৭ ঘণ্টা পর শাহবাগ ছাড়লেন অবরোধকারীরা, যানচলাচল স্বাভাবিক

সাত ঘণ্টা অবরোধের পর রাজধানীর শাহবাগ মোড় ছেড়ে গেছেন বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের কর্মচারীরা। সকাল ১০টার পর থেকে শাহবাগসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়েছে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এই যানজট দুপুরের পর থেকে ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে। ফলে অফিস শেষে বাড়ি ফেরা মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে। তবে যাওয়ার আগে দাবি মানার জন্য সরকারকে ১৫ দিনের আলটিমেটাম (সময়সীমা) বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা।
চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের কর্মচারীরা শাহবাগ মোড়ে অবরোধ করেন। বিকেল ৪টার আগে কর্মচারীদের ছয়জনের একটি প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যান। সেখান থেকে ফিরে এসে বিকেল পাঁচটার দিকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তাঁরা।
পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তার যানজট তীব্র হতে থাকে। এ সময় অনেক যাত্রীকে বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে যেতে দেখা যায়। বেশির ভাগ যানবাহরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় রাস্তায় জ্যামের মধ্যে থাকতে দেখা যায়। সাধারণত শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় তুলনামূলক সড়কে যানবাহনের চাপ কম থাকে। অথচ শাহবাগ অবরোধের কারণে শাহবাগ ও আশপাশের বেশির ভাগ সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বশেষ বিকাল ৫টা পর্যন্ত শাহবাগ, মিরপুর রোড, সায়েন্স ল্যাব, পান্থপথ, গ্রিন রোড, মগবাজার, বেইলি রোডে ও বাড্ডা, রামপুরা ধীরগতিতে যান চলাচল করে। ট্রাফিক পুলিশ বলছে, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের আউটসোর্সিং কর্মচারীদের দাবি নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। তাই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
কারওয়ান বাজার এলাকায় মাহমুদুর রহমান নামে এক যাত্রী বলেন, উত্তরা থেকে বিজয় সরণি আসছি ৩০ মিনিটে। আর কারওয়ান বাজার থেকে পর্যন্ত আসতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টারও বেশি। এখন বাস থেকে নেমে শাহবাগের দিকে হেঁটে যাচ্ছি।
রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কর্মমুখী মানুষ। যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে বাংলামোটর মোড়ে মোটরসাইকেলে অবস্থানরত জাকির মিয়া নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘এখন নতুন সরকার আসছে, তাকে কীভাবে নতুন করে খাওয়া যায়, তাই নতুন নতুন নানা দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে। আরে ভাই, কিছু হলেই রাস্তায় কেন নামতে হবে? যাদের যে দাবি থাকবে তা তাদের অফিসে বসে করবে। দেশে কী একটা দাবি আদায় বের হয়েছে, এখন কিছু হলেই রাস্তায় নামছে।’
বাহন পরিবহনের বাসচালক কুদ্দুস মিয়া বলেন, সকাল থেকে আমরা শাহবাগ মোড় দিয়ে চলাচল করতে পারছি না। বাটা সিগন্যাল ও বাংলামোটর দিয়ে আমার ঘুরে যেতে হচ্ছে। সায়েন্সল্যাব থেকে মৎস ভবন মোড় পর্যন্ত যেতে সময় লাগছে দুই ঘণ্টা। এভাবে কি চলে?
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) খন্দকার নজমুল হাসান বলেন, যানজট নিরসনে সকাল থেকে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। শাহবাগ মোড়ে অবরোধ করায় কয়েকটি রাস্তা ডাইভার করে অন্য রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল সচল রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। এখন তারা অবরোধ তুলে নিয়ে রাস্তা ছেড়ে দিয়েছে। এখন সব রাস্তা সচল আছে। আশা করছি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে যানজট কমে আসবে।
অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার নজমুল হাসান আরও বলেন, যে কারও দাবিদাওয়া থাকতে পারে। সে জন্য রাস্তা অবরোধ করতে হবে কেন? গুটি কয়েক মানুষের জন্য লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। শিশু-বৃদ্ধ থেকে শুরু করে অসুস্থ মানুষের ভোগান্তি কথাও সবার ভাবতে হবে। আমরা সবাইকে অনুরোধ করতে চাই, আপনারা আন্দোলন করুন, তবে সড়ক বন্ধ করে না। সড়কে একাংশে দাড়িয়ে আপনাদে দাবি জানান। মানুষের ভোগান্তির কারণ যেন না হয়।
বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁদের সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাই অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কোনো কর্মচারী প্রতারণার শিকার হলে সরকারকে জানাতে বলা হয়েছে। তদন্ত করে এমন কাউকে জড়িত পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সব সমস্যার সমাধান করা হবে—এসব আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আজকের কর্মসূচি তুলে নেওয়া হয়। অবরোধকারীরা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর, অধিদপ্তরের সব প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিং প্রকল্পে কর্মরতদের চাকরি স্থায়ী করার এক দফা দাবি জানিয়েছেন।