সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালেও বড় আন্দোলন হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি প্রয়োগের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে অর্ন্তবর্তী সরকার। ১১ সদস্যের কমিটিকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) এই কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ বিভাগ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সরকারি কর্মকমিশন এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব পর্যায়ের একজন করে কর্মকর্তা কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন।
কোটাবিরোধী বিক্ষোভ যে বার্তা দিয়েছে
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের নিয়ম রয়েছে। নতুন কমিটিকে ওই নিয়ম পর্যালোচনা করে সুপারিশ করতে বলা হয়েছে।
দেশের সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা গত কয়েক বছর ধরেই তুমুল আলোচিত বিষয়। যে জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটেছে, তারও সূত্রপাত কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি থেকেই।
ওই আন্দোলন চলাকালেই উচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে মেধায় ৯৩ শতাংশ ও বাকি ৭ শতাংশ কোটার জন্য রেখে গত বছরের ২৩ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এখনো ওই প্রজ্ঞাপনই বহাল রয়েছে।
কোটা আন্দোলনকারীদের সরকার ‘প্রতিপক্ষ’ বানিয়েছে কেন?
শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে আগের ৫৬ শতাংশের জায়গায় সরকারি চাকরিতে কোটা ৭ শতাংশে নেমে এলেও ততদিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতা এমন স্থানে চলে গিয়েছিল যে এই প্রজ্ঞাপন সেই তীব্রতাকে কমাতে পারেনি। বরং ১০ দিনের মধ্যেই সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রূপ নেয় সেই আন্দোলন। তারই ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পদ্ধতিতে নিয়ে এর আগে বড় আন্দোলন হয় ২০১৮ সালে। সেবারও প্রায় টানা দুই মাস কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলে। পরে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘কোটা পদ্ধতি বাতিল। পরিষ্কার কথা। আমি এটাই মনে করি, সেটা হলো বাতিল।’
সাত বছর আগের সেই আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি বা ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার দল গণঅধিকার পরিষদ সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনও পেয়েছে।