রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৯ পূর্বাহ্ন

হজে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, তীব্র গরমে ৫৬২ হজযাত্রীর মৃত্যু

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ২১ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০২৪

সৌদি আরবে এবারের হজে অংশ নিয়েছেন প্রায় ২০ লাখ মুসলিম। এসময় তীব্র গরমে কয়েকশ’ হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার অন্তত ৫৬২ জন হজযাত্রী মারা গেছেন। বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি ও সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে রয়টার্স।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে হজে। ভবিষ্যতে এই প্রভাব আরও প্রাণঘাতী হতে পারে। চিকিৎসা ও নিরাপত্তা সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, হজের সময় তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি মৃত হজযাত্রী মিসরের। দেশটির ৩০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১১৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
পাকিস্তানের এক হজযাত্রী উইলায়েত মুস্তফা বলেন, তাপমাত্রা খুব বেশি ছিল। মানুষ এই ধরনের তাপ সহ্য করতে পারে না। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, চিকিৎসাকর্মীদের গাড়ি আসার আগ পর্যন্ত মিনার কাছে সড়কের পাশে মরদেহ পড়েছিল। মরদেহগুলো সাদা ইহরামের কাপড়ে মোড়ানো।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই মৃত্যু ইঙ্গিত দিচ্ছে আগামীতে হজ কতটা কষ্টের হতে পারে। জার্মানির ক্লাইমেট অ্যানালাইটিকস নামের প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কার্ল-ফ্রেডরিখ শ্লেউসনার বলেছেন, এক হাজারের বেশি বছর ধরে একই রীতিতে হজ পালিত হয়ে আসছে, সবসময় গরম আবহাওয়ায়। কিন্তু জলবায়ু সংকট আবহাওয়ার পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তুলছে। আরাফাতের পাহাড়ে ওঠা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্রমাগত বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
চান্দ্রবর্ষ দ্বারা হজের সময় নির্ধারিত হয়। প্রতি বছর দশ দিন করে হজ পিছিয়ে যায়। সেই হিসাবে এখন হজ শীতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০৪০-এর দশকে সৌদি আরবে গ্রীষ্মকালের চূড়ায় হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
পাকিস্তানভিত্তিক ক্লাইমেট অ্যানালাইটিকসের জলবায়ু বিজ্ঞানী ফাহাদ সাঈদ বলেন, তখন হজে আরও বেশি প্রাণহানি হতে পারে। হজে গরমের কারণে মৃত্যু একেবারে নতুন কিছু নয়। ১৪০০ শতকেও গরমে হজযাত্রীর মৃত্যুর কথা রেকর্ড করা হয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারা, তীব্র শারীরিক পরিশ্রম, উন্মুক্ত স্থান এবং বয়স্ক মানুষদের উপস্থিতি হজযাত্রীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। সৌদি কর্মকর্তাদের মতে, গত বছর হিট স্ট্রেসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজারের বেশি মানুষ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব যত উষ্ণ হচ্ছে, হজ পালন ক্রমাগত কঠিন হয়ে উঠছে। সাঈদ ও শ্লেউসনার ২০২১ সালে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এতে তারা বলেছেন, বিশ্ব যদি আরও ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণ হয়, তাহলে হজযাত্রীর মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচগুণ বেশি হবে। ২০৩০-এর দশকে বিশ্বের তাপমাত্রা আরও ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে আসছেন।
সাঈদ বলেন, ধর্মীয় অবস্থান থেকে মানুষ হজ পালনে অনুপ্রাণিত হয়। তাদের কারও কারও জন্য এটি জীবনে একবারের সুযোগ। যদি তারা একবার সুযোগ পায়, তাহলে তা কাজে লাগাতে চায়। ২০১৬ সালে সৌদি আরব হজের সময় গরম নিয়ে একটি কৌশল প্রকাশ করেছিল। এতে ছিল ছায়াযুক্ত এলাকা নির্মাণ, প্রতি ৫০০ মিটার পর পর সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবা সক্ষমতার উন্নতি।
সৌদি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ হজযাত্রীদের পর্যাপ্ত পানি পান এবং সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিল। পাকিস্তানি হজযাত্রী মুস্তফা বলেন, আমাকে ৭৫ বছর বয়সী মাকে হুইলচেয়ারে ঠেলতে হয়েছে। যখন আমরা বিশ্রাম নিতে চেয়েছিলাম, তখন পুলিশ আমাদের এগিয়ে যেতে বলেছে। কোনও আশ্রয় বা পানির ব্যবস্থা সৌদি সরকার করেনি দেখে আমি অবাক হয়েছি।
এই বিষয়ে সৌদি আরবের সরকারি মিডিয়া কার্যালয় তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। মিসরের এক স্বাস্থ্য সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, যেসব হজযাত্রী হজ কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত নয়, তাদের মৃত্যু হয়েছে বেশি। কারণ গরমের মধ্যে তারা রাস্তায় থাকতে বাধ্য হয়েছেন।
মিসরীয় হজযাত্রী সামেহ আল-জায়নি বলেছেন, সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পানি পেয়েছেন তিনি। রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী দেখেছেন, পুলিশ পানি বিতরণ করছে এবং গরম কমাতে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রা যদি ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে, তাহলে পানি ছিটানো কার্যকর হয়। তাপমাত্রা যদি খুব বেশি হয়, পানি ছিটানোতে কাজ হয় না। বরং এতে আর্দ্র অবস্থায় তাপ নিবারণের চেষ্টারত ঘর্মাক্ত মানুষদের ঝুঁকি বাড়তে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর