রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:১৪ অপরাহ্ন

সাফল্যের ছোঁয়া, তবু অভাবের ঘেরাটোপে সাফজয়ী মিলির পরিবার

রিপোর্টার / ১০ বার
আপডেট : শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪

মাত্র তিন শতক জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছোট্ট টিনের ঘরই সাফজয়ী মিলি আক্তারের আশ্রয়স্থল। ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বারইগ্রাম বাগাপাড়া গ্রামের দরিদ্র শামছুল হক ও আনোয়ারা খাতুনের মেয়ে মিলি বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের দ্বিতীয় গোলরক্ষক হিসেবে দলকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ে অবদান রাখেন। গত ৩০ অক্টোবর নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে পরাজিত করে এই চ্যাম্পিয়নশিপ জয়লাভ করে বাংলাদেশ।
শৈশব থেকেই ফুটবলের প্রতি মিলির বিশেষ আগ্রহ ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকতেই ফুটবলে তার হাতেখড়ি। দেশের হয়ে খেলার জন্য গত বছর এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি মিলি; তবে আসছে ২০২৫ সালে মুশুলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অংশ নেবেন।
গতকাল সকালে চন্ডীপাশা ইউপি’র বারইগ্রামে মিলিদের বাড়ি খোঁজ করতে গিয়ে অনেকের বাড়ির চিপাচাপা( অলিগলি)দিয়ে গিয়ে পাওয়া যায় মিলিদের বাড়ি বলতে একটি ছোট্ট টিনের ঘর। দরজার সাইনবোর্ডে লেখা, এটি সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত। ২-৩ বছর পূর্বে সেটি করে দিয়েছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। আশপাশে লাগোয়া অন্যদের ঘরের কারণে মিলিদের ঘরটিতে ঠিকমতো আলো-বাতাসও পৌঁছায় না। তখন বারান্দায় বসে ভাত খাচ্ছিলেন মিলির বাবা শামছুল হক ও মা আনোয়ারা খাতুন হাতে সুতা নিয়ে গুটাচ্ছিলেন।
মিলির বাবা শামছুল হক জানান, গত বুধবার খেলায় চ্যাম্পিয়ন হবার পর মিলি খুশি হয়ে ফোনে খবরটি তাকে জানায়। তার চার মেয়ের মধ্যে তিন জনের বিয়ে হয়ে গেছে, মিলি সবার ছোট। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে উজ্জল চট্রগ্রাম থেকে ব্যবসা করে। ছোট ছেলে আবুল কালাম মালয়েশিয়ায় কাজ করলেও তারা শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করে। তারা মা বাবার খবর নেয় না। স্থানীয় নান্দাইল চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত বাজারে প্রতিদিন কলা কিনে সেগুলো বিক্রি করেন। লাভ বাবদ ২-৩ টাকা পান পান তা দিয়ে চলে তাদের তিন জনের খাওয়াপড়া। বয়স ৬৫ হলেও বয়ষ্কভাতা পাননা, কার্ড না থাকায় পান না ১৫ টাকা কেজির চালও। নিজের জমি নাই সামর্থ্য না থাকায় অন্যের জমিও চাষাবাদ করতে পারেননা বলেও জানান মিলির বাবা।
মিলির বড়বোন শিমু আক্তার জানান, মিলির গত বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবার কথা ছিল কিন্তু দেশের হয়ে খেলতে যাবার কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারেনি। তাছাড়া প্রায়ই সে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে থাকে।
মিলির মা আনোয়ারা বলেন, ফুটবল খেলা নিয়ে মিলিকে প্রথমে নিরুৎসাহিত করেছিলেন, কিন্তু মেয়ের আগ্রহ দেখে বাধা দেননি। এলাকাবাসীও নানা সমালোচনা করত। এখন মেয়ের সাফল্যে শুধু তারা নয়, পুরো এলাকাবাসীই খুশি।
চন্ডীপাশা ইউপি চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন জানিয়েছেন, মিলি তাদের ইউনিয়নের গর্ব। মিলির পরিবারের জন্য যতটা সম্ভব সাহায্য করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি। নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুণ কৃষ্ণ পাল জানান, মিলি ঢাকায় দলের সঙ্গে অবস্থান করছেন। ফিরে এলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর