স্টেশনে তরুণীকে হেনস্তা: গ্রেফতার মার্জিয়ার ৩ দিনের রিমান্ড

নরসিংদী রেল স্টেশনে তরুণীকে হেনস্তার ঘটনায় গ্রেফতার মার্জিয়া আক্তারের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় রেলওয়ের ভৈরব থানা পুলিশ মার্জিয়াকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। পরে নরসিংদীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক (প্রথম আদালত) দেলোয়ার হোসেন তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনায় জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এর আগে, ঘটনার ১২ দিন পর রবিবার (২৯ মে) দিবাগত রাত ৩টায় শিবপুর উপজেলার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে মার্জিয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব। মার্জিয়া আক্তার পেশায় একজন ঘটক। তিনি শহরের উপজেলা মোড়ের একটি বাড়ির ভাড়াটিয়া ফয়েজ আহমেদের স্ত্রী।
যেভাবে গ্রেফতার হলেন তরুণীকে হেনস্তাকারী মার্জিয়া
নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে তরুণীকে হেনস্তাকারী মার্জিয়া আক্তারকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। ঘটনার ১২ দিন পর রবিবার (২৯ মে) দিবাগত রাত ৩টায় শিবপুর উপজেলার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মার্জিয়া আক্তার পেশায় একজন ঘটক। তিনি শহরের উপজেলা মোড়ের একটি বাড়ির ভাড়াটিয়া ফয়েজ আহমেদের স্ত্রী।
র্যাব-১১ নরসিংদী ক্যাম্প কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌহিদুল মবিন খান বলেন, স্টেশনে হেনস্তার ঘটনার পর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মার্জিয়াকে শনাক্ত করা হয়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় অভিযুক্ত যুবক ইসমাইল মিয়াকে আগেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরপর মার্জিয়াকে গ্রেফতারে মাঠে নামে র্যাব-১১। ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের নির্দেশনায় কয়েক দিন থেকে র্যাবের গোয়েন্দা দল তার গতিবিধি নজরে রাখে। ঘটনার পর থেকে বারবার অবস্থান পাল্টাতে থাকেন মার্জিয়া। একেক সময় একেক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘চরভুইয়া সিএনজি স্টেশনের পেছনে মার্জিয়ার এক খালার বাসা রয়েছে। রবিবার সেখানে গেলে খবর পেয়ে র্যাব অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। মার্জিয়াকে রেলওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সোমবার (৩০ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, গত ১৮ মে ভোর ৫টায় নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে এক তরুণী ও দুই তরুণ ঢাকাগামী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় স্টেশনে উপস্থিত এক মধ্যবয়সী নারী ওই তরুণীর পোশাক সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন। সেই সঙ্গে দুই তরুণের সম্পর্কেও বাজে মন্তব্য করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে ওই নারীর বাগবিতণ্ডা শুরু হয়।
এ সময় অভিযুক্ত নারীর সঙ্গে আশপাশে উপস্থিত থাকা আরও কিছু যুবক ও দুই জন স্থানীয় নারী যোগ দেয়। এক নারী ওই তরুণীকে হেনস্তা করে। ঘটনাস্থলে পরে যোগ দেওয়া স্থানীয় যুবকরা তরুণীর সঙ্গে থাকা দুই তরুণকে মারধর করে। ভুক্তভোগী তরুণী নিজেকে বাঁচাতে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেন। স্থানীয় থানা পুলিশ এসে তরুণী ও তরুণদের ট্রেনে উঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্য ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়। পুলিশ বাদী হয়ে অভিযুক্ত নারী, তার সঙ্গে থাকা যুবক ও অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। অভিযুক্ত এক যুবককে ঘটনার পরপরই গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় চাঞ্চল্য শুরু হলে অভিযুক্ত নারীকে গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করে র্যাব। পরে অবস্থান নিশ্চিত হয়ে মার্জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
নরসিংদী রেল স্টেশনে ঢাকাগামী ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা জিন্স ও টপস পরা এক তরুণীকে নাজেহাল ও মারধরের ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
বুধবার (১৮ মে) সকালে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে আসলে কি ঘটেছিল? ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ওইদিন অন্যান্য যাত্রীর মতো ওই তরুণী ও তার সঙ্গের দুই তরুণ নরসিংদী রেল স্টেশনের ১নং প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিল। সে সময় একজন নারীযাত্রী ওই তরুণীকে জিন্স ও টপস পরায় কটাক্ষ করে বিরূপ মন্তব্য করতে থাকে। প্রতিবাদ করলে তরুণীর সঙ্গে বাগ-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে ওই নারী। সেখানে উপস্থিত আরও কয়েকজন ওই তরুণীকে আপত্তিকর কাপড় পরার অভিযোগ এনে ভর্ৎসনা করতে থাকে। ঘটনার এক পর্যায়ে নাজেহাল ও মারধরের শিকার হয়ে ওই তরুণী দৌড়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে আশ্রয় নেয়।
এ বিষয়ে রেল স্টেশনের দায়িত্বে থাকা স্টেশন মাস্টার নাইয়ুম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও তিনি দাফতরিক কাজ করছিলেন। সকাল সাড়ে ৫টার দিকে ১নং প্ল্যাটফর্মে তার কক্ষের একটু দূরে হইচই ও বাক-বিতণ্ডা শুনে রুমের সামনে কলাপ্সিবল গেট খুলে দেখতে পান এক তরুণী চিৎকার করছে। হঠাৎ ওই তরুণী দৌড়ে এসে তার রুমে প্রবেশ করে। পেছন পেছন তরুণীর সঙ্গে থাকা আরও দুই তরুণও দৌড়ে এসে আশ্রয় চাইলে তিনি তাদের রুমে বসিয়ে কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেন। পরে রেলওয়ে পুলিশ-জিআরপিকে ফোন দিলে তাৎক্ষণিকভাবে তারা সেখানে আসে। জিআরপি’র সদস্যরা তাদের ঢাকাগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনে উঠিয়ে দেন।
এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ দায়ের কিংবা আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা জনতে রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই ইমায়েদুল জাহেদী মুঠোফোনে জানান, সেদিন ঘটনার খবর পেয়েই ওই তরুণী ও তার সঙ্গীয় অপর দুই তরুণকে স্টেশন মাস্টারের কক্ষ থেকে নিরাপদে চট্টগ্রাম মেইলে উঠিয়ে দেই। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ওই ট্রেনটি চলে আসায় তাদের পরিচয় জানা যায়নি। তবে তারা এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি বলে জানান তিনি।
এদিকে অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, কে কোন ধরণের পোশাক পড়বে তা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। তবে শালীনতা বাঞ্ছনীয়। শুধু পোশাকের কারণে তাদের মারধর করা একেবারেই নিন্দনীয়। এমন কাজ যেন আর না হয় সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহবান জানান তিনি।