রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন

অনলাইন জুয়া, গেমিং, হুন্ডির কারণে মুদ্রাপাচার বাড়ছে: সংসদে অর্থমন্ত্রী

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ৩৮ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

অনলাইন জুয়া, বেটিং, গেমিং, হুন্ডি ইত্যাদি কারণে মুদ্রাপাচার বাড়ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বৃহস্পতিবার (৯ মে) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকারি দলের সংসদ সদস্য (চট্টগ্রাম-১১) আসনের এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান মন্ত্রী।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান প্রশ্নোত্তরে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেন।
এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সময়ে দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ব্যাপক প্রসারের কারণে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) ও ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে লেনদেনের মাত্রা বহুলাংশে বেড়েছে। প্রযুক্তির এই উন্নয়নের সুবিধা কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু চক্র অনলাইন জুয়া, বেটিং, গেমিং, ফরেক্স, ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং ও হুন্ডি ইত্যাদি অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে একদিকে দেশ থেকে মুদ্রা পাচার হচ্ছে ও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে। ফলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অনলাইন জুয়া, বেটিং ও হুন্ডির মাধ্যমে অর্থপাচার রোধসহ সব ধরনের অর্থপাচার বন্ধে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউ) ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অনলাইন জুয়া, বেটিং ও হুন্ডির সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে ৪৮ হাজার ৫৮৬টি ব্যক্তিগত এমএফএস হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। ৫ হাজার ৭৬৬ জন এজেন্টের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও হুন্ডি লেনদেনের সঙ্গে ৫ হাজার ২৯টি এজেন্টশিপ বাতিল হয়েছে। ১০ হাজার ৬৬৬টি এমএফএস এজেন্ট হিসাবের লেনদেন ব্লক করা হয়েছে। ১ হাজার ৯৬টি ওয়েবসাইট, ১৮২টি অ্যাপ ও ১ হাজার ২টি সোশ্যাল মিডিয়া পেজ চিহ্নিত করে বিটিআরটি ও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সরবরাহ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, জুয়া, অনলাইন জুয়া, ক্যাসিনো ইত্যাদির সংজ্ঞা ও এ অপরাধের কঠোর শাস্তির বিধান সংযোজন করে দ্য পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট ১৮৬৭ সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কৃষিঋণ মওকুফ

সংরক্ষিত আসনের শাম্মী আহমেদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদসহ ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত কৃষকের কোনও কৃষিঋণ মওকুফ করা হয়নি। এ-সংক্রান্ত কোনও পরিকল্পনা আপাতত নেই। ব্যাংক আমানতকারীদের থেকে সংগৃহীত অর্থ কৃষকদের মাঝে কৃষিঋণ হিসেবে বিতরণ করে থাকে। আমানতকারীদের থেকে সংগ্রহ করা অর্থ সুদসহ ফেরত দিতে হয় বিধায় ব্যাংকের পক্ষে কৃষিঋণ মওকুফ করা সম্ভব হয় না।

লক্ষ্মীপুর-১ আসনের আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনা এ মুহূর্তে সরকারের নেই।

মূল্যবৃদ্ধি

সিলেট-৩ আসনের হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে সব কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিকে অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছি। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও যুদ্ধকেন্দ্রিক নিষেধাজ্ঞার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাস ও সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন সংকট অনুভূত হয়েছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতের ফলে এ সংকট ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আবদুল কাদের আজাদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের জুলাই থেকে গত ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত স্থানীয় মুদ্রাবাজরে নিট ৯ হাজার ১৩৯ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন

বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু সম্পূরক প্রশ্নে ন্যাশনাল ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের একীভূতকরণের সিদ্ধান্তের পর ন্যাশনাল ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন কীভাবে হলো জানতে চান। একই সঙ্গে মালিকানা পরিবর্তনের পরে ব্যাংকটি একীভূত হবে কি না, সেটাও জানতে চান তিনি।

জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, মাননীয় সদস্য একটি ব্যাংকের কথা বলেছেন, সেটার মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে বলতে আমি দেখলাম ওনাদের বোর্ড পরিবর্তন হয়েছে। নতুন বোর্ড এসেছে। নতুন বোর্ডে ব্যাংকের শুরু থেকে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেও আছেন। মালিকানা পরিবর্তনের বিষয়টি আমার কাছে খুব স্পষ্ট নয়। আরও বিস্তারিত জেনে তাকে জানাবো।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন সম্পূরক প্রশ্নে আগামী অর্থবছরে অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে এটা আছে কি না, আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। বলা সম্ভব নয়। বাজেট প্রস্তাব ফাইনাল হচ্ছে। আগের বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ থাকলে, আগামী বাজেটেও সেই সম্ভাবনা আছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর