মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন

সাদিক এগ্রোর জায়গায় বিনোদন পার্ক করবে ডিএনসিসি

ভয়েস বাংলা প্রতিবেদক / ১৮ বার
আপডেট : সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪

রাজধানীতে খাল ও সরকারি খাস জমি দখল করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে আসছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম জলাশয় উদ্ধারের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন। প্রচেষ্টার সর্বশেষ উদ্যোগ হিসেবে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাছে রামচন্দ্রপুরে অভিযান শুরু হয়েছে। তিন দিনব্যাপী খাল উদ্ধার কার্যক্রমের প্রথম দিনই অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বস্তি, রাজনৈতিক দলের অস্থায়ী কার্যালয়, মুদি দোকান ও আলোচিত সাদিক এগ্রোর পশুর খামার ভেঙে দেওয়া হয়। পরে খাল খননও শুরু করে ডিএনসিসি। আগামীতে যেন নতুন করে কেউ খাল ভরাট করতে না পারে সেজন্য খালের একাংশে শিশুদের জন্য খেলার জায়গা তৈরি করে দেওয়ার পরিকল্পনাও করছে তারা।
গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। পরে শুক্র ও শনিবারও (২৮ ও ২৯ জুন) এই অভিযান চলে। খাল ছাড়াও ওই এলাকায় নিজস্ব কিছু জমি দখলমুক্ত করে ডিএনসিসি। মেয়র আতিকুল ইসলামের নির্দেশে এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিএনসিসির অঞ্চল-৫-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ এবং ডিএনসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হাসান।
উচ্ছেদ অভিযানের তৃতীয় দিন রামচন্দ্রপুর খাল ও সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একদিকে উচ্ছেদ অভিযান, অন্যদিকে চলছে খাল খনন। খালের ওপর অবৈধ জমি ভাড়া নিয়ে গড়ে ওঠা সাদিক এগ্রোর পশুর খামার পুরোপুরি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। উচ্ছেদ করা হয়েছে অর্ধশতাধিক ঘর নিয়ে তৈরি বস্তিও। অন্যদিকে বড় এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে চলছে খাল খনন। খাল পাড়ে সরকারি খাস জমিতে জেলা প্রশাসকের টানানো ব্যানার দেখে বোঝা যায়, প্রায় এক একর জায়গা বেদখল ছিল এতদিন।
এদিকে খাল উদ্ধারের উচ্ছেদ অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে স্থানীয়রা বলেন, এই খালে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক হলে আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দূর হবে। খালকে কেন্দ্র করে সুন্দর একটি পরিবেশ ফিরে আসবে। আমাদের ছেলে মেয়েরা যেন ভালোভাবে সুন্দর পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে কর্তৃপক্ষে সেরকম পরিবেশের ব্যবস্থা করে দেয়, এটিই এখন আমাদের দাবি।
স্থানীয় বাসিন্দা সাত মসজিদ গৃহনির্মাণ সমবায় সমিতির পরিচালক মো. ফারুক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা আমাদের ন্যায্য জায়গা ছাড়া খালের এক ইঞ্চি জায়গাও চাই না। খাল দখলমুক্ত দেখতে চাই। খালের পাড়ে কোনও বস্তি থাকুক সেটাও চাই না। খাল দখলমুক্ত করে খনন করা হোক, যেন খালে আগের মতো পানি সরবরাহ হতে পারে।
আরেক বাসিন্দা ও সমিতির সদস্য মো. নূরুল ইসলাম গাজী বলেন, ১৯৯৪ সালে তিন কাঠা জমি কিনি এই খাল পাড়ে। ওই সময় খালটি অনেক সুন্দর ছিল, গভীর ছিল। পানি প্রবাহও ভালো ছিল। আমরা চাই খালটি আবার গভীরভাবে খনন করা হোক।
স্থানীয়রা জানায়, ধাপে ধাপে স্থানীয় ক্ষমতাসীন ব্যক্তি ও কয়েকটি আবাসন প্রকল্প মিলে এই খালটি দখল করে। স্থানীয়দের মতে, একসময় এই খালের প্রস্থ ছিল প্রায় ১০০ ফুটের মতো। মাঝে এটি পুরোপুরি ভরাট করে ট্রাকস্ট্যান্ড বানানো হয়। পরে ওয়াসা থেকে খালটির দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার পর ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম সেই স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে নতুন করে খাল খননের মাধ্যমে তাক লাগিয়ে দেন। নতুন করে আশা দেখতে শুরু করেন স্থানীয়রা। মাঝে আবারও দখল শুরু হলে নতুন করে উচ্ছেদ অভিযান চালায় নগর কর্তৃপক্ষ।
খাল দখল করে গড়ে তোলা বস্তিতে বসবাসকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের এখানে বাস করার সুযোগ করে দেয় স্থানীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা। পরবর্তী সময়ে তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাবদ টাকা নেওয়া হতো। খাল উদ্ধার করেই ক্ষান্ত নয় ডিএনসিসি। খালের শুরুর অংশে শিশুরা যেন খেলতে পারে এমন একটি ছোট পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করছে নগর কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএনসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, খাল দখলমুক্ত করে যে জায়গা খালি করা হচ্ছে, পরবর্তী সময়ে ওই খালি জায়গায় এলাকাবাসীর জন্য একটি বিনোদন পার্ক স্থাপন করা হবে। এটা করা হবে যাতে নতুন করে কেউ আবার খাল দখলের সুযোগ না পায়। জায়গাটা খালি থাকলে ধীরে ধীরে আবারও বালি ফেলে দখল করার চেষ্টা চলতে পারে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির তথ্য কর্মকর্তা মো. পিয়াল হাছান বলেন, এখনও সেরকম কোনও বড় পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। তবে দখলমুক্ত রাখতে শিশুদের খেলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর