জাতীয় প্রেস ক্লাবের কর্মশালায় হেপাটাইটিস প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান

হেপাটাইটিস লিভার ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। হেপাটাইটিসজনিত কারণে বিশ্বে প্রতিবছর ১.৩ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন, যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। হেপাটাইটিস কোনো ছোঁয়াচে রোগ না হলেও সহজেই এর বিস্তার বা সংক্রমণ ঘটে। প্রতিষেধকের মাধ্যমে ভাইরাসটি প্রতিরোধ করা গেলেও সংক্রমিতরা পদে পদে বঞ্চনার শিকার হন। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসায় গুরুত্ব দিতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত এবং সবার প্রচেষ্টায় তা অর্জন সম্ভব।
আজ রবিবার ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস’ উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে পেশার মানোন্নয় ও প্রশিক্ষণ উপকমিটির উদ্যোগে এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাব, ফোরাম ফর দি স্ট্যাডি অব দি লিভার বাংলাদেশ, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন বিএসএমএমইউ এবং বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস আয়োজিত সোমনারে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এমপি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ)’র ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)। আলোচনায় অংশ নেন প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ফোরাম ফর দি স্ট্যাডি অব দি লিভার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেপাটোলজি অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আবদুর রহিম ও বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম মাহমুদুল হক পল্লব। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মো. আশরাফ আলী।
ফরিদা ইয়াসমিন এমপি বলেন, হেপাটাইটিস লিভার ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। তাই হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্য অর্জনে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। হেপাটাইটিস নির্ণয়ে পরীক্ষা, টিকা নেওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। তিনি হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্য অর্জনে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টিতে লেখনির মাধ্যমে সাংবাদিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর বলেন, অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালন, অনিয়ন্ত্রিত সুঁই, সিরিঞ্জ ব্যবহার ও অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্কের মাধ্যমে হেপাটাইটিস ছড়ায়। নাক-কান ফুটো, সংক্রমিত ব্যক্তির টুথব্রাশ ও শেভিং যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সহজ এই কাজগুলোর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন ও প্রতিষেধক গ্রহণের মাধ্যমে হেপাটাইটিস প্রতিরোধ করা যায়।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় এক কোটি হেপাটাইটিস বি এবং ৫ বছরের নিচে এক শতাংশের (১৬ লাখ ৬০ হাজার) কিছু কম সংখ্যক মানুষ হেপাটইিটস-সি ভাইরাসে আক্রান্ত। সি ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে ২৩ হাজার মানুষ মারা যান। হেপাটাইটিস আক্রান্ত রোগীদের কিছু অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে সরকার নয়, বরং প্রতিষ্ঠান ও কর্মীরা বাধা তৈরি করেন। হেপাটাইটিস নির্ণয়ে পরীক্ষা, টিকা গ্রহণ ও প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণের বিষয়ে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।