সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৪ পূর্বাহ্ন

ঢাকা পলিটেকনিকে অস্থিরতা, অধ্যক্ষ নাজেহাল, সংঘর্ষের শঙ্কা

রিপোর্টার / ১১ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪

কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটউটে নানামুখী অস্থিরতা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানকে নাজেহাল করাসহ ইউনিটের ছাত্রদল সভাপতি হাদিসুর রহমান শাহীনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্রলীগের অনুপ্রবেশকারীরা এসব ঘটনার পিছনে কলকাঠি নাড়ছে বলে জানা গেছে।
কলেজের বেশ কয়েকজন ইন্সট্রাক্টর জানান, ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের পর গত ২৩ অক্টোবর কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তারা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে ৬ দফাভিত্তিক আন্দোলন করছেন। যৌক্তিক দাবিতে গড়ে ওঠা ওই সংগঠনে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীকে পুনর্বাসন করা হয়েছে বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ইউনিট ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির আহমেদ। তারা কলেজে একটি ব্যানার টাঙানোকে কেন্দ্র করে অধ্যক্ষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং ‘তিনি আর কলেজে আসবেন না’ বলে জোরপূর্বক লিখিত স্বীকারোক্তি আদায় করেন। ঘটনার বিষয়ে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, গত রোববার কতিপয় শিক্ষার্থী কলেজের একাডেমিক ভবনের সামনে বড় কালো ব্যানারে ‘কালেমা তাইয়েবা’ লিখে টানিয়ে দেন। কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, এটা হিযবুত তাহরির সংগঠন ছাড়া অন্য কারও কাজ হতে পারে না।
ছাত্র শিবিরের কয়েকজন নেতা জানান, তাদের সংগঠনের ব্যানার এরকম কখনো হয় না। অধ্যক্ষকে নাজেহাল করার ঘটনার সঙ্গেও শিবিরের কোনো নেতাকর্মী সম্পৃক্ত নেই বলে দাবি করেন সংগঠনের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল তানভীর।
ব্যানার টাঙানোর পরদিন সোমবার বিষয়টি অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের নজরে আসলে তিনি তা অপসারণ করেন। আর এটাকে টার্গেট করে গুটিকয়েক শিক্ষার্থী ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ করা হয়েছে উল্লেখ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। সেখানে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত অনেককে দেখা গেছে। তারাই বিষয়টিকে ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করেন। তারা অধ্যক্ষকে আরও নানা বিষয়ে দোষারোপ করে পদত্যাগের দাবি জানান। তাদের চাপের মুখে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তিনি একটি সাদা কাগজে ‘কলেজে আর আসবো না’ লিখিত দেন।
যদিও কারিগরি ছাত্র আন্দোলন সংগঠনের নেতা সাইদুল জানান, তারা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে বিগত সরকারের আমলে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর বা ল্যাব সহকারী নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ওই নিয়োগের কারণে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অথচ বর্তমান অধ্যক্ষ সেই ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের সাথে গোপনে বৈঠক করেছেন বলে জানতে পেরেছেন। কালো পতাকার সাথে এই ইস্যুতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন।
এদিকে ছাত্রদলের সভাপতি শাহীন কলেজে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে একটি ক্লাসরুমে যাওয়ার ঘটনাকে অপরাধ উল্লেখ করে অধ্যক্ষকে দিয়ে লিখিত আদায় করেন, ক্যাম্পাসে শাহীনকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হলো। পর্দার অন্তরালে থেকে সাব্বির আহমেদের ইন্ধনে জোরপূর্বক এটা করা হয়েছে বলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জানান।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ৫ আগস্টের পর এই কলেজের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা বহাল তবিয়তে আছেন। ছাত্রলীগও আছেন। তারা বিভিন্ন ব্যানার ব্যবহার করে কলেজ ক্যাম্পাসকে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছেন। আর এর পেছনে ইন্ধন হিসেবে অনেকের সাথে ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির। তার বিরুদ্ধে এর আগেও ছাত্রলীগের সাথে সখ্যতার নানান অভিযোগ রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর তার ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসের হলে ছাত্রলীগ আবারও পুনর্বাসিত হতে শুরু করেছে। তার বিরুদ্ধে কলেজ কমিটি লিখিতেভাবে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। এদিকে পরে কথা বলবো বলে আর ফোন ধরেননি সাব্বির আহমেদ।
ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নিয়ে অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পতিত সরকারের সমর্থকরা নানাভাবে দেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা করছে। এভাবে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ভবনের সামনে কালো পতাকা টাঙানো হয়। আমি সেটা অপসারণ করায় ছাত্রলীগের মুখোশধারীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানার ব্যবহার করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছে। পরে সেনাবাহিনী আসায় পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর