রাজধানীতে রেড অ্যালার্ট: মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট

পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে ছিটিয়ে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে দুই জঙ্গি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় রাজধানীতে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল। ধরিয়ে দিলে প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ টাকা করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছে পুলিশ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
রোববার (২০ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ওই দুই জঙ্গি পুলিশকে স্প্রে করে আগে থেকে প্রস্তুত মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। তাদের ধরতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে আশপাশের সব স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হচ্ছে।
এর আগে রাজধানীতে রেড অ্যালার্ট জারি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। পালিয়ে যাওয়াদের ধরতে পুলিশের একাধিক ইউনিট মাঠে কাজ করছে। রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দুই জঙ্গিকে মামলায় আদালতে হাজির করা হয়। হাজিরা শেষে পুলিশ সদস্যরা তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় দুই জঙ্গি সদস্য পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে করলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুই জঙ্গি পালিয়ে যায়।
পলাতক দুইজন দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আজ হাজিরা ছিল ওই দুই আসামির। সন্ত্রাসবিরোধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের পর চারজনের মধ্যে দুজনকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা।জঙ্গি মইনুল হাসান শামীমের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুরের। আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার ভেটশ্বর গ্রামে।
আদালত এলাকায় বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশ। পুরো এলাকায় চালানো হচ্ছে তল্লাশি। ডিবি পুলিশ, সোয়াট, র্যাব ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরাও তৎপর। বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট-সোয়াট ও পুলিশের বিভিন্ন সাজোয়া যান মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামানসহ আরও ঊর্ধ্বতনরা বর্তমানে আদালত এলাকায় অবস্থান করছেন।
২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব রয়েছেন।
৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে ছিটিয়ে দীপন হত্যা মামলার দুই সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি পালানোর ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। রোববার (২০ নভেম্বর) বিকেলে এক আদেশে এ তথ্য জানায় বাংলাদেশ পুলিশ।
আদেশে সই করেছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। আদেশে বলা হয়, দীপন হত্যা মামলার দুই সাজাপ্রাপ্ত আসামি পলায়ন সংক্রান্ত দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত সুপারিশমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হলো।
কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে- ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে (ক্রাইম অ্যান্ড অপস)। অপর সদস্যরা হলেন- ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশন্স), যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি), উপপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-লালবাগ), অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিআরও)। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম-বার, পিপিএম বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুই জঙ্গিকে মামলায় আদালতে হাজির করা হয়। হাজিরা শেষে পুলিশ সদস্যরা তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় দুই জঙ্গি সদস্য পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে করলে তারা অপ্রস্তুত হয়ে যান। এই ফাঁকে ওই দুই জঙ্গি পালিয়ে যায়। পলাতক দুজন দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আজকে হাজিরা ছিল তাদের। সন্ত্রাসবিরোধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করে হাজত খানায় নেওয়ার সময় চারজনের মধ্যে দুজনকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। ছিনিয়ে নিতে আসা বাকি চারজন দুটি মোটরসাইকেল করে আদালতে এসেছিলেন।
পলাতক দুজন হলেন- সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুরের মইনুল হাসান শামীম ও লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার ভেটশ্বর গ্রামের আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব।