সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

১২ বছর বয়সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে সেই বাংলাদেশি বিস্ময় বালক

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ৪ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০২৪

১২ বছর বয়সে মাধ্যমিক পাস করে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে বাংলাদেশি বিস্ময় বালক সুবর্ণ আইজ্যাক বারী। ফল সেমিস্টারে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানে একাডেমিক পড়াশোনা শুরু করবে সে। ইতোমধ্যেই গণিতে একটি ডক্টরেট প্রোগ্রাম শুরু করার উচ্চবিলাসী স্বপ্নও দেখছে সুবর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের লং আইল্যান্ড হাইস্কুলের সর্বকনিষ্ঠ এই গ্রাজুয়েট মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলে, ‘আশা করছি, ২০২৬ সালের বসন্তে ১৪ বছর বয়সে আমি স্নাতক শেষ করব। সে আরও বলে, যদি আমি কখনও দ্বিতীয়বার পিএইচডি করার সিদ্ধান্ত নিই তবে পদার্থ বিজ্ঞানকেই বেছে নেব। তবে প্রধানত আমি গণিতেই মনোনিবেশ করতে চাই।
প্রতিভাবান এই শিশু বুধবার (২৬ জুন) নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টির ম্যালভার্ন হাই স্কুল থেকে গ্রাজুয়েট হয়। আশ্চর্য হলেও সত্যি, মাত্র ২ বছর বয়সেই সে পর্যায় সারণি মুখস্ত করে ফেলে। আর ৭ বছর বয়স থেকেই ভারতের একাধিক কলেজে ক্লাস নিতে শুরু করে।
সিএনএন এর ডব্লিইএবিসি টিভি জানিয়েছে, সুবর্ণ বলেছে, নবম শ্রেণী উত্তীর্ণের পরই এক লাফে সে দ্বাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। এর মধ্য দিয়ে সে এই বিদ্যালয়ের সর্ব কনিষ্ঠ গ্রাজুয়েটের খাতায় নাম লেখায়।
সিজিপিএ ৪ এর পরিবর্তে সুবর্ণের বিদ্যালয়ে জিপিএ ১০০ মার্ক সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে সুবর্ণ ৯৬ নম্বর পায় এবং দ্বিতীয় ও শেষ বর্ষে পায় ৯৮ নম্বর।
দ্বাদশ শেণীর ক্লাস শুরু করার পর নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি, দ্য সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক এবং ব্রুকলিন কলেজসহ নিউ ইয়র্কের আশেপাশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস নেয়।
এ বিষয়ে সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘সেটি আমার জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। আপনাকে আরও বেশি হোমওয়ার্ক করতে হচ্ছে, আরও দীর্ঘ সময় ক্লাস নিতে হচ্ছে, আরও বেশি বিষয় ও শিক্ষা উপাদান নিতে হচ্ছে এবং এর সবকিছুই শেষ করতে হচ্ছে স্কুলের চেয়ে অনেক অল্প সময়ের মধে্যই।
সুবর্ণের পরিবার জানিয়েছেন, সে পেইন্টিং, বিতর্ক এবং পিয়ানো বাজানোতেও বেশ দক্ষ। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক পাশ করার মাধ্যমে সে আরও একটি ইতিহাস গড়তে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র একটি ইমেইলের মাধ্যমে বারী পরিবারকে জানিয়েছেন, ‘এনওয়াইইউ সুবর্ণের চেয়ে কম বয়সী কাউকে ভর্তি করার বিষয়ে অবগত নয়’। এনওয়াইইউ এর রেকর্ডগুলোর পূর্ণ পর্যালোচনা না করেই এই তথ্য জানানো হয়েছে। সিএনএন-এর সঙ্গে সুবর্ণের পরিবার ওই ইমেলের একটি অনুলিপি শেয়ার করেছেন।
খুব অল্প বয়সেই সুবর্ণের শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছে। তার শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি হয় বাবা রাশিদুল এবং মা শাহেদা বারীর মাধ্যমে। ব্রুকলিনের টেকনিক্যাল হাইস্কুলে বাবা রাশিদুল পদার্থ বিজ্ঞান শেখান। আর মা শাহেদা একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
রাশিদুল বারীর মতে, সুবর্ণের বিরল এই প্রতিভা ২০১৪ সালে আবিষ্কার করেন তারা যখন ওকে গণিতের প্রধান অংকগুলো শেখাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ওই সময় আমার স্ত্রীই মূলত ওর শিক্ষক ছিলেন। একদিন…তিনি ওকে এক যোগ এক শেখাচ্ছিলেন, আর ওমনিই সে জবাব দিলো, ‘মা, এক যোগ একে দুই হয়।’ এর পরই ওর মা জিজ্ঞেস করলো, ‘তাহলে এক যোগ দুই কত?’ জবাবে ও বললো তিন। এর পরই ও তার মাকে প্রশ্ন করতে লাগলো, ‘মা, এক যোগ একে যদি দুই হয়, তাহলে তুমি কি আমায় বলবে এন প্লাস এন-এ কত হয়?’
শাহেদার স্বামী বলছিলেন, এই প্রশ্ন শোনার পর ওর মা বেশ অবাক হন। রাশিদুল জানান, প্রথমে এ বিষয়টিতে তিনি কোনও কর্ণপাতই করেননি। কেননা, ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত তাদের বড় ছেলে রেফায়েত বারীও (২১) বেশ বুদ্ধিমান। তিনি বলছিলেন, তাই, আমার স্ত্রীকে আমি বলেছিলাম, “আচ্ছা। এতে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই। ও সম্ভবত এমনটা বলেছে মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য।’ তবে এমনটা চলতেই থাকল। সে যতগুলো গণিতের ধারণা নিয়ে কথা বলছিল তার সবই ছিল অ্যাবস্ট্রাক্ট।
সুবর্ণের বাবা তখন গণিতের ছাত্র ছিলেন। তিনি ছেলের মনোমুগ্ধকর প্রতিভার কথা তার অধ্যাপকদের সঙ্গে শেয়ার করেন।
রাশিদুল বারী বলছিলেন, আমার অধ্যাপক বলেন, এরকম হতেই পারে না। দুই বছর বয়সী কোনও শিশু এ ধরনের অ্যাবস্ট্রাক্ট ধারণা নিয়ে কথা বলতে পারে না। আপনার এ বিষয়ে আরও মনোযোগ দেওয়া দরকার। তার বাবা বলছিলেন, ক্রমেই সুবর্ণ একের পর এক মানুষের নজর কাড়ছিলেন। এমনকি পর্যায়ক্রমে সে কলেজ স্তরের ক্লাস নেওয়ার প্রস্তাবও পেতে শুরু করে।
২০১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সুবর্ণের প্রশংসা করে ওকে একটি চিঠি লেখেন। সিএনএন এর সঙ্গে ওই চিঠিটি শেয়ার করেছেন তার পরিবার।
২০২০ সালে যখন তার বয়স ৭, সুবর্ণ ভারতের একাধিক কলেজ থেকে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তাব পেতে শুরু করে। তার বাবা জানিয়েছেন, বছরে তিনবার ভারতে ক্লাস নেন সুবর্ণ।
রাশিদুল বারী বলছিলেন, এটি ওকে বিভিন্ন স্তরের বিশেষজ্ঞ, শিক্ষার্থী, বিভাগ, কলেজের প্রেসিডেন্টসহ অসংখ্য মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেয়।
সুবর্ণ জানায়, বাবা-মার পথ ধরে সেও শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর