সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন

সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ সংযুক্তা সাহার

ভয়েস বাংলা রিপোর্ট / ২১ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩

সেন্ট্রাল হসপিটালে ভুল চিকিৎসা ও প্রতারণায় মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহা বলেছেন, সেন্ট্রাল হসপিটাল আমার নাম ব্যবহার করে অনিয়ম করেছে। তারা এমন অনিয়ম করবে, আমি ভাবতেও পারিনি।
মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুরে রাজধানীর পরীবাগে নিজের বাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই হাসপাতালের ওপর দায় চাপান।
ডা. সংযুক্তা সাহা বলেন, আঁখি আমার রোগী ছিলেন না। তিনি কুমিল্লার একটি স্থানীয় হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছেন। এ বছরের মার্চে তিনি দুই বার সেন্ট্রালে এসে আমাকে দেখিয়েছিলেন। নিয়মিত রোগী হতে হলে একজন গর্ভবতীর গর্ভাবস্থার শুরুতে প্রতি মাসে একবার এবং শেষের দিকে দুই সপ্তাহে একবার দেখাতে হয়। আঁখি আমার নিয়মিত রোগী ছিলেন না।
ডা. সংযুক্তা সাহা বলেন, আমি আঁখি এবং তার সন্তানের জন্য শোক প্রকাশ করছি। তাদের বিদেহী আত্মার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। নবজাতকের পিতা মো. ইয়াকুব আলী এবং তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। আমাদের সবার জন্যই এই অবহেলাজনিত মৃত্যু কাম্য নয়। আসুন আমরা এই সমস্যাটি এড়িয়ে না গিয়ে প্রকৃত দোষীকে খুঁজে বের করি। তিনি বলেন, আঁখি যখন হাসপাতালে, তখন আমি দেশে ছিলাম না। আমার টিকিট ও বোর্ডিং পাস আমার কাছে আছে। আমি ভিডিও কলেও অপারেশন মনিটর করিনি। সব মিথ্যা।
ডা. সংযুক্তা সাহা বলেন, প্রকৃত ঘটনা বলতে গেলে সেন্ট্রাল হসপিটালের কথা বলতে হয়। এই হাসপাতালটিতে আমি ২০০৭ থেকে কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত আছি। সেন্ট্রাল হসপিটালে কোনো চিকিৎসকের অধীনে রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়মাবলী নেই। বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা প্রচলিত প্র্যাকটিসের ওপর নির্ভর করেই এই হসপিটালটি চলছে। তিনি বলেন, কোনো চিকিৎসকের লিখিত সম্মতি না নিয়ে কোনো রোগী চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি হয় না। কিন্তু প্রয়াত মাহবুবা রহমান আঁখিকে সেন্ট্রাল হসপিটাল ১০ জুন ভর্তির প্রাক্কালে আমার কাছ থেকে মৌখিক বা লিখিত কোনো ধরনের সম্মতি তারা গ্রহণ করেনি।
ডা. সংযুক্তা সাহা বলেন, আঁখিকে হাসপাতালে ভর্তির সময় আমার উপস্থিতির ব্যাপারে হাসপাতাল মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছে যে আমি বাংলাদেশে আছি। যে মানুষটা দেশেই নাই, তার নাম করে কেন রোগী ভর্তি করবেন? এটা কার স্বার্থে? আমি যদি অপারেশন না করি, যদি নাই থাকি, তাহলে রোগী ভর্তি করালেন কোন আক্কেলে? এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে যে গত ১০ জুন আঁখিকে ভর্তির সময় আমার সঙ্গে নাকি যোগাযোগ করা হয়েছিল। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, একটি হলেও প্রমাণ হাজির করুন। যদি আপনাদের কথা বিন্দুমাত্র সত্য হয়ে থাকে, আপনারা কল রেকর্ড হাজির করুন।
ভিডিও কলের মাধ্যমে তিনি অপারেশন দেখছিলেন– এমন অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই বলেও দাবি করেন ডা. সংযুক্তা সাহা। ভ্রমণের ই-টিকিটের কপি দেখিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি তখন জমিন থেকে ৩৬ হাজার ফিট উঁচুতে ফ্লাইটে অবস্থান করছি। ভিডিও কলের মাধ্যমে অপারেশন দেখার তথ্য বাস্তবতা বিবর্জিত এবং মিথ্যা৷ আমার ২৩ বছরের ক্যারিয়ারে কখনও ভিডিও কলের মাধ্যমে অপারেশন করিনি।
ডা. সংযুক্তা সাহার অভিযোগ, সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ করার জন্য তিনি যে সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছেন, তার বিরুদ্ধে একটা পক্ষ এসব কাজ করছে। স্বার্থান্বেষী মহল প্রকৃত ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এবং নিজেদের দোষ আড়াল করার জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি দাবি করেছেন, তার কোনও রোগী লাইফ সাপোর্টে যায়নি। এক চিকিৎসকের স্ত্রীর ওভারিয়ান সিস্ট সার্জারি করতে গিয়ে তাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছে এবং ওই চিকিৎসকের ১১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে– এমন অভিযোগে তিনি এই দাবি করেন। সংযুক্তা বলেন, নো ওয়ে! এটা ভুল তথ্য। আমার কোনও রোগী লাইফ সাপোর্টে যায়নি।
সময় দিতে পারেন না– রোগীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে ডা. সংযুক্তা সাহার বলেন, শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজে আমি বিভাগীয় প্রধান ছিলাম। দূরত্বজনিত কারণে আমি প্রায়ই ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। কেউ কেউ বলছেন আমি চাকরিচ্যুত। এটা কিন্তু অবজেকেশনেবল কথা। আমি নিজে থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। মাঝখানে আমি ল্যাব এইড হাসপাতালে প্র্যাকটিস করতাম, ছেড়ে দিয়েছি। উত্তরায় ক্রিসেন্ট হাসপাতালে করতাম, দেখা গেছে যে সেখানে এক ঘণ্টাও ঠিকমতো সময় দিতে পারি না। কারণ আমার সেন্ট্রাল হাসপাতালে অনেক বেশি ব্যস্ততা থাকে।
ডা. সংযুক্তা সাহার বলেন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে রোগীকে এক থেকে দুই মিনিট সময় দেই– আসলে কথাটা ঠিক না। এত কম সময়ে রোগী দেখা যায় না। প্রথমে রোগীর হিস্ট্রি নেওয়া হয়, তারপর আমার সঙ্গে যারা পোস্টগ্র্যাজুয়েট চিকিৎসক থাকেন তারা শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেন। কারও পাঁচ বছরের পুরনো হিস্ট্রি থাকে। সব পর্যালোচনা করার পর আমার কাছে ফাইল আসে, আমি রোগী দেখি। অন্তঃসত্ত্বা মাকে কিন্তু জুনিয়র দেখে না, আমি দেখি। এখন পর্যন্ত আমার অনুপস্থিতিতে কোনও মেডিক্যাল অফিসার সিজার করেনি।
প্রসঙ্গত, গত ৯ জুন দিনগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে প্রসব ব্যথা ওঠায় মাহবুবা রহমান আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গত ১৪ জুন (বুধবার) সেন্ট্রাল হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসা’ ও কর্তৃপক্ষের ‘প্রতারণা’র অভিযোগ তোলেন তার স্বামী ইয়াকুব আলী। তিনি দাবি করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মারা যায় তাদের নবজাতক সন্তান। ঘটনার পর পার্শ্ববর্তী ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। রবিবার (১৮ জুন) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
সন্তানের মৃত্যুর পর গত ১৪ জুন ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র একটি মামলা দায়ের করেন ইয়াকুব আলী। মোট ছয় জনের নাম উল্লেখসহ পাঁচ থেকে ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে এই মামলা করা হয়। যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা হলেন ডা. মিলি, ডা. এহসান, অধ্যাপক সংযুক্তা সাহার সহকারী জমির এবং হাসপাতালের ব্যবস্থাপক পারভেজ। মামলাটিতে গ্রেফতার দুই চিকিৎসক ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহা এরইমধ্যে দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এদিকে চিকিৎসাজনিত অভিযোগের পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি পরিদর্শন দল ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনে আইসিইউতে রোগীর রাখার উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া যায়নি। এজন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষ বন্ধ করে দেওয়াসহ কয়েক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর