কোরবানির ঈদের জন্য প্রস্তুত ১ কোটি ৩০ লাখ পশু: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর কোনও সংকট হবে না। কোরবানির চাহিদার চেয়ে ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৩টি অতিরিক্ত গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি যা গতবারের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪টি বেশি। ফলে কোরবানির পশু নিয়ে কোনোরকম সংশয়, সংকট বা আশঙ্কার কারণ নেই।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানি পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ ও পরিবহন নিশ্চিতকল্পে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহা. সেলিম উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব এ.টি.এম মোস্তফা কামাল এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, রেলপথ ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা সভায় অংশ নেন।
প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান বলেন, বাইরে থেকে যাতে পশু না আসে, এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত আগেরই। এ সুযোগ নেই। চোরাই পথে যাতে না আসে, সে ব্যাপারেও আমরা সতর্ক এবং সজাগ থাকবো।
মন্ত্রী বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ঈদুল আজহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি যাতে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে এবং পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে উদযাপন করা যায় সে লক্ষ্যে মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও সরকারের অন্যান্য দফতর ও সংস্থা কাজ করছে। কোরবানির পশুর জন্য অতীতে অন্যদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হতো। কিন্তু আমরা এখন দেশে উৎপাদিত পশু দিয়েই কোরবানি সম্পন্ন করতে পারছি।
দেশে অবৈধ উপায়ে গবাদিপশু যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, রোগাক্রান্ত পশু হাটে বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হবে। হাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
মন্ত্রী বলেন, গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও কোনও খামারি নিজ বাড়ি থেকে পশু বিক্রি করলে তাকে হাসিল দিতে হবে না। কোনও খামারি তার পশু দূরবর্তী হাটে নিতে চাইলে রাস্তাঘাটে জোর করে নামাতে বাধ্য করা যাবে না। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় সরকারের ইউনিট তথা পৌরসভা, উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন এ বিষয়টি নিশ্চিত করবে। হাটে আনার পথে কেউ প্রাণী বিক্রি করলে তার কাছ থেকে ইজারা গ্রাহক জোর করে চাঁদা বা হাসিল গ্রহণ করতে পারবে না। এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। নগদ টাকা বহন না করে যথাসম্ভব বিকল্প উপায়ে স্মার্ট পদ্ধতিতে আর্থিক লেনদেন করার জন্য তিনি খামারিদের পরামর্শ দেন।
মন্ত্রী বলেন, গত বছরের মতো এ বছরও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সারা দেশে কোরবানির পশু বিক্রির ব্যবস্থা চালু থাকবে। লাভের আশায় কোরবানির অনুপযুক্ত পশু বা রোগাক্রান্ত পশু যাতে কেউ বিক্রির চেষ্টা না করে সে ব্যাপারে হুঁশিযারি উচ্চারণ করেন মন্ত্রী। প্রতিটি নির্ধারিত কোরবানির পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম থাকবে, তারা কোরবানির পশু নিরাপদ ও কোরবানি উপযোগী কিনা বা তাদের শরীরে দূষিত পদার্থ প্রবেশ করানো হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করবে বলে মন্ত্রী জানান।
এছাড়া মহাসড়কে বা যেখানে হাট বসালে যান চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন কিছু যাতে না হয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে। সড়কে বা সেতুতে কোরবানির পশুবাহী গাড়িকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, যাতে রাস্তায় পশু আটকে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না হয়। এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (হটলাইন-১৬৩৫৮) চালু থাকবে। পশুর হাটে কোনও রকম সমস্যা হলে হটলাইন নম্বরে কল করলে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।