বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
অভিনয়শিল্পী সংঘের অন্তর্বর্তী প্রধান তারিক আনাম খান নতুন পথে বাংলাদেশ, সংস্কারে দীর্ঘ পথ: দ্য গার্ডিয়ান সব স্থানে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া ঠিক হয়নি: মির্জা ফখরুল সংস্কার কমিশনগুলোর কাজ শুরু অক্টোবরে, রিপোর্ট ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা নয়: আসিফ নজরুল শেখ হাসিনার ভারতে থাকা উচিত: শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট এস আলম গ্রুপের তথ্য চেয়ে সিঙ্গাপুরের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার চিঠি অশ্বিন-জাদেজার ব্যাটে চালকের আসনে ভারত সংস্কার কমিশন প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় প্রেসক্লাবে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের মাধ্যমে সদস্য পদ দেয়া হয়েছে: শওকত মাহমুদ

কেউ হতাশ হবেন না: প্রধানমন্ত্রী

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ২৮ বার
আপডেট : শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেখানে উত্থান-পতন, অনেক চড়াই-উতরাই থাকবে এবং সেগুলোকে অতিক্রম করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। হতাশ হওয়ার কিছু নেই, কেউ হতাশ হবেন না। প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় জনগণ ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা, নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য দেশের অর্থনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার (১৭ মে) সকালে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২২তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ২০২৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দুদিনব্যাপী দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আইনুল ইসলাম।
শত প্রতিকূলতা, গুলি, গ্রেনেড, বোমা হামলা– সব রকম বাধা অতিক্রম করেই এগিয়ে চলেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার লক্ষ্য হচ্ছে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে এই দেশকে উন্নত করা। আমরা অনেক দূর এগিয়েছি, ইনশাআল্লাহ এই দেশটা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেভাবেই এগিয়ে যাবে। যত বাধাই আসুক সে বাধা বাধা নয়, সে বাধা আমরা অতিক্রম করতে পারবো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না’। কাজেই কেউ আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি অর্থনীতিবিদদের কাছে এটাই প্রত্যাশা করি দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে আপনারা পরিকল্পনা ও নীতিমালা প্রণয়ন করবেন। বিদেশিদের পরামর্শ এখানে ফলপ্রসূ হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনও একজন দুই-একদিনের জন্য দেশে এসে আমাদের উপদেশ দিয়ে যাবে, ওই উপদেশ আমাদের কাজে লাগবে না। কাজে লাগবে নিজের চোখে দেখা এবং মানুষের জন্য করা। এটাই কাজে লাগবে।
শেখ হাসিনা বলেন, হ্যাঁ বাইরে থেকে আমরা শিখবো। কিন্তু করার সময় নিজের দেশকে দেখে করবো, মানুষকে দেখে করবো। আমাদের কী সম্পদ আছে সেটা দেখে করবো। গবেষণা আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি অর্থনীতি সমিতিকে বলবো আপনারা গবেষণা করছেন, আমাদের গবেষণা দরকার। আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে দেশকে মুক্ত রাখার পদক্ষেপ যেমন আমরা নিয়েছি, পাশাপাশি দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকারগুলো যাতে সুনিশ্চিত হয় সেটা মাথায় রেখেই আমাদের সব নীতিমালা এবং কার্যক্রম আমরা পরিচালনা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, দেশকে ডিজিটালাইজড করায় এখন প্রত্যন্ত ইউনিয়নে ঘরে বসেও মানুষ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারছে। ২০২৬ সাল থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হবো। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা কার্যকর হওয়ার পর যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে সেগুলো মোকাবিলা করা, আর যে সুযোগগুলো আসবে সেগুলো কাজে লাগানোর মতো পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ থেকে ২০৪১ সালের পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। যার লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। পাশাপাশি নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। গ্রামের অর্থনীতি বদলে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা আগে একবেলা ভাত খেতে পারতো না, এখন দেখা যাচ্ছে প্রয়োজনে চারবেলাও খাচ্ছে। যেখানে হাট-বাজারের বাইরে কিছু পাওয়া যেতো না, এখন সুপার মার্কেট হয়েছে। তিনি বলেন, আমি অর্থনীতিবিদদের বলবো আপনারা চিন্তা করেন, গ্রামীণ অর্থনীতি যত বেশি মজবুত হচ্ছে আমাদের শিল্প কলকারখানা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজার সৃষ্টি হচ্ছে, সেক্ষেত্রে রফতানিও আমাদের বাড়াতে হবে।
দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করুন। আমরা সবসময় আপনাদের পাশে আছি। ব্যবসায়ীদের উদ্ভাবনী ধারণা কাজে লাগিয়ে রফতানি বাড়াতে পণ্যের নতুন বাজারও খুঁজে বের করতে হবে। এ জন্য সরকার সর্বদা তাদের পাশে থাকবে।
আওয়ামী লীগ কখনও কোনও ব্যবসায়ীকে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা দেখে বিচার করে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা সবসময় দেশের মানুষের কল্যাণের কথা ভাবি। আজকের বাংলাদেশ একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশকে আরও টেনে নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটলে মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো হবে। এ লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে এবং বাকি প্রতিবন্ধকতাগুলোও শিগগিরই সমাধান করা হবে।
তিনি আরও বলেন, অন্তত এটুকু বলতে পারি যে আমি ‘হাওয়া ভবনের’ মতো কোনও ‘খাওয়া ভবন’ করিনি, যা ব্যবসার জন্য অসুবিধা তৈরি করবে। সরকার ব্যবসায়ীদের সবসময় সহযোগিতা করবে। আমরা চাই, ব্যবসায়ীরা ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে এগিয়ে আসুক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতির গতিকে যেভাবে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম মাঝখানের কয়েকটি আন্তর্জাতিক ঘটনা আমাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ালো। যদিও আমাদের দেশের অভ্যন্তরেও কিছু বাধা দেওয়া হয়েছিল। আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো, অগ্নিসন্ত্রাস ২০১৩ ও ২০১৪ সালে এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের পর। নতুন বাস কিনি, ট্রেন কিনি, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। রেলগাড়ি পুড়িয়ে দেয়, মানুষ পুড়িয়ে মারে– এগুলোও তো আমাদের সামাল দিতে হয়। একদিকে এই দুর্যোগ, আবার আন্তর্জাতিক চাপ, সবকিছু মিলিয়েই আমি এগিয়ে যাচ্ছি।
সরকারপ্রধান বলেন, আগামী ৬ তারিখে (৬ জুন) আমরা বাজেট দেবো। ইনশাআল্লাহ বাজেট আমরা ঠিকমতো দিতে পারবো এবং বাজেট আমরা বাস্তবায়নও করবো। তবে, আমরা যেহেতু যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞার জন্য কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধন করতে গিয়েছি, এই কৃচ্ছ্রসাধনের কারণে হয়তো জিডিপি গতবার যা ছিল তার থেকে কিছুটা কম হতে পারে। কিন্তু সেটাও আমরা পরবর্তীতে উত্তরণ ঘটাতে পারবো, সে বিশ্বাস আমার আছে। সেভাবেই আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধির গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে হবে। কারও কাছে হাত পেতে নয়। এ সময় তিনি বিশ্বব্যাংকের ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একে মিথ্যা প্রমাণ করে পদ্মার সেতুর মতো মেগাপ্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। পাশাপাশি পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এই রেলপথ চলে যাবে একেবারে মোংলা বন্দর পর্যন্ত।
শেখ হাসিনা বলেন, এভাবেই সারা দেশে তার সরকার নৌপথ, রেলপথ, বিমান, ও সড়কপথ ইত্যাদির উন্নয়ন ঘটিয়েছে সীমিত সম্পদ দিয়ে। পাশাপাশি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, উৎপাদন বাড়ানো, সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে এসেছে। যেখানে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। বছরের শুরুতেই বিনামূল্যে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, সাধারণ এবং উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যতটুকু সম্পদ আছে, সেটা দিয়েই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করাই আমার লক্ষ্য। সেখানে আপনাদের (অর্থনীতিবিদ) সহযোগিতা চাই। সূত্র: বাসস।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর