে। নারীর অগ্রগতিকে বাধা দেওয়ার লক্ষ্যে ভীতির পরিবেশ তৈরির জন্য এ ধরনের অপচেষ্টা করা হচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি যে, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মাত্রা পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। ফলে মাত্রা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে। ১৮ বছরের নিচে কন্যা শিশুদের ওপর অন্যদিকে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাসের ক্ষেত্রে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সম্পাদক বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা কারাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি (আবরার ফাহাদ হত্যা) পালিয়ে যাচ্ছেন, শিশু ধর্ষণের আলোচিত ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন (দিনাজপুরের ঘটনা)। সারা দেশে ছিনতাই সহ অপহরণ, খুন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে নারীসহ সব মানুষ নিরাপত্তাহীন ও বিপন্ন বোধ করছে।

সাম্প্রতিক নারীবিদ্বেষী অপসংস্কৃতির প্রভাব এ দেশের নারী জাগরণের পথিকৃৎ রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতিও পরিলক্ষিত হয়। যেমন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতিকৃতিতে কালি লেপন, রংপুরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন। আমরা মনে করি রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সমাজের অচলায়তন ভেঙে নারীদের আলোর পথের সন্ধান দিয়েছেন। তিনি সমাজের অবরোধ ভাঙার জন্য, নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য, নারীর মুক্তির জন্য আজীবন যে সংগ্রাম করে গেছেন তারই ফলশ্রুতিতে আজ লাখ লাখ নারী শিক্ষা, খেলাধুলা, জ্ঞান চর্চাসহ বিভিন্ন পেশায় এসে সমাজ ও দেশের জন্য অবদান রাখতে পারছে। তাকে অবমাননা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা ও বিদ্বেষ ছাড়ানোর মাধ্যমে নারী সমাজের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করে নারী সমাজকে গৃহকোণে ঠেলে দেওয়ার বার্তা ছাড়ানোর যে অপচেষ্টা করা হচ্ছে বাংলাদেশের নারী সমাজ তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং সবাইকে এই বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, সুফিয়া কামালসহ নারী জাগরণের পথিকৃৎদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার জোর দাবি জানাই।

রাবেয়া বেগম শান্তি বলেন, আপনারা জানেন যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে নারীর জন্য ৬০% কোটা বহাল ছিল। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ খসড়া প্রজ্ঞাপনে এই বিধান রোহিত করা হয়েছে। যা কিনা নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী শিক্ষাকে অগ্রসর করার জন্য অসঙ্গতিপূর্ণ। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫ এ নারী কোটা এখান রাখার দাবি জানায়।

বর্তমান সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন। নারী সমাজের দীর্ঘ দিনের দাবি দাওয়া নিয়ে নারী সমাজের পক্ষ থেকে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বিভিন্ন সুপারিশগুলো প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রদান করেছেন। যেখানে এ দেশের গত পাঁচ দশকের নারী আন্দোলনের অবাস্তবায়িত মূল দাবিগুলোর প্রতিফলন ঘটেছে, যা নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি অতীতের মতো সুপারিশ পেশের সঙ্গে সঙ্গে মৌলবাদী, নারী বিদ্বেষী গোষ্ঠী ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীর অধিকার এবং নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেছে। আমরা আশা করবো এই অপতৎপরতা, অপকৌশল রোধে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর মানবাধিকার রক্ষা করার ক্ষেত্রে সরকার, সব রাজনৈতিক দল ও সমাজ এগিয়ে আসবে।

সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে উচ্ছৃঙ্খল জনতা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। বিবেক বা যুক্তির জায়গায় মনোজগতে স্থান নিয়েছে প্রতিহিংসা। এই উচ্ছৃঙ্খল জনতা শুধু জনসমক্ষে প্রতিপক্ষকে হেনস্তা, মারধর ও অপমান করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। গণপিটুনির মাধ্যমে সবার সামনে প্রকাশ্যে হত্যা করা হচ্ছে মানুষকে, এর সঙ্গে চলছে লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ধ্বংসের খেলা।

এছাড়া শিক্ষার্থীরাও দলে দলে বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে, দাবি আদায়ের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। শিক্ষাঙ্গনেও বিভিন্নভাবে শিক্ষকদের অবমাননা, জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা, এবং পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করছে না। এই হেনস্তা থেকে নারী শিক্ষকরাও রেহাই পাচ্ছেন না। সারা দেশে সৃষ্ট এই ধরনের ঘটনাগুলো জন্য মহিলা পরিষদ গভীরভাবে দুঃখিত এবং উদ্বিগ্ন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর