রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন

সিন্ধু নদীর পানি নিয়ে কেন এত দুশ্চিন্তায় পাকিস্তান?

রিপোর্টার / ৩ বার
আপডেট : শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়ছেই। এর মধ্যে সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। পালটা ব্যবস্থা হিসেবে পাকিস্তান স্থগিত করেছে ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি। এ পরিস্থিতিতে দুপক্ষের উত্তেজনা এখন চরমে। বলা যায়, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে এখন রীতিমতো যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

গত মঙ্গলবার ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হওয়ার পর ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) স্থগিত করেছে। পাকিস্তান একে যুদ্ধ ঘোষণার মতোই দেখছে। কিন্তু সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন চুক্তিকে কেন এত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে পাকিস্তান? দেশটির জন্য কি এটি জীবন-মরণ প্রশ্ন?

পাকিস্তানের প্রধান কৃষিভিত্তিক অঞ্চল পাঞ্জাব। এখানকার মাঠ-ঘাট, খেত-খামার বাঁচিয়ে রাখে সিন্ধু ও এর শাখা নদীগুলোর পানি। পুরো দেশের খাদ্য উৎপাদনের বড় অংশ আসে এই এলাকা থেকে। পাঞ্জাবের সেচব্যবস্থার প্রায় ৮০ শতাংশ নির্ভর করে সিন্ধু চুক্তির অধীনে পাওয়া পানির ওপর। ভারত যদি পানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে শুকিয়ে যাবে এই এলাকা। পাকিস্তানের খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি ব্যবস্থা আর অর্থনীতি— সব ধসে পড়বে।

সিন্ধু চুক্তি হয়েছিল ১৯৬০ সালে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের মধ্যে সই হয় এই চুক্তি। ৯ বছর ধরে আলোচনার পর তারা এই চুক্তির ধারাগুলো নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেন।

চুক্তি অনুযায়ী, পূর্ব দিকের তিনটি নদী— বিপাশা, ইরাবতী ও শতদ্রুর ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে ভারতের। অন্যদিকে পশ্চিম দিকের তিন নদী— সিন্ধু, চন্দ্রভাগা ও বিতস্তার পানি ব্যবহার করতে পারবে পাকিস্তান। পানির নিরিখে সিন্ধু এবং তার শাখা ও উপনদী মিলিয়ে ৩০ শতাংশ ভারত ও ৭০ শতাংশ পাবে পাকিস্তান।

পাশাপাশি ভারত পশ্চিম দিকের নদীগুলোর পানি স্থানীয় সেচ, বিদ্যুৎ, মাছ চাষ, নৌ চলাচলের জন্য ব্যবহার করতে পারবে বলেও চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।

চুক্তি যতই থাকুক, গত কয়েক বছরে ভারতের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। দেশটি মনে করে, পাকিস্তান একদিকে শান্তির কথা বলে, আরেকদিকে সন্ত্রাসবাদে মদত দেয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পরও নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘রক্ত আর পানি একসঙ্গে বইতে পারে না।’ সেই থেকেই সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের মধ্যে আলোচনা চলে আসছিল।

২০২৩ সালে ভারত প্রথম চুক্তি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব নিয়ে পাকিস্তানকে নোটিশ পাঠায়। সাড়া না পেয়ে আবার নোটিশ যায় ২০২৪ সালে। গত বছর ৩০ আগস্ট ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয় পাকিস্তানকে। তাতে বলা হয়, এই চুক্তির মৌলিক কিছু পরিবর্তন দরকার। ভারতের ভাষায়, সন্ত্রাসবাদের প্রভাব পানি চুক্তির ওপর পড়ছে।

অবশেষে গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিযোগ এনে ভারত সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করে। ভারত বলছে, ওই হামলায় মদত ও সহযোগিতা দিয়েছে পাকিস্তানিরা। তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পর্যটক হত্যাকাণ্ড ছিল ভারতের পরিকল্পিত ঘটনা।

পাকিস্তান তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, পেহেলগাম হামলার পর সিন্ধু নদীর পানি বন্ধ করা তাদের কাছে যুদ্ধ ঘোষণার মতো। এর জের ধরেই পাকিস্তান শিমলা চুক্তি স্থগিত করে। এই শিমলা চুক্তিতেই কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা তৈরি হয়েছিল।

শিমলা চুক্তি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। ১৯৭১ সালে যুদ্ধে পরাজয়ের পরই পাকিস্তান এই চুক্তিতে সই করে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যতে সব দ্বিপাক্ষিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং যুদ্ধের পথ এড়িয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া।

শিমলা চুক্তির সবচেয়ে বড় দিক ছিল নিয়ন্ত্রণরেখা প্রতিষ্ঠা। কাশ্মীর সীমান্তে এই সীমা মান্য করে দুই দেশ সেনা মোতায়েন করে আসছে। বিশ্ব এরই মধ্যেই এই চুক্তিকে দুই দেশের মধ্যে শান্তি ও সীমান্ত ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে মেনে নিয়েছে।

পাকিস্তান শুধু এখন নয়, আগেও পানি নিয়ে যুদ্ধ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৪৭-৪৮ সালে প্রথম ভারত-পাক যুদ্ধের পেছনেও ছিল নদীর পানি। তাই আবারও এই ইস্যু বড় ধরনের সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিতে পারে দুই দেশকে।

সিন্ধু নদীর উৎস তিব্বতের মানস স%A


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর