সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৫৪ অপরাহ্ন

তাইওয়ান দাবি করলে রাশিয়ার কাছ থেকেও ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করা উচিত: চীনকে লাই ছিং

রিপোর্টার / ৩৩ বার
আপডেট : সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই ছিং-তে বলেছেন, যদি চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) সত্যিই তাইওয়ানের ওপর তাদের আঞ্চলিক দাবি নিয়ে দৃঢ় থাকে, তাহলে তাদের রাশিয়ার কাছ থেকেও ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করা উচিত। রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের শাসনামলে সিসিপি দাবি করেছে, তাইওয়ান একটি চীনা প্রদেশ। যা অবৈধ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এবং শি তাইওয়ানকে সংযুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যাকে তারা ‘পুনঃএকত্রীকরণ’ বলে আখ্যায়িত করছে।
বেইজিং দাবি করে, তাইওয়ান প্রাচীনকাল থেকেই চীনের অংশ। কিন্তু ‘শতাব্দীর অপমান’ নামে পরিচিত ১৮৩৯ থেকে ১৯৪৯ সালের সময়কালে এটি জাপানের দখলে চলে যায়। এই সময়ের মধ্যে চীন বারবার পরাজিত ও দমিত হয়েছিল। সিসিপির এই আখ্যানের মূল বিষয় হলো সেই সব হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার, যা আজ তাইওয়ানকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লাই উল্লেখ করেন, এই সময়ের মধ্যেই চীন রাশিয়ার কাছেও জমি হারিয়েছিল। কিন্তু তা পুনরুদ্ধারের কোনও প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে তাইওয়ানকে দখল করার পরিকল্পনা আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য নয়।
লাই বলেন, যদি আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্যই হয়, তবে তারা কেন আইগুন চুক্তিতে স্বাক্ষরিত রাশিয়ার দখলে থাকা ভূখণ্ড ফেরত নেওয়ার চেষ্টা করছে না? রাশিয়া এখন সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে, তাই না? তিনি ১৮৫৮ সালের একটি চুক্তির কথা উল্লেখ করেন, যেখানে রাশিয়া প্রায় ১০ লাখ বর্গকিলোমিটার চীনা ভূখণ্ড দখল করেছিল। যার মধ্যে হাইশেংওয়েই (আজকের ভ্লাদিভোস্টক) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি বলেন, আপনি রাশিয়ার কাছ থেকে জমি ফেরত চাইতে পারেন, কিন্তু তা করছেন না। তাহলে এটা স্পষ্ট যে, তারা ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার কারণে তাইওয়ান দখল করতে চায় না।
লাই দাবি করেন, বেইজিংয়ের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ানো ও বিশ্বব্যবস্থা পরিবর্তন করা। তাইওয়ান প্রশান্ত মহাসাগরের প্রথম দ্বীপমালার একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ, যার নিয়ন্ত্রণ চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে (সিসিপি) তাইওয়ান প্রণালির ওপর নিয়ন্ত্রণ দেবে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চীন বিশ্লেষক ওয়েন-টি সাং বলেন, আইগুন চুক্তি ছিল চীনের জন্য ২০ শতকের সবচেয়ে অপমানজনক পরাজয়, যেখানে সবচেয়ে বেশি ভূমি হারায় দেশটি। কিন্তু চীনা কর্মকর্তারা বারবার ভ্লাদিভোস্টকে অনুষ্ঠিত রুশ অর্থনৈতিক ফোরামে অংশ নিয়েছেন, যা রুশ শাসনের প্রতি বৈধতা প্রদান করে।
সাং বলেন, যদি তাইওয়ানের প্রতি চীনা আগ্রাসনের প্রধান চালিকা শক্তি ‘শতাব্দীর অপমান’ সম্পূর্ণভাবে শেষ করা হয়, তবে রাশিয়ার কাছ থেকে আইগুন চুক্তিতে হারানো ভূমি পুনরুদ্ধারে চীন অগ্রাধিকার দেবে বলে আশা করা যায়। তবে বেইজিং এ বিষয়ে কথা বলে না এবং তা বলার কাছাকাছিও যায় না, বরং ‘প্রয়োজনে বলপ্রয়োগে’ সেসব ভূমি পুনরুদ্ধারের কোনও আলোচনা হয় না।
উল্লেখ্য, ১৮৯৫ সালে চীনের বৃহত্তম ও শেষ সাম্রাজ্যবাদী রাজবংশ কুইং, আরেকটি ‘অসম চুক্তির’ মাধ্যমে তাইওয়ানকে জাপানের কাছে সমর্পণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ১৯৪৫ সালে এটি চীনা প্রজাতন্ত্র সরকারকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যারা ১৯৪৯ সালে চীনা গৃহযুদ্ধে কমিউনিস্টদের কাছে পরাজিত হয়ে তাইওয়ানে পালিয়ে গিয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল।
তাইওয়ান ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে গণতন্ত্রে রূপান্তরিত হয় এবং আজ এশিয়ার অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ। তাদের নির্বাচিত সরকার দাবি করে, তাইওয়ান একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং এর ভবিষ্যৎ সিসিপির নয়, তাইওয়ানের জনগণের হাতে। লাই-এর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় চীনা সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কিছু বলা হয়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর