৭৬তম কান উৎসব: ফ্রান্সের ভিসা পাননি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল

সব আয়োজন সম্পন্ন ছিল। কান চলচ্চিত্র উৎসবের মার্শে দ্যু ফিল্মে সময়মতো স্টল আগেই বরাদ্দ নেওয়া হয়। কিন্তু সেটি একা পড়ে আছে গত আট দিন ধরে। কারণ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার (বিএফডিসি) সংশ্লিষ্টরা ভুগছিলেন জিও (গভর্মেন্ট অর্ডার) জটিলতায়। অবশেষে জিও নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ উদ্যোগে ফ্রান্স দূতাবাসে দাঁড়ালেন। তবে আয়োজনটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের। এরমধ্যে ভিসা না হলেও এগিয়ে থাকার জন্য টিকিট কাটাও চূড়ান্ত। আজ (২৩ মে) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে, এমিরেটস-এর একটি ফ্লাইটে ওঠার কথা বিএফডিসি প্রতিনিধি দলটির।
প্রত্যাশা অনুযায়ী, ভিসা হাতে পাওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার (২৩ মে) বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টার দিকে। পরিকল্পনা ছিল এরপরই উড়াল দেবেন সবাই মিলে। যথাসময়ে দূতাবাসে গেলেন চার সদস্যের দল। কিন্তু পাসপোর্ট হাতে নিয়ে তাদের চোখ কপালে! ভিসা হয়নি কারও। কারণ হিসেবে দূতাবাস থেকে জানানো হলো, ‘সময় স্বল্পতা।
প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য নায়ক-নেতা জায়েদ খান ফ্রান্স দূতাবাস থেকে বেরিয়ে খবরটি নিশ্চিত করেন।
এটাই স্বাভাবিক। ভিসা পেলেও ঢাকা থেকে নিস (কান শহরের বিমানবন্দর) এসে জায়েদ খানসহ অন্যরা এসে পৌঁছাতেন ২৪ মে ফ্রান্সের স্থানীয় সময় বিকাল ৩টার কিছু আগে-পরে। এরপর পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনে প্রবেশের জন্য তাদের সংগ্রহ করতে হবে কান দফতরের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড (পরিচয়পত্র)।
এভাবেই পড়ে আছে বাংলাদেশের প্রথম স্টল
দুঃখজনক ব্যাপার হলো, একই দিন বিকাল ৫টায় বন্ধ হয়ে যাবে ৯ দিন ধরে চলা কান উৎসবের সিনেমার বাজার (মার্শে দ্যু ফিল্ম)। সেখানেই রয়েছে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে বরাদ্দ নেওয়া বিএফডিসি’র স্টল। উৎসবের ৮ দিন ধরেই ফাঁকা পড়ে আছে এটি।
ফলে কানে এসে পৌঁছালেও বিএফডিসির প্রতিনিধিদল তাদের স্টল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারতেন কিনা, সেই সন্দেহ থেকেই যায়। সম্ভবত ফ্রান্স দূতাবাস এমন বিবেচনা থেকেই শেষ মুহূর্তে ভিসা প্রদান থেকে বিরত থাকলো।
জানা গেছে, দূতাবাস পর্যন্ত যাওয়ার আগে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে ছিলেন ২০ জনেরও বেশি! বিপত্তিটা বেঁধেছে সেখানেই। তালিকা ছোট করতে গিয়েই তথ্য মন্ত্রণালয়ের এতটা সময় বিলম্ব হয়। তাদের অনুমোদন নিয়ে যখন চূড়ান্ত হলো ছয় জন, তখন কানসৈকতে বাজলো পর্দা নামানোর প্রস্তুতি!
কান উৎসবের মার্শে দ্যু ফিল্মে অংশগ্রহণে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের জন্য জিও
স্বস্তির বিষয়, মাঝে তিন দিন সেই স্টল প্রাণ পেয়েছিল ঢাকা থেকে আসা একই বিভাগে মার্কেট স্ত্রিনিং হওয়া অরণ্য আনোয়ারের ‘মা’ সিনেমার সুবাদে। ২০ মে পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের পালে-ই থিয়েটারে ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার শেষে পুরো টিম ফিরে যায় ঢাকায়। এরপর গত তিন দিন ধরে ফের ফাঁকা পড়ে আছে স্টলটি।
প্রতিবছরের মতো এবারও কান উৎসবে এসেছেন ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। স্টলের হাল দেখে আফসোসের সুরে তিনি বলেন, ‘সঠিক সময়ে তারা (বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ) আসলে বাংলাদেশের জন্য অনেক ভালো কিছু হতো। সেটা তো হলোই না, বরং বিপরীত হলো। স্টল নিয়ে এভাবে ফেলে রাখা তো ভালো বিষয় নয়। কারণ, এখানে অংশ নেওয়া প্রতিটি দেশের প্রতিনিধিরা দেখেছেন, আমাদের স্টলটির কী হাল। তবে আশা করছি, সামনে এবারের অভিজ্ঞতাটি কাজে লাগিয়ে সবকিছু সঠিক সময়ে করবেন সংশ্লিষ্টরা।’মাঝে দুদিন বাংলাদেশ স্টলে একাই বসে ছিলেন নির্মাতা অরণ্য আনোয়ার
জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের হয়ে কানে আসার কথা ছিল বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন, দুই কর্মকর্তা এ কে এম আমিনুল করিম খান (সহকারী পরিচালক নিরাপত্তা ও প্রশাসন), রফিকুল ইসলাম (ল্যাব চিফ, অতিরিক্ত পরিচালক বিক্রয়), চিত্রনায়ক জায়েদ খান, অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার ও নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজারের। কিন্তু কানসৈকতের হাওয়া আপাতত আর গায়ে লাগলো না কারও!