সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সোমবার ৪ দিনের সফরে কাতার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করলেন নুর সংসদে নারী আসন ১০০ করার বিষয়ে একমত বিএনপি অস্থিরতা কাটাতে রাজনৈতিক ঐক্য দরকার: ফখরুল সরকার দেশের ৫০ ভাগ মানুষকে বাদ দিয়ে সংস্কার প্রস্তাব করছে : জিএম কাদের সিইসির সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নাগরিক পার্টি প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সুফিউর রহমান ৩০০ সংরক্ষিত আসন, বিয়ে-তালাক-উত্তরাধিকারে সমানাধিকারের সুপারিশ নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের বাংলাদেশে ভ্রমণে সতর্কর্তা যুক্তরাষ্ট্রের, পার্বত্য অঞ্চলে নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভ

না ফেরার দেশে সন্‌জীদা খাতুন

রিপোর্টার / ১৬ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক, সঙ্গীতজ্ঞ ও শিক্ষক সন্‌জীদা খাতুন মারা গেছেন। দেশের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানটে’র অন্যতম এই কারিগর বাধর্ক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। কিডনির জটিলতাও ছিল তার।

সনজীদা খাতুনের ছেলে পার্থ তানভীর নভেদ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।

সন্‌জীদা খাতুনের জন্মও দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের উল্লেখযোগ্য একটি পরিবারে। বাবা কাজী মোতাহার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় অধ্যাপক। সন্‌জীদা খাতুনের ভাই প্রয়াত কাজী আনোয়ার হোসেনও লেখক-প্রকাশক হিসেবে স্বনামখ্যাত। তার স্বামী প্রয়াত ওয়াহিদুল হক দেশের একজন উজ্জ্বল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।

সন্‌জীদা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল। কামরুন্নেসা স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ইডেন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেবাংরা ভাষা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ভারতের শান্তি নিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। পরে সেখান থেকেই পিএইচডি ডিগ্রিও লাভ করেন।

সন্‌জীদা খাতুন কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষক হিসেবে। ইডেন কলেজ ও কারমাইকেল কলেজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন। অবসরও নেন সেখান থেকেই।

সন্‌জীদা খাতুনের জীবনের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জনপরিসরে কবিগুরুকে পৌঁছে দিতে অনন্য অবদান রেখেছেন তিনি। যুক্ত ছিলেন ভাষা আন্দোলনে। পরে ষাটের দশকে পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন রাজপথে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও সংস্কৃতি কর্মীদের ঐকবদ্ধ করতে ভূমিকা রেখেছিলেন।

১৯৬১ সালে কবি সুফিয়া কামালকে সভাপতি ও ফরিদা হাসানকে সম্পাদক করে ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে সদস্য ছিলেন সন্‌জীদা খাতুন। ১৯৬৩ সালে তারই উদ্যোগে বাংলা একাডেমীর বারান্দায় সংগীত শেখার ক্লাস শুরু হয়। গড়ে ওঠে ছায়ানট সংগীত বিদ্যালয়। পরে ছায়ানটের সভাপতি নির্বাচিত হন সন্‌জীদা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। ছিলেন ছায়ানটের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যও।

সন্‌জীদা খাতুনের লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ’, ‘রবীন্দ্রনাথের হাতে হাত রেখে’, ‘রবীন্দ্রনাথ: তাঁর আকাশ ভরা কোলে’, ‘রবীন্দ্রনাথ: বিবিধ সন্ধান’, ‘তোমারি ঝরনাতলার নির্জনে’। বরীন্দ্রনাথকে তার সম্পাদনা করা বইয়ের মধ্যে আছে ‘রইল তাঁহার বাণী: রইল ভরা সুরে’, ‘গীতবিতান: তথ্য ও ভাবসন্ধান’, ‘সার্ধশততম জন্মবর্ষে রবীন্দ্রনাথ’।

রবীন্দ্র চর্চা ও বাঙালি সংস্কৃতির প্রসারে অবদানের জন্য একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন সন্‌জীদা খাতুন। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত), দেশিকোত্তম পুরস্কারসহ (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) নানা পুরস্কার ও সম্মাননা। ২০১৯ সালে ‘নজরুল মানস’ প্রবন্ধ গ্রন্থের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। ২০২১ সালে ভারত সরকার তাকে ভূষিত করে পদ্মশ্রী পুরস্কারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর