জীবনের ভয়ে ভীত দেশটির আড়াইশ নারী বিচারকের কেউ কেউ এরই মধ্যে পালাতে পারলেও বেশিরভাগই পারেননি।
তারা এখনও দেশ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে তাদের সহায়তায় দিনরাত ব্যস্ত বিচারক ও অধিকারকর্মীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে গত মাসে ক্ষমতা দখল করেছে সেইসব উগ্রবাদীরা, যারা ২০ বছর আগে যখন দেশ শাসন করেছিল। তখন তারা নারীদের বাইরে কাজ করা নিষিদ্ধ করেছিল।
এবার তারা নারী অধিকার সংরক্ষিত থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও কীভাবে তা হবে তার বিস্তারিত এখনও জানায়নি।
বিচার বিভাগে কর্মরত নারীরা এরমধ্যেই তাদের আক্রমণের বড় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের দুজন নারী বিচারককে জানুয়ারিতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
ইউরোপে পালানো এক উচ্চ পর্যায়ের একজন বিচারক বলেন, “এখন তালেবান দেশজুড়ে বন্দিদের মুক্তি দিয়েছে, যেটা ‘বাস্তবে নারী বিচাররকদের জীবনকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।”
অজ্ঞাতবাস থেকে তিনি বলেন, “কাবুলে আমার বাসায় তালেবান সদস্যরা এসে জিজ্ঞেস করেছিল: ‘ওই নারী বিচারক কোথায়?’ এদেরকেই আমি কারাদণ্ড দিয়েছিলাম।”
মানবাধিকার স্বেচ্ছাসেবী ও নারী বিচারকদের আন্তর্জাতিক সমিতির বিদেশি সহকর্মীদের একটি গ্রুপের সহায়তায় গত কয়েক সপ্তাহে আফগান নারী বিচারকদের যে ছোট একটি দল পালাতে পেরেছে, তাদের মধ্যে তিনি একজন।
দেশে সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে জানিয়ে এই আফগান বিচারক বলেন, “তাদের কাছে যে খবর পাই, তা ভয় জাগানো ও আতঙ্কজনক। তারা আমাকে বলেছে, উদ্ধার করা না হলে তাদের জীবন এখন বড় বিপদের মুখে।”
আফগান মানবাধিকারকর্মী হুরিয়া মোসাদিক বলেন, এসব বিচারকরা ছাড়াও প্রায় হাজারখানেক নারী অধিকারকর্মীর তালেবানের আক্রোশের মুখে রয়েছেন।
“মুক্ত হওয়া বন্দিরা নারী বিচারক, আইনজীবী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ফোন করে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে, তারা বলছে, ‘তোমার খোঁজে আসছি আমরা’।”
সন্ত্রস্ত
ব্রিটিশ বিচারমন্ত্রী রবার্ট বাকল্যান্ড বলেন, গত সপ্তাহে লন্ডন নয় নারী বিচারককে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা আরও মানুষকে নিরাপদের বের করে আনার জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছে।
“এই বিচারকদের অনেকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে ছিলেন এবং তালেবানের উত্থানে কি পরিণতির মুখোমুখি তাদের হতে হবে, তা নিয়ে তাদের আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।”
মানবাধিকার ও আইনকর্মীরা বলছেন, কাবুল পতনের পর বিশৃঙ্খলার মধ্যে নারী বিচারক ও অধিকারকর্মীদের বের করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে পশ্চিমা দেশগুলো প্রাধান্য দেয়নি।
বেলফাস্টভিত্তিক মানবাধিকার আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক নারী আইনজীবীদের সমিতি অ্যাটলাস উইমেন রেটওয়ার্কের সদস্য সারা কে বলেন, “নিজেদের নাগরিক ছাড়া বাকিদের বের নেওয়ার বিষয়ে সরকারগুলোর তেমন আগ্রহ নেই।”
সারা কে কাজ করছেন ‘ডিজিটাল ডানকির্ক’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী অনলাইন গ্রুপের সঙ্গে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসীদের দখলে থাকা ফ্রান্স থেকে ব্রিটিশ বাহিনীকে উদ্ধারের ঘটনার স্মরণে এই গ্রুপের নামকরণ হয়েছে।
নিজেদের চ্যাট গ্রুপ অথবা ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগের মাধ্যমে শত শত মানুষকে তারা আফগানিস্তান থেকে বের হতে সহায়তা করেছে।
আর নারী বিচারকদের আন্তর্জাতিক সমিতিতে ছয় বিদেশি বিচারকের একটি দল তথ্য সমন্বয়, সরকারগুলোর সঙ্গে দেনদরবার এবং উদ্ধার ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন।
তাদেরই একজন হলেন মার্কিন বিচারক প্যাট্রিশিয়া ওয়ালেন, যিনি ১০ বছরের একটি কর্মসূচির আওতায় আফগান নারী বিচারকদের প্রশিক্ষণে সহায়তা করেছেন।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, “আমাদের কাঁধে এখন যে বোঝা তা প্রায় অসহনীয়। কারণ মাত্র কয়েকজন এই দায়িত্ব নিচ্ছি। আমি খুবই ক্ষুব্ধ, আমাদের কারও এমন পরিস্থিতিতে পড়ার কথা ছিল না।