পোপ ফ্রান্সিসের বিদায়ে শোকাহত-শ্রদ্ধাবনত বিশ্বনেতারা

জীবনাবসান ঘটেছে পোপ ফ্রান্সিসের। বার্ধক্য আর অসুস্থতার কাছে হেরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের এই সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। তার বিদায়ে বিশ্ব জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বিশ্বনেতারা সবাই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন তাকে। বলেছেন, একজন ‘ভালো ও সংবেদনশীল’ মানুষের মৃত্যুতে তারা শোকাহত।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে ভ্যাটিকানে কাসা সান্তা মার্তায় নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পোপ ফ্রান্সিস। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে পোপের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ বলেছে, ‘শান্তিতে ঘুমান, পোপ ফ্রান্সিস।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে পোপের সাক্ষাতের একটি ছবি এবং শনিবার জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে পোপের সাক্ষাতের আরেকটি ছবি এই পোস্টে দেওয়া হয়েছে।
দুদিন আগে শনিবার পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ ককরেছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। দুদিনের মাথায় তাকেই শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হলো পোপকে। ভ্যান্স বলেন, বিশ্ব জুড়ে লাখ লাখ খ্রিষ্টান যারা পোপকে ভালোবাসতেন, তাদের জন্য আমার হৃদয় কাঁদছে।
পোপ ফ্রান্সিসের জীবনাবসান
ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ বলেছেন, পোপ ফ্রান্সিস সর্বোপরি জনগণের একজন মানুষ ছিলেন।
ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রবার্টা মেটসোলা পোপের হাসির প্রশংসা করে বলেছেন, তার সংক্রামক হাসি বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের হৃদয় জয় করেছিল।
ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ পোপের ‘অসীম সহানুভূতিশীলতা ও করুণা’র প্রশংসা করেছেন।
সুইস প্রেসিডেন্ট কারিন কেলার সাটার বলেন, ‘পোপ ফ্রান্সিস একজন মহান আধ্যাত্মিক নেতা, শান্তির জন্য অক্লান্ত একজন প্রবক্তা ছিলেন।’
স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার জন সুইনি পোপকে ‘শান্তি, সহনশীলতা ও পুনর্মিলনের জন্য একটি কণ্ঠস্বর’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
পোপকে ‘নম্র মানুষ’ অভিহিত করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। তিনি বলেন, পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন একজন নম্রতার মানুষ, যিনি সবচেয়ে দুর্বল ও সবচেয়ে ভঙ্গুর ব্যক্তিদের পাশে থাকতেন।
ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেন বলেন, পোপ তার নম্রতা ও কম ভাগ্যবানদের প্রতি পবিত্র ভালোবাসা দিয়ে ক্যাথলিক চার্চের বাইরেও লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে ‘গভীরভাবে ব্যথিত’ জানিয়ে শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক পোপ ফ্রান্সিসকে একজন ‘ভালো, উষ্ণ ও সংবেদনশীল মানুষ’ হিসেবে স্মরণ করেছেন।
মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি বলেছেন, পোপ ফ্রান্সিস শান্তি, ভালোবাসা এবং করুণার কণ্ঠস্বর ছিলেন।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ‘সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ’ মানুষের প্রতি পোপ ফ্রান্সিসের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেছেন।
ভ্যাটিকানের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ‘দ্য হোলি সি’র তথ্য অনুযায়ী, পোপ ফ্রান্সিসের মূল নাম জর্জ মারিও বারগোগ্লিও। ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসে জন্ম তার। কেমিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তিনি ধর্মের প্রতি অনুরাগী হয়ে ওঠেন। পরে দর্শন ও ধর্মতত্ত্বে পড়ালেখা শেষে ১৯৬৯ সাল ধর্মযাজক হন। ১৯৯৮ সালে আর্জেন্টিনায় আর্চবিশপ হন তিনি।
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা বলছেন, ক্যাথলিক গির্জার বিভিন্ন উদারনৈতিক কার্যক্রম ও সংস্কারের জন্য পোপ ফ্রান্সিস স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ক্যাথলিক ও নন-ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের মধ্যে তো বটেই, সব ধর্মের মানুষের মধ্যেও ঐক্যের আহ্বান জানানোর জন্যও মানুষ তাকে মনে রাখবে।
ধর্মযাজকের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি ও কানাডার আদিবাসীদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। সমলিঙ্গের যুগলদের আশীর্বাদ করতে রোমান ক্যাথলিক যাজকদের অনুমতিও দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামীদের (এলজিবিটি) জন্যও ক্যাথলিক গির্জার দরজা খোলা।