রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন

সেমিতে কুয়েতের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সময়ের বাংলাদেশের হার

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ২৩ বার
আপডেট : রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩

‘আমার দল আজ যেভাবে খেলেছে, তা ছিল সত্যিই প্রশংসনীয়। হারলেও তারা মাথা উঁচু করেই মাঠ ছেড়েছে। আমরা ম্যাচটা জিততেও পারতাম। কিন্তু গোলের সুযোগগুলো কাজে লাগতে না পারায় এবং ভাগ্য সহায় না হওয়াতে হারতে হলো। তবে এমন হারে আমি কষ্ট পাইনি, বরং গর্বিত যে লড়াই করেই হেরেছি।’ কথাগুলো বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের স্প্যানিশ কোচ জাভিয়ের ক্যাবরেরার। যারা শনিবার টিভিতে বাংলাদেশ বনাম কুয়েতের খেলাটি দেখেছেন, তারা নিশ্চয়ই ক্যাবরেরার এই মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারবেন না। অল্পের জন্য ইতিহাস গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। যে দল ১৯৮২ ফিফা বিশ্বকাপ খেলেছে, যারা ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ৫১ ধাপ এগিয়ে, যারা আগের দুটি মোকাবিলার প্রতিটিতেই জিতেছে, তাদের বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে পুরো ৯০ মিনিট দুর্দান্ত খেলে আটকে রাখা মোটেও চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। আর সেই কাজটিই করে দেখিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়জয় করে নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। শনিবার তারা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্দশ আসরের প্রথম সেমিফাইনালে (ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত) অসাধারণ লড়াই করেও ১-০ গোলে কুয়েতের কাছে হেরে আক্ষেপের অনলে দগ্ধ হয়। খেলার ১০৭ মিনিটে (অতিরিক্ত সময়ে) জয়সূচক গোলটি করেন বিজয়ী দলের আবদুল্লাহ আল বুলৌশি। এই জয়ে অতিথি দল হিসেবে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েই ‘দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ ফুটবল’ খ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নাম লেখালো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত।
এবারের সাফের শেষ চারে নাম লিখিয়ে বাংলাদেশ দীর্ঘ ১৪ বছরের বন্ধ্যত্ব ঘুচিয়েছিল। বাকি ছিল দীর্ঘ ১৮ বছর পর ফাইনালে নাম লেখানোর পালা। তবে সেই পথে তাদের শক্ত প্রতিপক্ষ ছিল কুয়েত। শক্তিমত্তার নিরিখে কুয়েতই ছিল এই ম্যাচের ফেভারিট। ম্যাচে তারাই জিতেছে। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশ যে এভাবে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, অনিন্দ্যসুন্দর ফুটবল খেলবে, এতটা আশা বোধকরি কেউই করেননি। আর এজন্যই বাংলাদেশের হারে তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সবাই আক্ষেপ করছেন এই বলে, ইশ, মোরসালিন যদি শুরুতেই গোলটি করতে পারতেন। রাকিবের ওই ক্রসশটটি যদি পোস্টে না লেগে সরাসরি জালে ঢুকত!
বাংলাদেশ গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো-ই ছিলেন ম্যাচের ‘অঘোষিত সেরা খেলোয়াড়’। অবিশ্বাস্য দক্ষতায় তিনি কুয়েতের কমপক্ষে হাফ ডজন গোলের প্রচেষ্টা নসাৎ করে দেন। নইলে হারের ব্যবধান আরও বড় হতে পারত।
ম্যাচে ভারতের রেফারি জন ক্রিস্টালের রেফারিং ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তার বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গেছে। বাংলাদেশের এক সহকারী কোচ লাল কার্ড ও আরেক সহকারী কোচকে হলুদ কার্ড দেখান জন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ম্যাচ শেষে রেফারিকে ঘিরে ধরেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। এ সময় দুই দলের কোচ-কর্মকর্তারা দুই দলের ফুটবলারদের মধ্যে হাতাহাতি থামাতে চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে রেফারি আরেকটি লাল কার্ড দেখান।
কুয়েত দলও ভাবতে পারেনি এক অসাধারণ খেলবে বাংলাদেশ। লাল-সবুজ বাহিনীর খেলা দেখে তারা বেশ চাপেও পড়ে গিয়েছিল। ২০০৩ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার তারা সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত খেলেছিল। সেবার মতিউর মুন্নার দেয়া গোলে (গোল্ডেন গোল) ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। এবার সাফে ৩০ বছ পর আবারও অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত খেলল বাংলাদেশ। তবে এবার আর তাদের প্রতি সুপ্রসন্ন হননি ভাগ্যদেবী। তবে বাংলাদেশের এরকম লড়াকু-দুর্দান্ত খেলা যে কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীর হৃদয়জয় করেছে, তারা যে আগামীতে এই দলের সাফল্য নিয়ে আরও আশাবাদী হবেন, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর