সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন

শেখ হাসিনাকে ফেরত না চাওয়া পর্যন্ত তাঁর চুপ থাকা উচিত: ড. ইউনূস

রিপোর্টার / ২৯ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা সে দেশে আশ্রয়লাভের চেষ্টা করছেন।
ভারতের সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাসিনার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ড. ইউনূস। আজ বৃহস্পতিবার পিটিআই নিউজের ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়। শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশ ফেরত না চাওয়া পর্যন্ত ভারতে অবস্থানকালে সাবেক ওই প্রধানমন্ত্রীর চুপ থাকা উচিত। শেখ হাসিনা বিভিন্ন রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক ইউনূস এ মন্তব্য করলেন। এসব বিবৃতিকে ‘অবন্ধুসুলভ’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থানে কেউ স্বস্তিতে নেই। কেননা, বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে আমরা তাঁকে দেশে ফেরত আনতে চাই। তিনি ভারতে থাকছেন এবং একই সময় কথা বলছেন; যা সমস্যা তৈরি করছে। তিনি যদি চুপ থাকতেন, তাহলে আমরা (বিষয়টি) ভুলে যেতাম; লোকজনও ভুলে যেতেন; কারণ তিনি নিজের জগতে থাকতেন। কিন্তু ভারতে বসে তিনি কথাবার্তা বলছেন ও নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। কেউ এটা পছন্দ করছেন না। সবাই এটি বোঝেন। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, তাঁর চুপ থাকা উচিত। এটি (তাঁর কথাবার্তা ও নির্দেশনা) আমাদের প্রতি অবন্ধুসুলভ আচরণ। তাঁকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং তিনি সেখানে থেকে প্রচার চালাচ্ছেন। বিষয়টি এমন নয় যে সেখানে একটি স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গেছেন তিনি। গণ-অভ্যুত্থান ও জনরোষের মুখে তিনি পালিয়েছেন।
গত ১৩ আগস্ট হাসিনার এক বিবৃতি প্রসঙ্গে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন। বিবৃতিতে হাসিনা ‘ন্যায়বিচার’ দাবি করে বলেন, সাম্প্রতিক ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপ’, হত্যাকাণ্ড ও লুটপাটে জড়িতদের অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে চিহ্নিত করতে ও সাজা দিতে হবে।
ড. ইউনূস বলেন, হাসিনা ছাড়া সবাইকে ‘ইসলামপন্থী’ বলে আখ্যা দেওয়ার বয়ান থেকে ভারতের সরে আসা দরকার। বাংলাদেশ তাঁকে ফেরত আনবে, কেননা জনগণ এটাই চায়। হ্যাঁ, তাঁকে ফেরত আনতে হবে, নইলে বাংলাদেশের জনগণ শান্তিতে থাকবেন না। যে ধরনের নিষ্ঠুরতা তিনি দেখিয়েছেন, তাতে এখানে প্রত্যেকের সামনে তাঁর বিচার করা দরকার।
ভারত-বাংলাদেশ ভবিষ্যৎ সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, শুধু হাসিনার নেতৃত্বই বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে—নয়াদিল্লিকে এমন আখ্যা দেওয়া অবশ্যই বাদ দিতে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সামনে এগোতে ভারতের জন্য ওই বয়ান থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। এ বয়ান হলো, প্রত্যেকে ইসলামপন্থী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইসলামপন্থী, বাকি সবাই ইসলামপন্থী আর তাঁরা সবাই এ দেশকে আফগানিস্তানে পরিণত করবেন এবং বাংলাদেশ শুধু শেখ হাসিনার হাতেই নিরাপদ। ভারত এমন আখ্যানে বিমোহিত। এ আখ্যান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে ভারতকে। বাংলাদেশ অন্য যেকোনো দেশের মতোই আরেকটি প্রতিবেশী।
বাংলাদেশে সম্প্রতি সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার অভিযোগ এবং এ ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ প্রকাশ সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, এটি শুধুই একটি অজুহাত। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থাকে এভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলে ধরার চেষ্টার বিষয়টি একটা অজুহাত।
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন থেকেই তিনি ভারতে অবস্থান করছেন; যদিও তাঁকে প্রত্যর্পণ করার চাপ বাড়ছে।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে। এ অবস্থায় তিনি আর ভারতে থাকতে পারবেন কি না এবং তাঁর সম্ভাব্য প্রত্যর্পণ বিষয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে ক্ষমতাচ্যুত এ প্রধানমন্ত্রীকে স্বল্প সময়ের নোটিশে ভারতে আসার অনুমতি দেওয়া হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর